যোগ ব্যায়ামের ইতিহাসে পতঞ্জলি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন। তার হাতেই প্রথম লিখিত হয়েছে প্রাচীন যোগ ব্যায়ামের নানান সূত্র। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অষ্টাঙ্গ যোগ। পতঞ্জলির অষ্টাঙ্গ যোগের তৃতীয় ব্যায়াম হচ্ছে আসন। শরীরকে পরিপূর্ণ সুস্থ রাখার জন্য প্রয়োজন সাধনা করা। এর জন্য যেমন কষ্টকর পথ অতিক্রম করতে হয়, তেমনি নিজেকে গড়ে তুলতে হয় সাধক পুরুষ হিসেবেও। মানুষের দ্বৈত স্বত্বার মধ্যে অন্যতম হলো মন। এই মনের ওপর যত বেশি নিয়ন্ত্রণ থাকবে, কর্ম জীবনে তত বেশি সফল হওয়া সম্ভব। এক কথায় ধৈর্যের সঙ্গে সব কিছু মোকাবিলা করার প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এর মাধ্যমেই চূড়ান্ত মুক্তি লাভ সম্ভব। সেই সঙ্গে শারীরিক ও মানসিকভাবেও সুস্থ থাকা সম্ভব।
আসন হচ্ছে দেহকে নির্দিষ্ট ভঙ্গিতে স্থাপন করা। যে কোনো আসনই হতে পারে। এর মাধ্যমে শরীরকে সহনশীল করে তোলা। ধ্যানের মাধ্যমে সুস্থ ও উপযুক্ত করে গড়ে তোলা। আসন দেখতে সহজ হলেও অনেক কষ্টসাধ্য এই ব্যায়াম। কঠোর শৃঙ্খলার মাধ্যমে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে হয়। এর মাধ্যমে দেহকে রোগ মুক্ত ও কর্মক্ষম করে গড়ে তোলা যায়। আসনকে তাই শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রধানতম পদ্ধতি হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে একই আসনে অবস্থান করার ফলে শরীর এবং মন দুটোই কর্মক্ষম হয়ে ওঠে। এই আসন গভীর ধ্যানের রাজ্যে নিয়ে যায় মানুষকে। প্রাচীনকালে তাই যোগী কিংবা ঋষীরা দীর্ঘ সময় ধরে আসন করতেন। আসনের অনেক রকমফের আছে। যে কোনো আসনে বসেই সাধনা করা সম্ভব। পতঞ্জলির মতে, নিয়মিত যোগাসন চর্চা দেহ ও মনকে প্রচণ্ড চাপ ও বিশ্রামহীনতার ক্লান্তি থেকে সহজেই মুক্তি দিতে পারে।
আসন এক চমৎকার মাধ্যম শরীর ও মন সুস্থ রাখার। নিয়মিত এই অনুশীলন শরীর ও মনকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি জীবনকেও সুন্দর করে তোলে। জীবনে আসে শৃঙ্খলা। মানুষ সত্য ও পবিত্র হয়ে ওঠে। অন্যায় থেকে দূরে থাকার অনুপ্রেরণা লাভ করে।