২০ হাত বাই ৪০ হাত লম্বা পাশাপাশি দুইটি লাউয়ের মাচা। মাচায় ঝুলছে ছোট বড় প্রায় শ' পাঁচেক লাউ। লাউয়ের সাদা ফুলে ভরে আছে মাচার উপরি ভাগ। গাছের ডগায় ডগায় উকি দিচ্ছে নতুন লাউয়ের কটি। আর মাচায় ঝুলে থাকা এই শত শত লাউকে ঘিরে স্বপ্ন বুনছেন মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ইউনিয়নের খোয়াজপুর গ্রামে কৃষক আলী হোসেন লিটন। এই লাউ বিক্রি করে তিনি একটি ছাগলের খামার করবেন। গত বছরের লাভের টাকা দিয়ে কিনেছিলেন হালের ট্রাকটর।
কৃষক আলী হোসের লিটন জানান, তিনি ২০০৫ সালে ঢাকায় চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে কৃষি কাজ শুরু করেন। প্রথম বছর তিনি মাত্র ৩০ শতক জমিতে লাউ চাষ করেছিলেন। খুব ভাল ফলন হয়েছিল। খরচ বাদে তার লাভ হয়েছিল এক লাখ টাকা। এর পর থেকে এক বছর পর পরই তিনি মার্টিনা জাতের লাউ চাষ করছেন। আর বছর বছর লাউ বিক্রির লাভ্যাংশ দিয়ে পুরন করছেন তার স্বপ্ন। মাঠির ঘর ভেঙ্গে করেছেন পাঁকা ঘর। কিনেছেন দোকান ভিটা। সেই ভিটায় করেছেন পাঁকা দোকান ঘড়। ছোট ভাইকে পাঠিয়েছেন সৌদি আরব। চলতি বছরে তিনি ২০ শতক জমিতে মার্টিনা লাউ চাষ করেছেন। আগষ্টের প্রথম সাপ্তাহ থেকে লাউ বিক্রি শুরু করেছেন। প্রতি পিছ লাউ বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা করে। এই ২০ দিনে তিনি প্রায় ৩৫০টি লাউ বিক্রি হয়েছে ১৮ হাজার টাকা পেয়েছিল। তিনি আশা করছেন, খরচ বাদ দিয়ে এ বছরও প্রায় সত্তর হাজার টাকা লাভ করবেন। তার এই সফলতা দেখে এলাকার অনেক কৃষকরা এখন লাউ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
জানা যায়, এ জাতের লাউ সারা বছর চাষ করা যায়। তবে শীতকালে অধিক ফলন হয়। জুন থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বীজ বপন করতে হয়। প্রতি শতাংশ জমিতে ১০ গ্রাম বীজ বপন করতে হয়। বীজ বপনের ৬০ থেকে ৬৫ দিনে গাছে ফুল ও ফল আসে। ১০ থেকে ১৫ দিনে গাছ থেকে ফল আহরণ করা যায়। লাউ দেখতে সাদা বিন্দু যুক্ত সবুজ রঙের। দের্ঘ্য ৫০ থেকে ৬০ সেন্টি মিটার পর্যন্ত। ওজন ২.৫ থেকে ৩.৫ কেজি। কৃষকরা যদি ভাল পরিচর্যা করতে পারেন তাহলে একর প্রতি ফলস হবে ২৫ থেকে ৩০ টন।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন বলেন, লাউ চাষ লাভ জনক। বিশেষ করে আনসিজনে লাউ চাষ করে কৃষকরা অধিক লাভবান হতে পারবেন। চলতি মৌসুমে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এ উপজেলায় ১৭টি লাউ চাষের প্রদর্শনী প্লট দেয়া হয়েছে। এই প্লট গুলোতে কোন রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হবে না।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন/শফিক