কাল সারা দিন বৃষ্টি হয়েছে। কখনো থেমে, কখনো ধুমিয়ে। বসন্তের এমন দিনের বৃষ্টিকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেননি প্রকৃতপ্রেমীরা। মানতে পারছেন না ক্রিকেটপ্রেমীরাও। মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে যে ধারায় বৃষ্টি হয়েছে কাল, আজও হতে পারে বৃষ্টি। তেমনই আভাস আবহাওয়া অধিদফতরের। যদি বৃষ্টি হয় আজ, তাহলে দুটি ভাগ্য লেখা থাকবে খেলার। প্রথমত পরিত্যক্ত হতে পারে এবং দ্বিতীয়ত পরিণত হতে পারে কার্টেল ওভারের ম্যাচ। তাই বৃষ্টির শঙ্কায় গুমড়ে আছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। গুমড়ে আছেন দুই দলের ক্রিকেটাররা। যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে ফেঁসেই যেতে পারে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটি।
১৯৮৬ সালে এশিয়া কাপে টাইগাররা প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল শ্রীলঙ্কার। হেরেছিল। এরপর গত ২৮ বছরে দুই দল পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়েছে ৩৩টি ম্যাচ। পরিত্যক্ত একটি এবং বাকি ম্যাচগুলোর চারটি জিতেছে টাইগাররা। দুই দলের সবশেষ লড়াইটিই জিতেছিল মুশফিকবাহিনী। পাল্লেকেলেতে দুই দলের ম্যাচটি ছিল কার্টেল ওভারের। স্বাগতিক শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করে রান করেছিল ৯ উইকেটে ৩০২। বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ায়, টাইগারদের টার্গেট দেওয়া হয় ২৭ ওভারে ১৮৪ রানে। ছয় বল হাতে রেখে জয় ছিনিয়ে নেয় টাইগাররা। অবশ্য এর আগে মিরপুরে এশিয়া কাপে টাইগাররা ৫ উইকেটে হারিয়েছিল দ্বীপরাষ্ট্রকে। এক সময় দুই দলের লড়াই যেখানে ছিল একপেশে, এখন সেটা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠাসা। গত দশ ম্যাচে তিনটি জিতে তেমনই জানাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই ওয়ানডে সিরিজটি এক পেশে হবে এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠাসা থাকবে সিরিজ, কাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে বলেছেন স্বাগতিক অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, 'গত দুই বছর ধরে আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারলে, আশা করছি সিরিজে লড়াই হবে সমানে সমান। আমাদের যে শক্তি ও সামর্থ্য রয়েছে, তাতে পুরো সিরিজে লড়াই হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঠাসা।' একই কথা বলেছেন শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলি ম্যাথুসও, 'ঘরের মাটিতে বাংলাদেশ সব সময়ই কঠিন প্রতিপক্ষ। আমি মনে করি সহজে জেতার কথা ভাবা ঠিক হবে না। লড়াই হবে প্রতিটি ম্যাচেই।' শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়েই বাংলাদেশের বছর শুরু। যদিও প্রথম ম্যাচে এই মিরপুরে হেরেছিল ইনিংস ও ২৪৮ রানে। এরপর পুরো 'ইউটার্ন' টাইগারদের। সমানতালে লড়াই করে ড্র করে চট্টগ্রাম টেস্টে। লড়াই করলেও নাটকীয়তায় ভরা টি-২০ সিরিজটি হেরে যায় পরিষ্কার ব্যবধানে। তবে টাইগাররা দুটি ম্যাচই হেরেছে শেষ বলে। প্রথমটি হেরে যায় শেষ ওভারের ১৭ রানের টার্গেটে ১৪ রান তুলে। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ৩ রান। কিন্তু নিতে পারেননি এনামুল হক বিজয়। আঙুলে চোট পুরোপুরি সেরে না উঠায় আজকের ম্যাচে উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করবেন না টাইগার অধিনায়ক। তাই আজকের ম্যাচে উইকেটের পিছনে গ্লাভসহাতে দাঁড়াতে পারেন এনামুল হক বিজয় কিংবা শামসুর রহমান শুভ। দ্বিতীয় টি-২০ ম্যাচে সফরকারীদের প্রয়োজন দুই রান। ফরহাদ রেজা বাউন্সারে বাউন্ডারি মেরে শেষ বলে জয় তুলে নেন থিসারা পেরেরা। শেষ বলে দুই ম্যাচ জিতে আত্দবিশ্বাসের তুঙ্গে রয়েছে সফরকারীরা। ঠিক বিপরীত অবস্থানে রয়েছে মুশফিকবাহিনী। মুশফিক উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন না করায় একাদশ সাজানো নিয়ে ঝামেলায় পড়েছে টিম ম্যানেজম্যান্ট। তবে শিশিরও ভাবাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্টকে। সে হিসেবে আজ একাদশে তিন পেসার দেখা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে মাশরাফি ও রুবেল হোসেনের সঙ্গে দেখা যেতে পারে শফিউল ইসলাম সুহাস ও আল-আমিনের যে কোনো একজনকে। যদি দুই পেসার খেলানো হয়, তাহলে অভিষেক হচ্ছে আরাফাত সানির। টি-২০ সিরিজে চমৎকার বোলিং করে নিজেদের অবস্থান বেশ পাকা করে নিয়েছেন বাঁ হাতি স্পিনার আরাফাত। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে ম্যাচে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন আব্দুর রাজ্জাক রাজ। চোটের জন্য সিরিজে খেলতে পারছেন না তিনি। টাইগাররা আজ রাবনবাহিনী মুখোমুখি হচ্ছে ব্ল্যাক ক্যাপসদের হোয়াইটওয়াশের আত্দবিশ্বাস নিয়ে। গত বছর ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগাররা। টি-২০ সিরিজ হারলেও টাইগারদের আত্দবিশ্বাস কম, সেটাও নয়। গত পাঁচ ম্যাচের তিনটিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে পাঁচ ম্যাচে মাত্র দুটিতে জিতেছে লঙ্কানরা।