হলো না ইতিহাস। হলো না উচ্ছ্বাস। চ্যাম্পিয়নের বদলে আইএফএ শিল্ডে রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো ঢাকার শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবকে। গতকাল যুব ভারতীয় সল্টলেক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১১৮তম ফাইনালে তারা টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে হেরে গেল কলকাতা মোহামেডানের কাছে। গ্রুপ পর্ব লড়াইয়েও মোহামেডানের কাছে হেরে গিয়েছিল শেখ জামাল। কিন্তু গ্রুপের শেষ ম্যাচ মোহনবাগান ও সেমিফাইনালে ভারত চ্যাম্পিয়ন ইস্টবেঙ্গলকে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর অনেকে আশা করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম দল হিসেবে আইএফএ শিল্ড জিতবে শেখ জামাল। তা আর হলো না। ১৯ বছর পর একই পুনরাবৃত্তি ঘটল। ১৯৯৫ সালে আইএফএ শিল্ডে ঢাকা মোহামেডান ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে ৮৭ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে এগিয়ে থাকলেও পরে টাইব্রেকারে হেরে যায়।
যাক মোহামেডান ফাইনালে খেললেও শেখ জামাল প্রথমবারের মতো আইএফএ শিল্ডে খেলতে নেমে রীতিমতো আলোড়ন তুলে। বিশেষ করে টানা দুই ম্যাচে ভারতখ্যাত দুই পরাশক্তিকে হারানোর পর শেখ জামালের ইতিহাস গড়ার উজ্জ্বল সম্ভাবনা জেগে উঠেছিল। অনেকে ভেবেছিলেন আইএফএ শিল্ড জেতাটা শেখ জামালের সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশের ফুটবল প্রেমীদের আশাও ছিল তাই। গ্রুপ পর্বে জিতলেও ফাইনালে শেখ জামাল প্রতিপক্ষ হওয়াতে কলকাতার ঐতিহ্যবাহী এই দলটির ঘুম যেন হারাম হয়ে গিয়েছিল। কীভাবে সনি নর্দে, ডার্লিংটন, ওয়েডসন বা মামুনুলকে আটকানো যায় এ নিয়ে কৌশল বা পরিকল্পনার শেষ ছিল না। শেষ পর্যন্ত তারা সফলই হয়েছে। ৪৩ বছর পর কলকাতা মোহামেডান আইএফএ শিল্ডের হারানো ট্রফি উদ্ধার করল। ১৯৭১ সালে তারা শেষবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আসলে শিরোপা জেতার জন্য শেখ জামালের কাছে যে নৈপুণ্য আশা করা হয়েছিল তা তারা দেখাতে পারেনি। উজ্জীবিত মামুনুলদের কেন জানি কাল নার্ভাস দেখাচ্ছিল। হতে পারে এমন বিখ্যাত টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো ফাইনাল খেলছে। কিন্তু যারা মোহনবাগান আর ইস্টবেঙ্গলকে ধরাশায়ী করতে পারে তারা মোহামেডানের সামনে স্নায়ুচাপে ভুগবে কেন? মোহামেডানের ঐতিহ্য ও শক্তিতো এখন স্মৃতি পাতায় ঠাঁই পেয়ে গেছে। গোটা দেশ অপেক্ষা করছিল কখন চূড়ান্ত বিজয় উৎসবে মেতে উঠবে শেখ জামাল। সেখানে কি চ্যাম্পিয়নের বদলে মামুনুলদের হাতে রানার্সআপের ট্রফি মানা যায়। আসলে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা হতাশায় ভেঙে পড়লেও মোহামেডান যোগ্যতার দল হিসেবে হারানো ট্রফি ফিরে পেয়েছে। তাদের পরিকল্পনা কাজে লেগেছে। যে সনি, ডার্লিংটন বা ওয়েডসন মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণভাগ ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে তাদের কাল মোহামেডানের সামনে নিষ্ক্রিয় মনে হয়েছে। কলকাতা মোহামেডান খুব যে ভালো খেলেছে তাও নয়। কিন্তু আক্রমণের মধ্যে পরিকল্পনা ছিল বলেই তারা বিজয়ের নিশানা উড়িয়েছে। প্রথমার্ধের ১৭ মিনিটে অসাধারণ ফ্রি কিকে গোল করে শেখ জামালকে এগিয়ে দেন সনি নর্দে। তবে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগেই মেরাজ উদ্দিনের গোলে ম্যাচে সমতায় ফেরে কলকাতা মোহামেডান। ম্যাচের ৮১তম মিনিটেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাটি ঘটে। শেখ জামালের সনি নর্দে এবং মোহামেডানের লুসিয়ানো সংঘর্ষ বাধালে রেফারি সন্তোষকুমার দুজনকেই লাল কার্ড দেন। সনি নর্দে সরাসরি লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ছাড়েন। অন্যদিকে লুসিয়ানো দ্বিতীয় হলুদ কার্ড পেয়ে।
নির্ধারিত সময়ে ১-১ সমতায় থেকেই মাঠ ছাড়ে দুই দল। অতিরিক্ত মিনিটে খেলতে নেমে শেখ জামাল দারুণ কিছু আক্রমণ করেছিল। ১০৯ মিনিটে কর্নার কিক থেকে গোলও করেছিল তারা। তবে অফসাইডের অজুহাতে গোলটা বাদ করে দেন রেফারি সন্তোষ। অতিরিক্ত সময়েও কোনো দল গোল করতে ব্যর্থ হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
টাইব্রেকারে মোহামেডানের কেস্টান, মানিক বাইচান, নির্মল দে গোল করলেও জেনিফার ও নাঈমের শট মিস হয়। অন্যদিকে শেখ জামালের ওয়েডসন, নাসির, ইয়াসিন গোল করলেও আনিসু ও লিংকনের শট জালে জড়ায়নি। শেষ পর্যন্ত সাডেন ডেথে কলকাতা মোহামেডানের মেরাজ উদ্দিন গোল করে দলকে বিজয় এনে দেন। ম্যাচ শেষে উল্লাসে মেতে ওঠে কলকাতা মোহামেডান। আইএফএ শিল্ডে দীর্ঘ শিরোপা খরা ঘুচিয়ে তারা দলের পতাকা নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিণ করে। অন্যদিকে তীরে এসে তরী ডুবিয়ে ব্যর্থ মনোরথে মাঠ ছাড়েন মামুনুলরা।