ইতিহাস গড়তে না পেরে আমি শুধু হতাশই নই, দলের কোচ ও ম্যানেজারের ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ। আমি বলব, দুজনের ভুলের কারণে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব আইএফএ শিল্ডে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি। ঢাকায় ফিরে বেশ উত্তেজিত কণ্ঠেই কথাগুলো বলছিলেন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি মনজুর কাদের। টেলিফোন করা হলে প্রথমে তিনি কথা বলতেই চাচ্ছিলেন না। বললেন, কী আর বলব ভাই, মনটা আমার ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। জানি না এমন মানসিক বিপর্যয় কাটাতে কত দিন লাগবে? শনিবার যুব ভারতীয় সল্টলেক স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১১৮তম আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে কলকাতা মোহামেডানের বিপক্ষে প্রথমে গোল করেও টাইব্রেকারে হেরে শিরোপার বদলে রানার্স-আপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে শেখ জামালকে। ১৯ বছর আগে একই পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল। ১৯৯৫ সালে আইএফএ শিল্ডে ফাইনালে ঢাকা মোহামেডানও ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল। সেবারও টাইব্রেকারে ইস্টবেঙ্গলের কাছে হেরে যায়।
যাক, ১৯৯৫ ও ২০১৪-এর মধ্যে পার্থক্য ছিল অনেক। এবার প্রথমবারের মতো প্রাচীনতম এ টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে শেখ জামাল রীতিমতো ভারত কাঁপিয়ে তুলেছিল। উদ্বোধনী ম্যাচে কলকাতা মোহামেডানের কাছে হারলেও পরে অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। সিকিম একাদশ তো আছেই, মোহনবাগানের মতো দলকে কাঁদিয়ে শেষ চার নিশ্চিত করেন মামুনুলরা। সেমিফাইনালে অবাক করা পারফরম্যান্স। যে ইস্টবেঙ্গলকে হারানোটা বাংলাদেশের দলগুলোর স্বপ্ন ছিল সেখানে কি না সুনামি বইয়ে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত করে শেখ জামাল। সত্যি বলতে কী, মামুনুলরা সেদিন যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিলেন তাতে গোলের সংখ্যা অর্ধ ডজন হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকত না। এ বিজয় বাংলাদেশকে শিরোপার কাছাকাছি নিয়ে যায়। জিতলেই ইতিহাস গড়বে শেখ জামাল। পুরো দেশ চেয়ে ছিল তাদের দিকে। বর্তমান ফুটবলে আইএফএ শিল্ডের গুরুত্ব না থাকলেও বাংলাদেশের ফুটবলে রুগ্ন চেহারার এ শিরোপাটা মহামূল্যবান হয়ে উঠেছিল। আগের ম্যাচ হারলেও মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে জেতার পর ফাইনালে মোহামেডানের সঙ্গে শেখ জামাল পারবে না, এ ছিল ধারণার বাইরে। সনি নর্দের দুর্দান্ত ফ্রি কিকে এগিয়েও যান মামুনুলরা। কিন্তু রক্ষণভাগের ভুলে প্রথমার্ধের শেষ মুহূর্তে গোল খেয়ে বসেন। এরপর ৯০ ও অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে গোল আর হয়নি। টাইব্রেকারে হেরে শুধু শেখ জামাল নয় বাংলাদেশেরই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে যায়। কেউ কেউ বলছেন রেফারির বিতর্কিত সিদ্ধান্তে শেখ জামালকে হারতে হয়েছে। কেননা ৮২ মিনিটে যে অপরাধে সনি নর্দেকে লাল কার্ড দেখানো হয়েছে তা ছিল পরিকল্পনামাফিক। সনি উঠে যাওয়ার পর শেখ জামালের ছন্দ হারিতে যায়। না, মনজুর কাদের বললেন, রেফারি হয়তো বা ছোটখাটো ভুল করেছেন। এটা ফুটবল মাঠে হতেই পারে। কিন্তু আমরা হেরেছি নিজেদের ভুলেই। এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের কোনো দোষ দেব না। ওরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছে। ওদের পারফরম্যান্সে আমি খুশি। কিন্তু ভুলটা করেছেন দলের কোচ জোসেদ আফুসি ও ম্যানেজার গাফফার। আফুসি ভালোমানের কোচ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। গাফফারও ম্যানেজার হিসেবে ভালো দায়িত্ব পালন করেন। তার দক্ষ ম্যানেজার শিপেই তো ১৯৯৯ সালে সাফ গেমসে বাংলাদেশ প্রথম স্বর্ণ জিতেছিল। কিন্তু আইএফএ শিল্ডে কোচ ও ম্যানেজার দারুণ ভুল করেছেন। এ জন্য সভাপতি হিসেবে আমি তাদের ওপর ক্ষুব্ধ। কাদের উত্তেজিত কণ্ঠেই বলেন, ফুটবলে আমার জ্ঞান একেবারে কম নয়। ঢাকা আবাহনীতে দীর্ঘ দিন ও মুক্তিযোদ্ধা ফুটবল দলে ম্যানেজার ছিলাম। কখন কী করতে হয় তা আমার ভালোমতো জানা। অথচ কষ্ট লাগে আমার কোচ ও ম্যানেজার ফাইনালে আমার কোনো কথাই শুনলেন না। এমেকাকে তুলে কেন যে আলীকে মাঠে নামানো হলো আমি বুঝলাম না। লাল কার্ড পেয়ে সনি মাঠের বাইরে; এ সময় আক্রমণের জন্য এমেকাকে খুবই দরকার ছিল। কষ্ট আমার, আমি বুঝলাম কিন্তু তারা দুজন বুঝলেন না। আর আমি দেখতে পাচ্ছি ব্যথার কারণে লিংকন খেলতেই পারছে না। যদিও কাজটা ঠিক হয়নি, তার পরও আমি খেলা চলাকালে গাফফারকে মোবাইলে বারবার বলছিলাম লিংকনকে তুলে রায়হানকে নামাতে। কে শোনে কার কথা, তুললেন তো না-ই, উল্টো ইনজুরড লিংকনকে দিয়ে টাইব্রেকারে শট করালেন। যে শট জালে গেলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন কিন্তু পারলাম না। লিংকন শট নেওয়াতেই মিস। কোচ আর ম্যানেজার টাইব্রেকারের তালিকাই সাজাতে পারেননি। আর এ ভুলের মাশুল হিসেবে সুযোগ পেয়েও ইতিহাস গড়তে পারলাম না। জানি না এ কষ্ট মুছব কীভাবে?