বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্প ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে দুর্ভোগের আরেক নাম। যানজট কমানোর আশা দেখিয়ে যে কাজ ২০১২ সালে শুরু হয়েছিল, তা এখনো শেষ হয়নি। একই সময়ে শুরু হওয়া বাকি সব প্রকল্প আলো ছড়ালেও এখন পর্যন্ত গলার কাঁটা হয়ে আছে বিআরটি প্রকল্পটি। এ প্রকল্পটির বিমানবন্দর, টঙ্গী ওভারপাস চালু হলেও এখন অবধি অনেক কাজ বাকি। তবে প্রকল্পটির কাজ ৯১ শতাংশ শেষ হলেও নতুন করে প্রকল্পটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটি কোম্পানিটি। এ জন্য সম্ভাব্য আটটি স্থান চিহ্নিত করেছে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানটি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্মাণাধীন গাজীপুর-বিমানবন্দর বিআরটি প্রকল্পে বিমানবন্দর ইন্টারসেকশনে বিআরটি করিডরের বাস ঘোরানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গার সংকুলান করতে না পারা। সে জন্য চালুর পর বিআরটি করিডরে যেসব বাস চলবে, সেগুলো ঘোরানোর জন্য কুড়িল ফ্লাইওভার, কুর্মিটোলা ইউটার্ন, বনানী ওভারপাসের নিচের ইউটার্ন, বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী ইউলুপ, মহাখালী বাস টার্মিনাল ইউলুপ, নাবিস্কো ইউলুপ, সাতরাস্তা মোড় ও জাহাঙ্গীর গেট ইউটার্নকে বিবেচনায় নিচ্ছে ঢাকা বিআরটি কোম্পানি। অন্যদিকে রুট বর্ধন করার শর্তে বিআরটি প্রকল্পে সম্পৃক্ত হয়েছে উন্নয়ন সহযোগী এএফডি। সংস্থাটি প্রস্তাব দিয়েছে, বিমানবন্দর থেকে গুলিস্তান বা মিরপুর হয়ে গাবতলী কিংবা খিলগাঁও হয়ে রামপুরা পর্যন্ত রুট সম্প্রসারণের।
বিআরটি প্রকল্পের বিকল্প ‘টার্ন অ্যাবাউট’ ও রুট সম্প্রসারণের বিষয়ে গত ১৮ মে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে একটি সভা হয়। সেখানে বিআরটি কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান পরিকল্পনা অনুযায়ী বিমানবন্দরের সামনের ব্যস্ত মোড়ে ঢাকা বিআরটির বাস ঘোরানো হলে ভবিষ্যতে ট্রাফিক ব্যবস্থার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। তাই বাস ঘোরানোর জন্য নতুন একটি বিকল্প ‘টার্ন অ্যাবাউট’ চিহ্নিত করা প্রয়োজন।
সভায় কর্মকর্তারা আরও জানান, বিআরটির বিকল্প ‘টার্ন অ্যাবাউট’ চিহ্নিত করতে একাধিক সম্ভাব্য স্থান পরিদর্শন করেছে কর্তৃপক্ষ। সে মোতাবেক একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। প্রতিবেদনে যাত্রীদের সুবিধা, বাস ঘোরানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা, মিক্সড ট্রাফিক লেনে গাড়ির চাপ ইত্যাদি বিবেচনায় রাখা হয়। সার্বিক দিক বিবেচনা করে আটটি স্থানকে সম্ভাব্য বিকল্প হিসেবে বিবেচনার জন্য সমীক্ষা চালানো হয়। একইভাবে বিআরটি রুট সম্প্রসারণের জন্য এএফডির শর্তের বিষয়টিও সভাকে অবহিত করা হয়।
রুট সম্প্রসারণ কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিআরটি কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সফিকুল ইসলাম বলেন, রুট সম্প্রসারণের জন্য সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি এ সম্ভাব্য প্রস্তাবিত রুটগুলো পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন দেবে। ওই প্রতিবেদন, আমাদের নিজস্ব সমীক্ষা ও প্রকল্পের পরামর্শকদের নিয়ে সমন্বিতভাবে বিআরটির জন্য একটি সম্প্রসারিত রুট চূড়ান্ত করা হবে।
প্রকল্পটির কাজ শেষ পর্যায়ে এসে রুট সম্প্রসারণের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাজীপুর থেকে বিআরটি ব্যবহার করে যেসব যাত্রী বিমানবন্দর পর্যন্ত আসবে, বাস্তবতা হলো তাদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য কিন্তু বিমানবন্দর নয়, ঢাকার ভিতরে। এএফডিরও রুট বর্ধন করার একটা শর্ত রয়েছে। সবকিছু বিবেচনা করে আমরা রুটটি সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছি। এক্ষেত্রে রুটের শেষ প্রান্তে বাস ঘোরানোর জন্য পর্যাপ্ত জায়গা থাকার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘নতুন প্রকল্প নয়, এটা চলমান প্রকল্পের মধ্যেই রয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সম্প্রসারণ করা হবে।
মহাসড়ক বিভাগে অনুষ্ঠিত গত ১৮ মে সভায় গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার আলমগীর হোসেন বলেন, বিআরটি রুট বেশি সম্প্রসারণ করলে এর সুনাম রক্ষা করতে পারবে না এবং বিআরটি করিডর তার স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে পারবে না। রুট বাড়াতে হলে নতুন প্রকল্প নিয়ে ডেডিকেটেড লেনের মাধ্যমে করাই উচিত।
উল্লেখ্য, ২০ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বিমানবন্দর-গাজীপুর বিআরটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয় ২০১২ সালে। নকশা আর দরপত্রের কাজ শেষ করতেই চলে যায় পরের চার বছর। ২০১৭ সালে শুরু হয় পূর্ণকাজ, যা এখনো চলমান। করিডরটির কাজ বাস্তবায়নে খরচ হচ্ছে ৪ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। রুট সম্প্রসারণের উদ্যোগের ফলে টঙ্গী-গাজীপুরের দীর্ঘদিনের জনদুর্ভোগ ঢাকায় বিস্তারের আশঙ্কা করছেন ভুক্তভোগীরা।