বাংলাদেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্যপ্রজনন ক্ষেত্র ও বঙ্গবন্ধু মৎস্য হেরিটেজ হালদা নদী। প্রাকৃতিক নিয়মে এপ্রিল-মে মাস নদীতে মা মাছের ডিম ছাড়ার মৌসুম। অথচ ডিম ছাড়ার মৌসুমেও প্রাকৃতিক এ মৎস্য সম্পদের ওপর শকুন দৃষ্টি লোভাতুরদের। প্রতিবারের অভিযানেই জব্দ করা হচ্ছে জাল, ধ্বংস করা হচ্ছে ইঞ্জিনচালিত বোট। তবুও থেমে নেই প্রকৃতিবিধ্বংসী মৎস্য শিকারিদের অপকর্ম।
জানা যায়, হালদায় ডিম ছাড়ার মৌসুম শুরু হয়েছে। মা মাছ ডিম ছাড়তে হালদা আসা শুরু করেছে। সঙ্গে মা মাছ শিকারিদের তৎপরতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। দিন-রাত সমানেই জাল বসিয়ে মা মাছ নিধনের অপচেষ্টা চলছে। তবে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে জাল জব্দ করছে। গত ২২ এপ্রিল ইফতারের পর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পরিচালিত অভিযানে সাত্তারঘাট-উত্তর মেখলসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ৫ হাজার মিটার ঘেরা জাল, ২১ এপ্রিল গুমানমর্দন ইউনিয়নের পেশকার হাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১৫০০ মিটার ও ২০ এপ্রিল সাত্তারঘাট ঘাট-নাজিরহাট পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ২ হাজার মিটার ঘেরা জাল জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে হালদার পাড় কেটে মাটি উত্তোলনে ব্যবহৃত একটি ট্রাক্টর অকেজো করা হয়।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমীন বলেন, সামনে মা মাছ ডিম পাড়ার মৌসুম। তাই আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। তবে অসাধু মাছ শিকারিরাও তৎপর। তাই দিন-রাত সমানে অভিযান পরিচালনা করে মা মাছ রক্ষার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, অভিযান সর্বশেষ সমাধান নয়। হালদা নদীকে রক্ষা করতে হলে প্রথমেই হালদা পাড়ের মানুষদের সচেতন হতে হবে। স্থানীয় মানুষ সচেতন ও নদী প্রেমিক হলে কখনো কেউ জাল বসিয়ে মা মাছ শিকার করতে পারবে না।জানা যায়, ২০১৮ সাল থেকে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন হালদা নদীর মা মাছ নিধন বন্ধে নিয়মিত সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে আসছে। ইতিমধ্যে পরিচালিত ১৬৭টি অভিযানে জব্দ করা হয় অবৈধভাবে উত্তোলন করা ১ লাখ ১৫ হাজার ঘনফুট বালু, ২ লাখ ৯০ মিটার ঘেরাজাল, ৬টি নৌকা, বালি উত্তোলনে ব্যবহৃত সাড়ে তিন কিলোমিটার পাইপ ও হালদা পাড় থেকে মাটি কাটায় ব্যবহৃত ট্রাক্টর, ধ্বংস করা হয় ১৫টি ড্রেজার ও বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত ইঞ্জিনচালিত ৫১টি নৌকা, জরিমানা আদায় করা হয় ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা, নিলামে বিক্রয় করা হয় ২ লাখ ২৫ হাজার টাকার বালু এবং কারাদন্ড দেওয়া হয় তিনজনকে। তাছাড়া হালদা নদী দূষণের দায়ে উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের যৌথ উদ্যোগে বন্ধ করে দেওয়া হয় ১০০ মেগাওয়াট পাওয়ার পিকিং প্লান্ট ও এশিয়ান পেপার মিলস। এত অভিযানের পরও থেমে নেই প্রকৃতির প্রতি লোভাতুরদের শকুন দৃষ্টি।