মঙ্গলবার, ৩১ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

নালায় মৃত্যু-নিখোঁজে দায় কার

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

নালায় মৃত্যু-নিখোঁজে দায় কার

চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে জলাবদ্ধতায় নালার পানির তীব্র স্রোতে পা পিছলে তলিয়ে যাওয়া ব্যবসায়ীর সন্ধান মেলেনি। গত রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল ও বিশেষ উদ্ধারকারী টিম দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়েও তাঁর খোঁজ পাননি। গত ২৫ আগস্ট সকালে নগরের মুরাদপুরে ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ (৫০) পানির স্রোতে নালায় তলিয়ে যান। তিনি চকবাজার এলাকায় সবজি ব্যবসা করতেন। তার বাড়ি পটিয়া উপজেলার মনসা গ্রামে। তাঁর পিতার নাম আবদুল হাকিম। 

অভিযোগ উঠেছে, নগরের বিভিন্ন সড়কের পাশে বড় আকারের নালা-নর্দমা নিরাপত্তা বেষ্টনী ছাড়াই উন্মুক্ত অবস্থায় আছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই নালা-নর্দমা ও সড়ক একাকার হয়ে যায়। সড়কের কোনো চিহ্নই থাকে না। এ সময় পথচারী ও যানবাহন চলাচল করে চরম ঝুঁকি নিয়ে। এ নিয়ে সেবা সংস্থাগুলোর কোনো উদ্যোগ নেই। দুর্ঘটনার পর কিছুটা তোড়জোড় শুরু হলেও পরে কোনো উদ্যোগ থাকে না। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, নালায় মৃত্যু-নিখোঁজ ঘটনার দায় কার। 

নিখোঁজ ব্যবসায়ীর সন্তান সাদেক উল্লাহ মাহিন বলেন, একটি নালায় পড়ে আমার বাবা নিখোঁজ হলেন। অথচ এ নিয়ে কারও কোনো দায়িত্ববোধ দেখা যাচ্ছে না। আমরা অন্তত বাবার লাশটি চাই। এটিই আমাদের সান্ত্বনা।     

আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন, ফায়ার সার্ভিসের টিম দফায় দফায় তল্লাশি চালিয়েছে। কিন্তু খোঁজ মেলেনি। মুরাদপুর থেকে এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক কারখানা হয়ে চানমিয়া রোড, কালারপুল, শমসের পাড়া হয়ে রেলক্রসিং এলাকা পর্যন্ত তল্লাশি চালানো হয়েছে। তবে আমাদের ধারণা, তার দেহটি হয়তো আবর্জনায় আটকে গেছে অথবা পানির স্রোতে নদীতে পড়ে গেছে।

চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর চশমা হিল এলাকায় সিএনজি অটোরিকশা খালে পড়ে নিখোঁজ হয় তিনজন। পরে চালকসহ দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। গত ৩০ জুন এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। গত ১৯ জুন নগরের চান্দগাঁও বি-ব্লক এলাকায় জলাবদ্ধ সড়কে অটোরিকশায় তিন নারী যাচ্ছিলেন কর্মস্থলে। থইথই পানিতে চালক সড়ক আর নালা চিহ্নিত করতে পারেনি। অটোরিকশাটি পড়ে যায় নালায়। পথচারীদের সহায়তায় তিনজনকে জীবিত উদ্ধার করা গেলেও তারা আহত হন। সর্বশেষ গত বুধবার প্রবলবর্ষণে তলিয়ে গেলে জলাবদ্ধতায় একাকার হয়ে যায় নালা-সড়ক। নগরের মুরাদপুর মোড়ে নালায় পা পিছলে পড়ে যান সালেহ আহমদ। এভাবে নগরের নালা-নর্দমা এবং সড়কের পাশে থাকা খালগুলো এখন মৃত্যুফাঁদে রূপ নিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় নগর। পানিতে একাকার হয়ে যায় সড়ক-নালা-নর্দমা ও ছোট ছোট খাল। এসব খাল-নালায় রিকশা, অটোরিকশা, ভ্যান উল্টে হতাহতের ঘটনা ঘটছে। পথচারী ও যানবাহন পড়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। 

মুরাদপুর যে নালায় পা পিছলে পথচারী পড়ে গেছেন, এমন নিরাপত্তাবেষ্টনী ছাড়া নালা-নর্দমা নগরে আরও অনেক আছে। এর মধ্যে মুরাদপুর থেকে বহদ্দার হাট পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে বড় উন্মুক্ত নালা, বহদ্দার হাট থেকে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সড়কের পাশে, আগ্রাবাদ, জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেটসহ বিভিন্ন এলাকার সড়কের পাশে নিরাপত্তা দেয়াল ছাড়া নালা-নর্দমা আছে।

সর্বশেষ খবর