সম্প্রতি স্নায়ুবিজ্ঞানী ব্যারন্স সুসান গ্রিনফিল্ড সমাজের সর্বস্তরে ডিজিটালাইজেশনের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘বাস্তবজগতে খেলাধুলা, শেখা ও সামাজিক সম্পর্ক স্থাপনের সময়টাকে নষ্ট করছে স্ক্রিন ভিত্তিক দুনিয়া। ’ বর্তমান প্রজন্মের চিন্তাভাবনার জন্য স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে ওঠার প্রবণতারও সমালোচনা করেন গ্রিনফিল্ড। তার বিশ্বাস, তথ্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি নির্ভরতা এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের জটিল ও নিজস্ব যুক্তিনির্ভর আচরণের অর্থপূর্ণতার ওপরও প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে।
স্মার্টফোন আবার একই সঙ্গে হয়ে উঠছে আমাদের বড় আরেক সংকটের কারণ। অতিমাত্রায় স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে কমছে স্মরণশক্তি ও শেখার আগ্রহ এবং প্রবণতা। নিউরোসায়েন্টিস্ট সুসান গ্রিনফিল্ডের ভাষ্য অনুযায়ী, এখনকার প্রজন্মের কাছে কোনো সমস্যার সমাধান নিজে খুঁজে বের করা বা জ্ঞানার্জনের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দিয়েছে প্রযুক্তির অতিব্যবহার।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব মিশিগানের গবেষকরা সম্প্রতি এক গবেষণা শেষে জানিয়েছেন, কেউ যদি একটি ভালো বই পাঠ করেন, তাহলে তাঁর মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপের ওপর ভালো কিছুর প্রভাব পড়ে থাকে। কেউ যদি উপন্যাস পড়েন, তাহলে সেই উপন্যাসের ঘটনা, চরিত্র ও প্রেক্ষাপটের ক্রমবিস্তার তাঁর মস্তিষ্ককে যেমন প্রভাবিত করে, তেমনি তার মনের ওপরও ছাপ ফেলে, যা মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে সজীব রাখতে সহায়তা করে।
এ ব্যাপারে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির লিংকন কলেজের এ রিসার্চ ফেলোর জানিয়েছেন, স্মার্টফোনের কল্যাণে সবকিছুই এখন হাতের মুঠোয় (আঙুলের ডগায়!) চলে আসার কল্যাণে কারো নাম বা গুরুত্বপূর্ণ কোনো তারিখ মনে রাখার বিষয়টি এখন গুরুত্ব হারিয়েছে। ফলে এসব বিষয়ে মাথা খাটানোর কোনো তাগিদও থাকছে না। অন্যদিকে, তথ্য বিষয়ে মস্তিষ্কের আইনই হলো, ‘হয় মাথা খাটাও, নয় ভুলে যাও। ’ এ মাথা না খাটানোর চর্চার কারণেই আমাদের মস্তিষ্কও এখন তথ্য সংরক্ষণের সক্ষমতাও হারিয়ে ফেলছে।
স্নায়ুবিজ্ঞানী সুসান গ্রিনফিল্ড আরও বলেন, বই পড়া মানুষের মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং সঠিকভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়ায়। যেহেতু গল্পের শুরু, মধ্যম এবং শেষ অবস্থা আছে, সেহেতু গল্পের এই স্ট্রাকচার পাঠকের মস্তিষ্কের ওপর ঘটনার পরম্পরা, কার্যকারণের যোগসূত্র, পরিণতি ও সর্বোপরি ফলাফলের নিরীখে চিন্তার সক্ষমতা বাড়ায়। তিনি বলেন, এই পাঠাভ্যাস শিশু বয়স থেকে হলেই ভালো হয়। কারণ শিশুদের মস্তিষ্ক অনেক বেশি গ্রহণে সক্ষম। যত বেশি বই পড়ায় নিজেকে নিয়োজিত করা যাবে, তত বেশি ভালো ফল আমরা পেতে পারব।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার