দেশে প্রথমবারের মতো কুমিল্লার দাউদকান্দিতে শঙ্খচিল, বনবিড়াল, গুইসাপ, বেজি, শিয়ালসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী রক্ষায় স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। স্কুলে বন্যপ্রাণী রক্ষার উপকারী দিক, সেগুলো সংরক্ষণ ও আহত হলে সেবা দেওয়ার বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়। উপজেলার আদমপুর গ্রামে এই স্কুল রয়েছে। সেখানে স্থানীয় স্কুলের শিক্ষার্থী, গ্রামবাসীদের এই ধারণা দেন স্কুলের প্রতিষ্ঠা মতিন সৈকত। এ ছাড়া জৈবসার ব্যবহার করা, জমিতে কীটনাশকের প্রয়োগ কমানো নিয়েও তিনি ধারণা দেন।
সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বাড়ির পাশের একটি ঘরে পরিবেশ স্কুল স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন বই ও কৃষি সরঞ্জাম সংগ্রহ করা হয়েছে। ঘরের সামনে দেখা গেল একটি শঙ্খচিল। মতিন সৈকত ডাক দিলে তার দিকে হেঁটে আসে। মাছ দিলে পায়ের নখে আঁকড়ে ধরে মুখে তোলে। তবে উড়তে পারে না। গত দুই ঈদ তার কেটেছে এই পরিবারের সঙ্গে। পাশের কুশিয়ারা গ্রামের কিশোর রাসেল তাকে এই বাড়িতে এনে রেখে যায়। মতিন সৈকত তাকে প্রাণিসম্পদ অফিসে নিয়ে যান। চিকিৎসা করান। তার পরেও একটি ডানা নষ্ট হয়ে যায়। সে উড়তে পারে না। ছোট শঙ্খচিলের ছানা এখন অনেক বড়সড় হয়েছে। এ উপজেলার আদমপুর, পুটিয়াসহ আশপাশের গ্রামে প্লাবনভূমিতে মাছ চাষ হচ্ছে। চোখে পড়ে মাছের খামারে ব্যবহার করা জালে কোনো পাখি বা গুইসাপ আটকা পড়েছে। মতিন সৈকত নেমে পড়েন সেটি উদ্ধারে। বেশি আহত হলে চিকিৎসা দিয়ে অবমুক্ত করেন। নয়তো তাৎক্ষণিক মুক্ত স্থানে ছেড়ে আসেন। ২০ বছর ধরে তিনি এ কাজ করে আসছেন। এর মধ্যে ১৫০০ পাখি উদ্ধারের পর অবমুক্ত করেন। এ ছাড়া বন বিড়াল, গুইসাপ, বেজি, শিয়ালসহ অনেক বন্যপ্রাণীকে অবমুক্ত করেছেন। মতিন সৈকত স্থানীয় প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেন। এর পাশাপাশি কৃষি ও পরিবেশ সংরক্ষণ নিয়ে তিনি কাজ করেন। তিনি বলেন, পাখি-প্রাণী পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবদান রাখে। তাদের বিপদে পড়তে দেখলে খারাপ লাগে। তাদের উদ্ধার করে মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়ায় আনন্দ খুঁজে পাই। এ ছাড়া পরিবেশ বিষয়ে গবেষণা এবং জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশে প্রথম পরিবেশ স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছি। এটিকে আরও সম্প্রসারিত করব। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, তার কাজগুলো সম্পর্কে আমার ধারণা রয়েছে। সমাজ ও পরিবেশ দরদি মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমছে। সেখানে মতিন সৈকত ব্যতিক্রম। পরিবেশ অধিদফতর কুমিল্লার উপপরিচালক শওকত আরা কলি বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় একজন করে মতিন সৈকতের মতো লোক প্রয়োজন। তাদের হাত ধরে রক্ষা পেতে পারে আমাদের পরিবেশ প্রকৃতি।