সাগর হলে তাতে ঢেউ উঠবেই। সামুদ্রিক বাতাসের দোলায় দোলায়িত হবে এর রাশি রাশি জল। কাল সাঙ্গাকারা কি এ দৃশ্যগুলোরই মঞ্চায়ন করলেন মিরপুরে! চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে ট্রিপল সেঞ্চুরির পর টানা তিনটি ম্যাচে ব্যর্থ। দুই টি-২০-তে নামের পাশে সাকুল্যে ৪৮ রান। মিরপুরে প্রথম ওয়ানডেতেও ছিলেন নিজেরই ছায়ামানব (৮ রান)। কিন্তু সাঙ্গাকারা যে ভিন্ন মাপের ব্যাটসম্যান গতকাল তার প্রমাণ পাওয়া গেল আরও একবার। ছায়া থেকে বেরিয়ে স্বমহিমায় উজ্জ্বল হলেন তিনি। হিমালয়সম দৃঢ়তা দিয়ে পূর্ণ করলেন ক্যারিয়ারের ১৭তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। সেই সঙ্গে সাঙ্গাকারা ঢেউ লঙ্কানদের নিয়ে গেল ২৮৯ রানের গন্তব্যে। হিন্দুকুশ পর্বতমালা ভেদ করতে হলে গোলাবারুদের পরিমাণটাও যথেষ্ট হওয়া চাই। সামান্য গোলাবারুদে এর গাত্রে ক্ষত হয়তো সৃষ্টি করা যায়, তবে এ দিয়ে যেমন এর উচ্চতাকে স্পর্শ করা যায় না তেমনি এর পুরুত্বকেও ভেদ করা যায় না। গতকাল হিন্দুকুশের দৃঢ়তা নিয়েই উইকেটে দাঁড়িয়েছিলেন কুমার সাঙ্গাকারা। মাশরাফি-রুবেলদের তীব্র গতিতে ছুটে যাওয়া গোলা এর মধ্যে সামান্য অাঁচড়ও কাটতে পারেনি। এমনকি সাকিব-গাজীদের কৌশলী আক্রমণগুলোও নতিস্বীকার করেছে বরাবরই। ১১৫ বলে ১২৮ রান। স্ট্রাইকিং রেট ১১১.৩০। খুব ম্যাজিকেল কিছু হয়তো নয়। এর চেয়ে দারুণ সব ইনিংসে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাস ভরপুর। কিন্তু ভক্ত-সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য গতকাল সাঙ্গাকারার শরীরী ভাষাটাই ছিল যথেষ্ট। আত্দবিশ্বাসী একজন ব্যাটসম্যানকে উইকেটে দাঁড়িয়ে দারুণ একটা ইনিংস খেলতে হলে কী ধরনের আচরণ করতে হয়, এর চমৎকার একটা উদাহরণ স্থাপন করলেন সাঙ্গাকারা। ইনিংসে ১৪টি ছিল চারের মার। কোনো ছক্কা নেই। তারপরও তার ইনিংসটিকে আদর্শ বলার কারণ, আত্দবিশ্বাস। প্রতিটি শটই তিনি খেলেছেন নিজের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রেখে। শেষ পর্যন্ত ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মাহমুদুল্লাহকে লংঅনে ক্যাচ দিয়ে মাঠ ছাড়েন সাঙ্গাকারা। বোলার ছিলেন আরাফাত সানি।
সাঙ্গাকারার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে লঙ্কানরা তাদের সর্বোচ্চ স্কোর করল গতকাল। ২০১০ সালে ভারতের বিপক্ষে উইকেটে ২৮৩ রানই ছিল এই মাঠে লঙ্কানদের সর্বোচ্চ। গতকাল ৬ উইকেটে তারা ২৮৯ রান সংগ্রহ করে। লঙ্কানদের এই অর্জনে অবশ্য উৎসাহ জুগিয়েছেন প্রতিরোধকারী টাইগাররাও। নিশ্চিত চারটি ক্যাচ ফেলে দিয়ে প্রিয়ঞ্জন-ম্যাথুসদের উদ্দীপনা জুগিয়েছেন টাইগাররা। ব্যক্তিগত দুই রানে ডিপ স্কয়ার লেগে নাসিরকে ক্যাচ দিয়েছিলেন প্রিয়ঞ্জন। নাসিরের দয়ায় জীবন ফিরে পেয়ে সেই প্রিয়ঞ্জনই করলেন ৬০ রান! অধিনায়ক ম্যাথুস ব্যক্তিগত ৩৯ রানে শর্ট ফাইন লেগে মাহমুদুল্লাহকে ক্যাচ দিয়েছিলেন। মাহমুদুল্লাহর দয়ায় জীবন পেয়ে ম্যাথুস করলেন ৫৬ রান। এ ছাড়াও ভিথানাগের দুটি ক্যাচ ফেলেছেন মুমিনুল। প্রথমটি ডিপ মিড উইকেটে এবং দ্বিতীয়টি পয়েন্টে।