১৫ জুলাই, ২০১৯ ১১:৪১

শাবির আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের দুর্দশা, সমাধানের আশ্বাস প্রশাসনের

জুবায়ের মাহমুদ, শাবি

শাবির আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের দুর্দশা, সমাধানের আশ্বাস প্রশাসনের

দুর্বল অবকাঠামো ও নানাবিধ সমস্যায় ভুগছে শাহজালাল বিজ্ঞান  ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থীরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ছাত্রদের সবচেয়ে বড় হল হলেও সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে শাহপরাণ হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হলের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে বলে মনে করেন এই হলের বাসিন্দারা। চরম দুর্দশায় দিন কাটানো এই শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে হল প্রশাসনের কাছে একাধিক বার দাবি জানালেও তা আমলে নেয়া হয়নি। পরবর্তীতে মার্চ মাসের ৩০ তারিখ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলে তাৎক্ষণিক সব সমস্যা  সমাধানের আশ্বাস দেয়া হয়। তবে গত ৩ মাসে তার কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি এবং হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. হাসান জাকিরুল ইসলামের নিজ দায়িত্বে গাফিলতির ফলেই এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে মনে করেণ হলের শিক্ষার্থীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, স্টেশনারি দোকান ও লন্ড্রি না থাকা, ইনডোর গেমসের অভাব, হলের ডাইনিংয়ে খাবার প্লেট স্বল্পতা, ডাইনিং ও টিভি রুমে নষ্ট ফ্যান, চুরি, ডাইনিং ও ক্যান্টিনের খাবার সমস্যা, ছারপোকা ও মশার উপদ্রব, দুর্বল ওয়াইফাই, গোসলের পানিতে ময়লা, অপর্যাপ্ত খাবার পানির ফিল্টার, অপরিষ্কার হলের বাথরুম, হলে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর স্বল্পতাসহ বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে হলের আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

স্টেশনারি দোকান ও লন্ড্রির ব্যাপারে হলের বৈধ শিক্ষার্থী আতাউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় হল বঙ্গবন্ধু হলে নেই কোন স্টেশনারি দোকান ও লন্ড্রি।  ফলে আমাদের একটি কলম কেনার জন্য অথবা একটা শার্ট ইস্ত্রি করতে যেতে হয় পাশের নয়া বাজার এলাকা না হয় বিশ্ববিদ্যালয় গেটে। এ ব্যাপারে হল প্রশাসনকে জানালেও তাদের আন্তরিকতার ঘাটতির কারণে হচ্ছে না স্টেশনারি দোকান ও লন্ড্রি।

এছাড়া হলে একটি নষ্ট ক্যারাম বোর্ড ছাড়া ইনডোর গেমসের কোন ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীরা সুষ্ঠু বিনোদন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করেন আবাসিক শিক্ষার্থী আতাউর রহমান।

এদিকে হলের ডাইনিংয়ের ১৬টি ফ্যানের মধ্যে ১০টি ফ্যান ও টিভি রুমের ১৪টি ফ্যানের মধ্যে ৭টি ফ্যান নষ্ট হওয়ায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে হলের আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম জানান, ডাইনিংয়ে ও টিভি রুমে বেশিরভাগ ফ্যান নষ্ট হওয়ায় গরমের কষ্ট করতে হচ্ছে আমাদের হলের বাসিন্দাদের। কিন্তু আমাদের অন্য দুই ছাত্র হলে এ ধরনের কোন সমস্যা নেই। এছাড়া খাবার প্লেট কম থাকায় ডাইনিংয়ে খেতে এসে দীর্ঘ সময় দাড়িয়ে থাকতে হয়।

খাবার প্লেট স্বল্পতার ব্যাপারে হলের ডাইনিং পরিচালক অনিল চন্দ্র দাসকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, হলের শিক্ষার্থীদের তুলনায় খাবারের প্লেট অনেক কম হওয়ায় গত দুই মাস আগে আমি হল প্রশাসনকে অবগত করি। তবে এখন পর্যন্ত হল কর্তৃপক্ষ কোন ধরণের পদক্ষেপ না নেয়ায় নিরুপায় হয়ে নিজের টাকায় ৫০টি প্লাস্টিকের প্লেট কিনে এনেছি।

হলে নিয়মিত চুরি হওয়ার ব্যাপারে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, আমার মোবাইল গত কয়েক মাস আগে চুরি হলে আমি অভিযোগ দেয়ার জন্য হলের অফিসে যাই। সেখানে আমাকে হলের এক কর্মকর্তা হারানো মোবাইলের দাম জিজ্ঞেস করলে আমি তা বলি। তখন ওই কর্মকর্তা আমাকে বলেন, ‌এত কম টাকার মোবাইলের জন্য আবার অভিযোগ দেয়া লাগে!'- এটা বলে অভিযোগ আমলে নেয়নি।

এছাড়া একাধিকবার কাজ করানোর পরও হলের দুর্বল ওয়াইফাই, অপর্যাপ্ত খাবার পানির ফিল্টার, গোসলের পানি দিয়ে ময়লা ও আয়রন বের হওয়া, নিয়মিত বাথরুম পরিষ্কার না করা, ছারপোকা ও মশার উপদ্রব কমানোর জন্য কোন ব্যবস্থা না নেয়া, ক্যান্টিনের অস্বাস্থ্যকর ও বিস্বাদ খাবারের ব্যাপারে হল প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোন সুরাহা হয়নি বলে জানান একাধিক শিক্ষার্থী। 

বেশ কিছু সমস্যার কথা স্বীকার করে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. হাসান জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমি সমস্যা সমাধানে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। আশা করছি খুব শীঘ্রই সব রকম সমস্যার সমাধান হবে। 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর