শনিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী গুনাহার জমিদারবাড়ি

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী গুনাহার জমিদারবাড়ি

জমিদারবাড়িটি সংস্কার ও মেরামত না করায় ইতিহাসের পাতা থেকে বিলীন হওয়ার পথে। এটি সংস্কার  করে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয়রা...

 

নিভৃত পল্লীর ভিতরে জৌলুস মাখানো দ্বিতল বাড়ি। রাজ প্রাসাদতুল্য দৃষ্টিনন্দন এবং বিলাসবহুল ভবনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে লোকজন দেখেই চোখ জুড়িয়ে নিচ্ছেন। কালের সাক্ষী হয়ে আছে ব্রিটিশ আমলে নির্মাণকৃত জমিদার ভবনটি। তবে বাড়িটি সংস্কার ও মেরামত না করায় ইতিহাসের পাতা থেকে এটি বিলীন হওয়ার পথে। জমিদারবাড়িটি সংস্কার করে একটি আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে ভারতের উত্তর প্রদেশ থেকে ব্রিটিশ সরকারের তরফে জমিদার হিসেবে মো. সুন্দর আলী খান বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার গুনাহার গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। তার মৃত্যুর পর একমাত্র পুত্র রমজান আলী খান জমিদারি পরিচালনা করেন। এলাকায় জনশ্রুতি মতে, রমজান আলী খান তার স্ত্রী জাহানুন নেছার নামে তাদের জমিদারির নামকরণ করেন জাহানুন নেছা স্টেট। রমজান আলী খানের দুই পুত্র মিয়াজান খান ও মেহেরজান খান। মিয়াজান খানের তিন ছেলে কওছর আলী খান, আবদুল মজিদ খান ও মমতাজ আলী খান। অপরদিকে মেহেরজান খানের তিন  ছেলে আবদুল লতিফ খান, মোতাহার হোসেন খান ও মহসিন আলী খান এবং তিন কন্যা জোবেদা খাতুন, আমেনা খাতুন ও আখতারুন্নেছা। মেহেরজান খানের  ছেলেদের মধ্যে মোতাহার হোসেন খান ব্রিটিশ সরকারের অধীনে বাংলা বিহার, উড়িষ্যার এক্সসাইজ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। তিনি ছিলেন শৌখিন এবং সৌন্দর্যের জমিদার। ব্রিটিশ সরকারের অধীনে এক্সসাইজ কমিশনার হিসেবে দায়িত্বপালনকালে নিভৃত পল্লী গুনাহারে ১৯৩৯ সালে তিনি নির্মাণ করেন রাজপ্রাসাদতুল্য দ্বিতল বিশিষ্ট দৃষ্টিনন্দন এবং বিলাসবহুল ভবন। ভবনের চতুর্পাশ ঘিরে খনন করা হয়েছিল বিশাল নিরাপত্তা দিঘি। এ দিঘিতে জমিদার পরিবারের সদস্যরা বিকালে নৌ-ভ্রমণ করতেন। পাশাপাশি জমিদারবাড়ির পশ্চিম পাশে বিশাল একটি ঘাট বাঁধানো দর্শনীয় পুকুর ছিল। এই পুকুরেই জমিদার পরিবারের সদস্যরা গোসল করতেন। পুকুরের পশ্চিম দক্ষিণে বিশাল উঁচু সীমানা প্রাচীর ছিল যা আজও সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাড়ির ভিতরের সৌন্দর্যের কথা বলে শেষ করা যাবে না। বর্তমানে বাড়িটির নাম সাহেববাড়ি। স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম খান বাবু বলেন, এই বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা তার সম্পর্কে দাদা তিনি মারা যাওয়ার পর বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। বাড়ি সংস্কার করে পর্যটন এলাকা হিসেবে এটিকে গড়ে তোলা সম্ভব। এতে বাড়ির সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনি পর্যটক আকৃষ্ট করা যাবে।   উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন জিহাদী বলেন, মালিকরা চাইলে বাড়িটি একটি পর্যটন এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। এ বিষয়ে তিনি সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সর্বশেষ খবর