১০ জুন, ২০২১ ০১:৪০

মৌলবাদীদের পরাস্ত করে অর্থনীতিতে বিকাশের পথে বাংলাদেশ

অনলাইন ডেস্ক

মৌলবাদীদের পরাস্ত করে অর্থনীতিতে বিকাশের পথে বাংলাদেশ

বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর হলো। তার অর্থনীতি দিন দিন উন্নত হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ দু-বছরের মধ্যেই ‘স্বল্পোন্নত’ থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশের মর্যাদা অর্জন করবে। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)-ই ২০১৮’র মার্চে জানায় বাংলাদেশ ২০২৪ সালের মধ্যেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনে সক্ষম হবে। আর এই অব্যাহত সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব।

সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা আছে। এক লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা মৌলবাদীদের সমস্যা প্রতিনিয়ত উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নিঃশব্দে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়নের লক্ষ্যে থেকেছে অবিচল। সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, মাথাপিছু জিডিপিতে পাকিস্তান ও ভারতকেও ছাপিয়ে গেছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ এশিয়া মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশ আজ এক নম্বরে।

এই উন্নয়নের কারণ একাধিক। প্রাণবন্ত পোশাকশিল্পের কথা প্রথমেই উল্লেখ করতে হয়। গোটা দুনিয়ায় চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরেই পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের স্থান। পাশাপাশি চামড়া, জুতো, মাছ, প্লাস্টিক প্রভৃতি রফতানির বহরও অনেক বেড়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হয়েছে রাজনৈতিক স্থিরতা। আওয়ামী লীগের শাসনকালে হরতাল সংস্কৃতি ভুলে গিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে দ্রুততর হয়েছে আর্থিক অগ্রগতি। বেগবান উন্নয়নের হাত ধরে বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডারও ভরে উঠেছে। পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২২০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন ৪৩০০ কোটি ডলারের বেশি। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান ছিল বাংলাদেশের থেকে ৮০ শতাংশ বেশি ধনী। আর এখন পাকিস্তানকে টেক্কা দিয়ে বাংলাদেশ তাদের থেকে অন্তত ৪৫ শতাংশ বেশি ধনী দেশে পরিণত হয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে অসাধারণ উন্নতি করে চলেছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের বহর বেড়েছে ১৮৮ শতাংশ। মুক্ত বিনিয়োগ নীতির হাত ধরে বিদেশিদের বিনিয়োগে মিলছে আইনি রক্ষাকবচ। এইচএসবিসি-র অনুমান, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ দুনিয়ার ২৬তম বৃহতম অর্থনীতিতে রূপান্তরিত হবে।

উন্নয়নমূলক কর্মসূচিকে বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়ার সুবিধা পাচ্ছে বাংলাদেশ। ৩০ মিলিয়নেরও বেশি (তিন কোটি) মধ্যবিত্ত আজ মাঝারি থেকে উচ্চ আয়ভুক্ত। নাগরিকদের উদার মূল্যবোধের সঙ্গে রয়েছে জঙ্গিবাদী ও মৌলবাদীদের সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার সরকারি প্রচেষ্টা। সঠিক বিচার প্রক্রিয়ায় কড়া শাস্তি পাচ্ছে অপরাধীরা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতার সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন। আজ সেই নীতিরও সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।

পাকিস্তানপন্থী আর উগ্রবাদীরা অবশ্য পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছিন্ন হওয়াটা মেনে নিতে পারছে না। তারা এখনো পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্ব গড়ে তোলার স্বপ্ন পোষণ করে চলছে। দেশের উন্নয়ন এদের সয় না। তারা দেশটাকে চরমপন্থা আর ইসলামি মৌলবাদের দিকে টেনে নিতে তৎপর। এ প্রসঙ্গে ভয়ংকর একটা ঘটনার কথা বলা যায়, যার প্রভাবে বাংলাদেশের উন্নয়ন গতি থমকে পড়ার উপক্রম হয়েছিল। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলোর সক্রিয় সমর্থনপুষ্ট জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) ৫ জন জঙ্গি ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে ঢাকার হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ জন বিদেশিসহ ২৯ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান হিসেবে প্রতিরক্ষা বাহিনী গোয়েন্দা অধিদপ্তরের (ডিজিএফআই) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আকবর হোসেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এলিট ফোর্স ১ম প্যারা-কমান্ডো ব্যাটেলিয়ান এবং ডিজিডিএফআইর এক্সটার্নাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির সমন্বিত অভিযান হামলাকারীদের পরদিনই খতম করে দেয়। ফলত বেশকিছু জীবন রক্ষা পায় এবং ক্ষয়ক্ষতিও আর বাড়েনি। মেজর জেনারেল আকবর বর্তমানে ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের (এনডিসি) কমাড্যান্ট। বাংলাদেশবিরোধী পরিকল্পনাগুলো নস্যাৎ করে দেওয়া সম্ভব করে তোলে হামলাকারীদের তৎপরতা সংক্রান্ত ডিজিএফআই সংগৃহীত তথ্যাবলি। পরবর্তীতে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সক্রিয় সমর্থনে মেজর জেনারেল আকবর হোসেনের নেতৃত্বে ডিজিএফআই দেশে ও বিদেশি কর্মরত সন্ত্রাসীদের বেশকিছু গ্রুপকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে সক্ষম হয়। ব্যাপারটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।

হলি আর্টিজান ঘটনার পর বিশ্বসম্প্রদায়ের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ। বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয় জাপান ও ইতালি। এদিকে, সন্ত্রাসবাদের প্রতি জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করতে থাকলেন। বাংলাদেশের মাটিতে নতুন করে সন্ত্রাসীদের মাথা তুলে দাঁড়াবার সুযোগই দেননি তিনি। ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের অভিজাত বাহিনী র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র‌্যাব) বহু জঙ্গিকে খতম করতে সক্ষম হয়। ২০২০ সালেই ১৫টি বড় ধরনের জঙ্গি দমন অভিযানে ৩৫ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়। সন্ত্রাস দমনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টায় ফিরে আসে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আস্থা। বাংলাদেশও ধরে রেখেছে অর্থনৈতিক অগ্রগতি। তবে এই অগ্রগতিকে ধরে রাখতে হলে যেকোনো মূল্যে দেশ থেকে জঙ্গিবাদ ও মৌলবাদকে নির্মূল করতেই হবে। সন্ত্রাসবাদ ও তাদের দোসর মৌলবাদকে নির্মূল করাটাই এখন বাংলাদেশের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ।

বিডি-প্রতিদিন/শফিক

সর্বশেষ খবর