বিশ্ব ব্যাংকসহ যে সকল আন্তর্জাতিক ব্যাংক বাংলাদেশকে ঋণ সহায়তা দেয়ার আগ্রহ দেখাচ্ছে সেগুলো যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে দেশের স্বার্থ রক্ষা করে যেটা লাভজনক এবং কল্যাণকর হবে সেই অর্থ গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দর্শন 'আমার গ্রাম আমার শহর' সহ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের নেয়া বেশ কয়েকটি প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক ৫ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী বলেও জানান মন্ত্রী।
আজ মন্ত্রণালয়ে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশীয় বিভাগের পরিচালক (অবকাঠামো) গোয়ানজি চেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি।
মন্ত্রী বলেন, 'বিশ্বব্যাংকসহ অনেক আন্তর্জাতিক ব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়নে অর্থায়ন করে থাকেন। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোনো ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ অর্থাৎ ঋণ খেলাপি হয়নি। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় নিজস্ব অর্থায়নে করা হয়েছে। তাদের ১.২ বিলিয়ন ডলার ছিলো। সেখানে ৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করে পদ্মাসেতুসহ কানেক্টিং রাস্তাও করা হয়েছে। পাশাপাশি আউটার জেলাগুলোকেও কানেক্টিভিটির আওতায় আনা হয়েছে। এ কারণে স্বাভাবিকভাবে বিশ্বব্যাংকসহ সকলের কাছে আমাদের গ্রহনযোগ্যতা বেড়েছে। যে জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংকসহ অন্যান্য অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তাজুল ইসলাম বলেন, 'আমাদের বেশ কিছু চলমান প্রকল্প আছে। নতুন আরো কিছু প্রকল্প নিতে হবে। আমরা যত টাকা চাই এবং সে অনুযায়ী যদি প্রকল্প বের করি তাহলে তারা অর্থায়ণ করতে রাজী আছে। আমরা যাচাই বাছাই করছি, এডিবি থেকে নাকি ওয়াল্ড ব্যাংক অথবা জাইকা থেকে নেবো। দেশের স্বার্থ রক্ষা করে যেখানে থেকে সুবিধা হয় আমরা সেই প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সহায়তা নেবো'।
স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন ‘বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে আন্তর্জাতিক অন্যান্য ব্যাংকের সাথে বিশ্বব্যাংকও আমাদের অর্থায়ণ করে থাকে। যেসব প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক থেকে টাকা নিই সেটা কাজে লাগিয়ে আমাদের দেশে যে আয় হয় সে অনুযায়ী জাতীয় অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নের প্রেক্ষিতে আমরা আবার তাদের সে লোন পরিশোধ করে থাকি।
তাজুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি ছিলো 'আমার গ্রাম আমার শহর' দর্শনের। এর মাধ্যমে গ্রামে শহরের সব নাগরিক সেবা পৌছে দেয়ার অঙ্গিকার করেছে সরকার। সরকারে ঘোষণা অনুযায়ী গ্রামে যোগাযোগ ও বাজার অবকাঠামো, আধুনিক স্বাস্থ্য সেবা, মানসম্মত শিক্ষা, সুপেয় পানি, তথ্য প্রযুক্তি সুবিধা ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, কমিউনিটি স্পেস ও বিনোদনের ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সুবিধা, গ্রামীণ কর্মসংস্থান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কৃষি আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে উৎপাদন বৃদ্ধিসহ সব সুবিধা রাখা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর এ দর্শন বাস্তবায়ন করবে।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের গ্রামীণ অবকাঠামোর নির্মাণ, ব্রিজ, রাস্তাগুলোকে আরও টেকসইভাবে নির্মাণ করার জন্য নতুন বেশ কয়েকটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ণ করতে আগ্রহী হয়েছে। এছাড়া গ্রামের সব জায়গায় নিরাপদ স্যানিটেশন ও সুপেয় পানি পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রেও সহযোগিতার জন্য প্রতিনিধিদলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
সাক্ষাৎকালে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী সেখ মোহাম্মদ মহসিন উপস্থিত ছিলেন।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত