রবিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা

এই বিএনপি কি তারেককে রক্ষা করতে পারবে?

কাজী সিরাজ

এই বিএনপি কি তারেককে রক্ষা করতে পারবে?

জাতীয় রাজনীতিতে আবার কিছুটা উত্তাপ ছড়িয়েছে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাত বছরের কারাদণ্ড। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি আমির হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ অর্থ পাচারের মামলায় তারেক রহমানকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রদত্ত রায়ে এ দণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ২০ কোটি টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে বলে মনে করলেও তারেক রহমান ওই একই অপরাধে যুক্ত ছিলেন বলে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা যায়নি বলে মনে করেছিলেন বিচারিক আদালত। ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মোতাহার হোসেন তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দেন। এর পর তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসে মালয়েশিয়া চলে যান। এরপর তিনি আর দেশে ফেরেননি। বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের আপিলে হাইকোর্ট বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায় বাতিল করে তারেক রহমানকে এই দণ্ড দেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে উচ্চ আদালত বলেছেন, ‘দুঃখের সঙ্গে দেখা যায়, তারেক রহমান এমন এক রাজনৈতিক শ্রেণির সদস্য, যাদের  দায়িত্ব রাষ্ট্রকে দিকনির্দেশনা দেওয়া। অথচ তিনি সচেতনভাবে একটি আর্থিক অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তিনি তার রাজনৈতিক ক্ষমতা ও প্রভাব খাটিয়ে পরামর্শ মাশুলের নামে নোংরা অর্থ অর্জন করেছেন। আর এতে তার সহযোগী ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। এই ধরনের রাজনৈতিক প্রভাবপুষ্ট দুর্নীতি দেশের সুশাসন, টেকসই উন্নয়ন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য হুমকি’ (প্রথম আলো, ২২.০৭.২০১৬)। হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর সরকারের দায়িত্বশীল মহল এবং বিএনপির দায়িত্বশীল মহল থেকে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এসেছে। বিএনপি তারেকের বিরুদ্ধে সাজাকে সরকারের প্রতিহিংসা বলে চিহ্নিত করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এ রায় সরকারের প্রতিহিংসামূলক আচরণ। সাজা দেওয়ার ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, এ রায় সরকার ও দুদকের হিংসাশ্রয়ী আচরণ। জিয়া পরিবারকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এ রায় সরকারের নীলনকশা। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও তাত্ক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে একই অভিযোগ করেন। অপরদিকে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক মন্তব্য করেছেন, ‘বিচারককে প্রভাবিত করে অর্থ পাচার মামলায় বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিম্ন আদালতে খালাস পেয়েছেন। ওই রায়ের দুই দিন পর পরিবার-পরিজন নিয়ে জজ সাহেব মালয়েশিয়ায় পালিয়ে যান। আসার অনুরোধ করার পরও, এমনকি নোটিস দেওয়ার পরও আজ পর্যন্ত তিনি ফিরে আসেননি। (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২.০৭.২০১৬)। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়েছেন অভিযুক্ত জজ মোতাহার হোসেন। বৃহস্পতিবার দৈনিক প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে (২২.০৭.২০১৬ ছাপা হয়েছে পত্রিকাটির ৪-এর পাতায়) বলেছেন, ‘ভয় পেয়ে বা প্রভাবিত হয়ে রায় দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। আমি আমার বিচারিক জীবনে কোনো দিনই এমন কাজ করিনি। ইয়াবা তৈরি ও বিক্রির অভিযোগে দুই মামলায় আমি আমিন হুদা ও তার প্রতিষ্ঠানের এক কর্মচারীকে ৭৯ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছি, গাজীপুরে বোমা হামলার রায়ে ১০ জেএমবি জঙ্গির বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় দিয়েছি, কিশোরগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান হত্যা মামলায় আটজনের ফাঁসি, রমনা থানার ইমাম হত্যা মামলায় পাঁচজনের ফাঁসি, সৌদি দূতাবাসের কর্মকর্তা খালাফ হত্যা মামলায় পাঁচজনের ফাঁসিসহ অসংখ্য মামলার রায় দিয়েছি। যখন চুয়াডাঙ্গায় বিচারক ছিলাম, চরমপন্থিরা আমার আদালতে মামলা শুনে জেল ভেঙে পালিয়েছিল। আমি জীবনে কখনো ভয় পেয়ে বা প্রভাবিত হয়ে রায় দিইনি। হাইকোর্ট তার বিবেচনায় রায় দিয়েছে। আমি বিচারক থাকাকালে যে সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়েছি তার ভিত্তিতে রায় দিয়েছি। এ মামলায় প্রধান অভিযোগ ছিল গিয়াস আল মামুনকে খাদিজা ইসলাম ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। কিন্তু মামলার কোথাও তদন্ত কর্মকর্তা বলেননি যে, আসামি তারেক রহমান খাদিজার কাছে অর্থ দাবি করেছেন আর খাদিজা নিজেও আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, মামুনকে পরামর্শ ফি হিসেবে এ টাকা দিয়েছেন। কোথাও বলেননি, তারেক রহমানকে টাকা দিয়েছেন। আমি তারেককে খালাস দিয়েছি। আমি ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর তারেক রহমানের মামলার রায় দিয়েছি। এরপর আরও প্রায় দেড় মাস ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক হিসেবে ছিলাম।’ বক্তব্য-পাল্টা বক্তব্য আরও চলবে বলেই মনে হয়। বিএনপি বলছে সরকার বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখার নীলনকশা বাস্তবায়ন করে চলেছে। আদালতের রায়কে কেন্দ্র করেও রাজনীতি সামনে চলে এসেছে। অতীতেও মামলা-মোকদ্দমা এবং আদালতের রায়কে কেন্দ্র করে এই ভূখণ্ডে রাজনীতির ময়দান উত্তপ্ত হয়েছে। তারেকের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর পরই আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব.) তাজ বলেছেন, ‘খালেদা জিয়ারও বিচার হবে’ (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২২.০৭.২০১৬)। তার এ বক্তব্য ইঙ্গিতবহ। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলার বিচার তো চলছেই। তাজ সাহেব কী মিন করেছেন তা দুর্বোধ্য নয়। এখানেই বিএনপির অভিযোগ ভিত্তি খুঁজে পায় যে, খালেদা-তারেককে বাইরে রেখে দেশে পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের একটি নিখুঁত পরিকল্পনা হয়তো সরকারের আছে। আদালতের রায়ে কেউ অসন্তুষ্ট হতে পারে, পুনর্বিবেচনার ফরিয়াদ জানাতে পারে। সে সুযোগ তারেক রহমানের সামনে আছে। তিনি আপিলের সুযোগ নিতে পারেন। রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বিরুদ্ধে এই ধরনের মামলার রায়ের প্রতিবাদে রাজপথে মিটিং-মিছিলের নজির আমাদের দেশে অনেক আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং সেই মামলায় তাকে আটক করার বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশ (সাবেক পূর্ব পাকিস্তান) ভূখণ্ডে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের যে ঝড় উঠেছিল, তা আইউব খানের তখ্ত তাউশ কাঁপিয়ে দিয়েছিল। তারেক রহমান বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান। তার বিরুদ্ধে মামলার রায়ে দলের কর্মী-সমর্থকরা আহত বোধ করা অস্বাভাবিক নয়। তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মিছিল-বিক্ষোভ করাটা আমাদের দেশের রাজনীতির স্বাভাবিক চর্চার অন্তর্গত বিষয়। যদি তা আদালত অবমাননার শামিল হয় আদালতই ব্যবস্থা নেবে।

গত বৃহস্পতিবার তারেকের সাত বছর জেল হয়েছে শোনার পর বিএনপির নয়া পল্টন কার্যালয়ের সামনে এবং রাজধানীর বেশ কয়েকটি স্থানে তাত্ক্ষণিক বিক্ষোভ করেছে দলের ছাত্র ও যুবফ্রন্টের নেতা-কর্মীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিলকে পেছন থেকে ধাওয়া করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। একজনকে তারা পুলিশেও সোপর্দ করে বলে খবর বেরিয়েছে মিডিয়ায়। ছাত্রদল আদালতের রায় মনঃপুত না হওয়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে তাতে ছাত্রলীগের কী? রায় তো ছাত্রলীগ বা আওয়ামী লীগ দেয়নি, দিয়েছে আদালত। ছাত্রদলের অ্যাকশন বেআইনি হলে আদালত বুঝবেন, ছাত্রলীগ পেশিবাজি করবে কেন? আওয়ামী লীগের নেতারাই বা আগ বাড়িয়ে খালেদা জিয়াকেও জড়িয়ে ইঙ্গিতপূর্ণ কথা বলবেন কেন? এখানেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের বিষয় এসে যায়। আইনমন্ত্রী বলেছেন, তারেক রহমানকে আত্মসমর্পণ করে আপিল করতে হবে। তারেক রহমান কী করবেন আমরা জানি না। তবে তিনি তো চিকিৎসার জন্য আদালতের অনুমতিতেই লন্ডনে আছেন। এ অবস্থায় তার পক্ষে তার আইনজীবীরাও আপিল আবেদন করতে পারবেন বলে মত দিচ্ছেন তার কোনো কোনো আইনজীবী। যদি তা না পারেন তা হলে তার সাত বছর কারাদণ্ড বহাল থাকবে। ফলে দণ্ডভোগের মেয়াদ শেষে আরও পাঁচ বছর তিনি সব ধরনের নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হবেন। অর্থাৎ কারাভোগের মেয়াদ শেষে পাঁচ বছরসহ মোট ১২ বছর নির্বাচনের বাইরে থাকতে হবে তাকে। সে ১২ বছর আবার গোনা হবে তার জেলজীবন শুরুর পর। এটা শুধু তার নয়, তার দলের জন্যও হবে এক বড় বিপর্যয়। প্রশ্ন হচ্ছে তারেক রহমান কি দেশে এসে পরিস্থিতি মোকাবিলা করবেন, আইনি লড়াই করবেন? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, সে সম্ভাবনা কম। সুযোগ ছিল এসব মামলার প্রাথমিক পর্যায়ে সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করার। এখন আর সে সময় নেই। পরিস্থিতি এখন আরও জটিল হয়েছে। বিশেষ করে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলায়ও তারেক রহমান কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারেন। এমতাবস্থায় দলই ছিল তার রক্ষাকবচ, দলই তাকে রক্ষা করতে পারত। গত আট বছর বিলাতে অবস্থানকালে তিনি শুধু চিকিৎসাই নেননি, নিজের দল ও জাতীয় রাজনীতিতেও ভূমিকা রেখেছেন। দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। রাজনৈতিক-সাংগঠনিক ভূমিকা তাকে জনগণের কাছে তেমন উজ্জ্বল করেনি যে, সাধারণ জনগণের মধ্যে তার প্রতি সহানুভূতিশীল ইতিবাচক একটি মনোভাব তৈরি হবে। চার মাস আগে দলের জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে, অথচ এখনো দলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হয়নি। তো, চার মাসে যে দল তার নেতৃত্ব কাঠামোই ঠিক করতে পারে না, সে দল তার নেতার প্রয়োজনে কার্যকরভাবে পাশে দাঁড়াবে কীভাবে? পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এখন তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ভর করছে তার দল বিএনপির ভাগ্যের ওপর। আর বিএনপির ভাগ্য নির্ভর করছে তার সাংগঠনিক শক্তি-সামর্থ্যের ওপর। এক সময় বিএনপির লাইফব্লাড ছিল ছাত্রদল। সেই ছাত্রদল এখন আর নেই। অন্য যে সব অঙ্গ ও সহযোগী দল আছে সেখানে নতুন ও লড়াকুদের কোনো স্থান নেই বলে অভিযোগ শোনা যায়। কমিটি ও নেতৃত্ব বেচা-কেনার অভিযোগও শোনা যায়। এ অভিযোগ মূল দলের ক্ষেত্রেও শোনা যায়। এই সাংগঠনিক নড়বড়ে অবস্থা নিয়ে তারেক রহমানের জন্য দল বড় কিছু করতে পারবে বলে মনে হয় না। তারেক রহমান কি শান্ত মেজাজে ভাববেন যে দলের এই জরাজীর্ণ দশার জন্য তিনি কতটা দায়ী। এখন কিছু করতে হলে কোনো প্রকার হঠকারিতার পথে না গিয়ে সত্যিকার অর্থে দলকে পুনর্গঠিত করে রাজনৈতিক বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। দলে বিভেদনীতি পরিত্যাগ করে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি গড়ার চিন্তা মাথায় আনতে হবে— যেমন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের পর আবদুল মালিক উকিলসহ দলের বৃহদাংশ এবং মিজানুর রহমান চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক ও দেওয়ান ফরিদ গাজী চার অংশকে তিনি ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন এবং ইপ্সিত ফলও পেয়েছেন। বিএনপি এখন কয়েক খণ্ডে বিভক্ত। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বে বিকল্প ধারা, কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বে এলডিপি এবং মান্নান ভূইয়ার অনুসারীরা সংস্কারপন্থি নামেই এখনো কাজ করছে। মান্নান ভূইয়ার দৃঢ় সমর্থক সংস্কারপন্থিরা সারা দেশে দলের মধ্যেও অস্বস্তিকর অবস্থায় আছে। অথচ এরা রাজনীতি ও আন্দোলনের শক্তি। জেনারেল (অব.) তালুকদার, আলমগীর কবির, মনি স্বপন দেওয়ানের নেতৃত্বেও একটি গ্রুপ আছে। শমসের মবিন চৌধুরীর মতো কিছু পরিচ্ছন্ন ব্যক্তিও দূরত্ব বজায় রাখছেন দল থেকে। পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, বর্তমানে বিএনপি আদর্শবিরোধী কিছু কর্মচারী দ্বারা পরিচালিত। বিএনপির বাইরে যারা আছেন তাদের মধ্যে ‘দাগি-দোষী’ লোকের সংখ্যা নেই বললেই চলে। দলে থাকতে এরা সম্পদ ছিলেন, কখনো বোঝা ছিলেন না। ব্যক্তিগত স্বার্থচিন্তা পরিহার করে দলের রি-ইউনিফিকেশন বিএনপির ওপর জনগণের আস্থা বাড়াবে এবং সেই বিএনপিই যে কোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম হবে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে উচ্চ আদালত। এটা সম্পূর্ণ আইনি বিষয়। এ ব্যাপারে আইনগতভাবে লড়তে হবে। খোন্দকার মাহবুব হোসেন দেশের প্রবীণ আইনজীবী ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। তিনি আইনি লড়াইয়ের প্রতিই ইঙ্গিত করেছেন। এই সময়ে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াই হচ্ছে জাতীয় লড়াই। বিএনপির এমন কিছু করা ঠিক হবে না যাতে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সমগ্র জাতি ও রাষ্ট্রের প্রধান দ্বন্দ্ব নিরসনের লড়াই দুর্বল হয়। তাতে দেশে-বিদেশে বিএনপি সম্পর্কে খারাপ বার্তা যাবে, সন্ত্রাসী ও জঙ্গিরা সুযোগ নেবে আর সরকারও এই অজুহাতে বিএনপির বিরুদ্ধে দমন-পীড়নের পথ বেছে নিতে পারে। সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদবিরোধী লড়াইয়ে বিএনপির অবিচল থাকা এবং এ ইস্যুতে জাতীয় ঐক্য গড়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান ক্রমাগত চালিয়ে যাওয়া উচিত। তবে একটা বিষয়ে এদিকে-সেদিকে ফিসফাস আলোচনা হচ্ছে যে, তারেক রহমানের সাত বছর জেলের রায় জাতীয় ঐক্য গড়ে ওঠার পথে বিরূপ একটা প্রভাব ফেলতে পারে। তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা ভাবতে পারেন যে, এভাবে ঘটনা ঘটলে সরকারের সঙ্গে ঐক্য হবে কীভাবে? সরকারেরও এ ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করা উচিত, সব দলকে নিয়ে ঐক্য প্রক্রিয়া কীভাবে সফল করা যায় এবং যে কোনো প্রতিবন্ধকতা কীভাবে কাটানো যায়। হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতির ফল কারও জন্যই শেষ পর্যন্ত সুখকর হয় না।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট।

ই-মেইল : [email protected]

সর্বশেষ খবর