স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নির্বাচন এলে অনেকেই অনেক কৌশল অবলম্বন করে। জনগণের ভোট ছাড়া অন্যভাবে ক্ষমতায় আসা যায় কি-না, এমন কৌশলও অনেকে করে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জনগণের ওপর ভরসা করেন। জনগণই প্রধানমন্ত্রীর শক্তি। জনগণের শক্তিকে নিজের শক্তি মনে করেন। জনগণের শক্তিতেই তিনি রাজনীতি করেন। জনগণের আস্থায় রাজনীতি করেন। যারা অপচেষ্টা করবেন, তারা জনগণ দ্বারা ধিকৃত হবেন এবং জনগণ থেকে দূরে সরে যাবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের দামপাড়ায় পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, সংসদ সদস্য এম এ লতিফ, নজরুল ইসলাম ও মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. আশরাফ উদ্দিন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আনোয়ার হোসেন ও জেলা পুলিশ সুপার রশিদুল হক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, হরতাল-ধর্মঘট এসব রাজনৈতিক চর্চা। রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো করতেই পারে। আমাদের কথা হলো, আগামী ২৮ তারিখের হরতালে কেউ যদি রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ভাংচুর করে, ধ্বংসাত্মক কিছু করে, তাহলে অবশ্যই নিরাপত্তা বাহিনী তাদের ভূমিকা রাখবেন। আমরা মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলো সহনশীলতার পরিচয় দিবে। তারা কোনো ভাংচুরে যাবে না, ধ্বংসাত্মক কাজ করবে না। জনগণের দুর্ভোগ সৃষ্টি করবে না। জনগণের জানমালের ক্ষতি করবে না।
তিনি বলেন, তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে হরতাল ডেকেছে। এটা কেবল বাংলাদেশে বাড়েনি। সারাবিশ্বেই বেড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পরিবহন ব্যয় তিনগুণ হয়েছে। আমাদের দেশ তেল আমদানি করে, অনেক কিছুই আমদানি নির্ভর। কাজেই আমদানির ক্ষেত্রে দাম যে অস্বাভাবিক বেড়েছে তার প্রভাব কিছুটা দেশের বাজারে পড়েছে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। দাম যেন সহনীয় পর্যায়ে থাকে সেজন্য প্রধানমন্ত্রী ভ্যাট ও ট্যাক্স কমিয়ে দিয়েছেন। পিঁয়াজ ও তেলের দাম এখন নিম্নমুখী। আমাদের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই, তারপরও যদি কেউ হরতাল ডাকে, আমাদের কিছু বলার নেই। আমাদের আবেদন থাকবে, যারা হরতাল ডেকেছে তারা যেন ধ্বংসাত্মক কোনো কাজ না করে এবং জনজীবনে দুর্ভোগ সৃষ্টি না করে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর’ উদ্বোধন করে বলেন, আজকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ আমাদেরকে সুন্দর একটা যাদুঘর উপহার দিয়েছে। ২৫ মার্চ রাজাকারবাগে যে আক্রমণটা হয়েছিল সেটা এখানেও হয়েছিল। এখানেও প্রতিরোধ যুদ্ধ হয়েছিল। এখানেও একজন এসপি সামসুল হক সাহেব যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হয়েছিলেন। তার সঙ্গে মোট ৮১ জন পুলিশ সদস্য শাহদাত বরণ করেছিলেন। আজকে যে স্মৃতি জাদুঘরটি দেখছেন তার এর স্বাক্ষর হিসেবে এটি তৈরি করা হয়েছে। আমি সিএমপি কমিশনারকে ধন্যবাদ জানাই। এই উদ্যোগে নতুন প্রজন্ম নিশ্চয়ই উপকৃত হবেন। নতুন প্রজন্ম জানতে পারবে স্বাধীনতা যুদ্ধে চট্টগ্রামবাসী কোনোদিন মাথা নত করেননি। সবসময় মাথা উঁচু করে থেকেছেন। তার এই স্বাক্ষর হলো এই মুক্তিযোদ্ধা যাদুঘর।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বিপ্লবীরা ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল যে অস্ত্রাগার দখলে নিয়ে ব্রিটিশ শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, সেই অস্ত্রাগার সংরক্ষণ করে দামপাড়ায় পুলিশ লাইন্সে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর, চট্টগ্রাম’। ৮২ জন পুলিশ সদস্যের শাহাদাৎবরণ ও অন্যান্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে দৃষ্টিলব্ধ অবয়ব প্রদানের লক্ষ্যে সিএমপির উদ্যোগে এ জাদুঘর নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের দিন জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন