শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

গরিবের হাসপাতালে ৩৭ লাখ মানুষের চক্ষুসেবা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

গরিবের হাসপাতালে ৩৭ লাখ মানুষের চক্ষুসেবা

কুমিল্লার শহরতলি আলেখারচরের পাশে অবস্থিত শংকরপুর। এখানে রয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব কমিউনিটি অপথমোলজি (বিকো) অ্যান্ড আই হসপিটাল। গরিবের হাসপাতাল নামে পরিচিত এটি। তিন দশকে এখানে প্রায় ৩৭ লাখ মানুষ চোখের সেবা নিয়েছেন। চোখের আলো ফিরে পেয়ে অনেকে দেখছেন সুন্দর পৃথিবী।

বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি কুমিল্লা পরিচালিত বৃহত্তর কুমিল্লা ও বৃহত্তর নোয়াখালীর সবচেয়ে বড় এই সেকেন্ডারি চক্ষু হাসপাতাল। গত বছর এখানে দেশের ৬৩ জেলার মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়।  ২০২২ সালে এই হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৪৯৫ জন।

চোখের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা, রিফ্রেকশন সার্ভিস, চশমা ও ফার্মেসি সার্ভিস, কাউন্সেলিং, ডা. যোবায়দা হান্নান পেডিয়াট্রিক ডিপার্টমেন্ট ও রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ অধিভুক্ত এক বছর মেয়াদি অপথলমিক অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্টিফিকেট কোর্স চালু রয়েছে এই হাসপাতালে। এ ছাড়া হাসপাতালটির আন্তঃবিভাগে আধুনিক ফ্যাকো মেশিনের মাধ্যমে বয়স্ক ও ছানি রোগীদের অপারেশন, নেত্রনালি অপারেশন, টেরিজিয়াম অপারেশন, স্কুইন্ট এবং টেসিস অপারেশনসহ চোখের অন্যান্য অপারেশন করা হয়। এই হাসপাতালে চোখের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং সার্জারি স্বল্পমূল্যে করা হয়। জাকাতভোগী, হতদরিদ্র, ভিক্ষুকদের বিনামূল্যে অপারেশন করা হয়। তাছাড়া অন্যান্য চক্ষু হাসপাতাল থেকে এই হাসপাতালের সেবামূল্য ৪০-৫০ শতাংশ কম। সেবার মান ভালো হওয়ায় এই হাসপাতালের প্রতি রোগীদের ঝোঁক অনেক বেশি।

বাইরের সাত জেলায় গিয়ে মেডিকেল ক্যাম্প করে এই হাসপাতাল। কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, লক্ষ্মীপুর এবং নারায়ণগঞ্জে এসব ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়। যেসব রোগী হাসপাতালে আসতে অক্ষম, তারা নিজ এলাকাতেই সেবা পেয়ে যান। বর্তমানে হাসপাতালটিতে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ মোট ১৫ জন চিকিৎসক এবং ২১৩ জন স্টাফ কর্মরত।

অপথালমিক অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্টিফিকেট কোর্সের অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এম কে ঢালী বলেন, হাসপাতালটি অন্য হাসপাতাল থেকে ব্যতিক্রম। কারণ, আর্থিক সমস্যায় এই হাসপাতাল থেকে কাউকে ফিরে যেতে হয় না। এটি সেকেন্ডারি লেভেলের হাসপাতাল। আমরা এটিকে টারশিয়ারি হাসপাতালে রূপান্তর করতে চাই। টারশিয়ারি হাসপাতালে রূপান্তর হলে এখানে চক্ষু প্রতিস্থাপন থেকে শুরু করে আরও জটিল অপারেশন করা যাবে।

বাংলাদেশ জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতি কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক ডা. এ কে এম আবদুস সেলিম বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া হওয়ায় সব জেলার রোগী এখানে সহজে আসতে পারেন। আমরা এই অঞ্চলে একটি আন্তর্জাতিক মানের ইনস্টিটিউশন করতে চাই। তাহলে শিক্ষার্থীরা যেমন উচ্চতর ডিগ্রি নিতে পারবেন, পাশাপাশি জটিল অপারেশন স্বল্পমূল্যে করা যাবে।

হাসপাতালটির প্রতিষ্ঠাতা একুশে পদকপ্রাপ্ত মহীয়সী নারী ডা. যোবেয়দা হান্নান। তিনি ছিলেন জাতীয় অন্ধকল্যাণ সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। সমিতির অর্থায়নে পরিচালিত এই হাসপাতাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার ৫৪৫ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর