বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

সদাচার ছিল রসুল (সা.)-এর বৈশিষ্ট্য

মোহাম্মদ ওমর ফারুক

সদাচার ছিল রসুল (সা.)-এর বৈশিষ্ট্য

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেমন ছিলেন তা আমরা জানতে পারি তিরমিযি শরিফের একটি হাদিস থেকে। হুসাইন (রা.) বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করি— রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইরে অবস্থানকালে কী করতেন? তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রয়োজনীয় বিষয়াদি ছাড়া মুখ খুলতেন না, মানুষের সঙ্গে সুসস্পর্ক গড়ে তুলতেন, বিতৃষ্ণাবোধক বা পীড়াদায়ক ব্যবহার করতেন না। তিনি প্রত্যেক গোত্রের সম্মানিত ব্যক্তিকে মর্যাদা দান করতেন এবং তাকে তার গোত্রের প্রতিনিধি ও সর্দার নিযুক্ত করতেন। তিনি জনগণকে (আল্লাহ শাস্তি) সম্পর্কে সাবধান করতেন এবং নিজেও সাবধান থাকতেন, কিন্তু কারও সঙ্গে তিক্ত ব্যবহার করতেন না। তিনি নিজ সহচরদের খবরাদি অবহিত হতেন এবং জনসাধারণের অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, তাদের কোনো সমস্যা থাকলে তার সুষ্ঠু সমাধান করতেন, ভালো কাজের প্রশংসা করে তার প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করতেন এবং মন্দের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করে তা প্রতিহত করতেন। তিনি সবার বিষয়ে ভারসাম্য বজায় রাখতেন, তার মধ্যে স্ববিরোধিতা ছিল না। মানুষ যাতে দীন সম্পর্কে উদাসীন হয়ে না যায় বা কোনো বিষয়ে বাড়াবাড়ির দরুন বিরক্ত হয়ে না পড়ে সে সম্পর্কে তিনি সর্বদা সচেতন থাকতেন। তার দরবারে প্রতিটি কাজের একটা শৃঙ্খলা বজায় ছিল। সত্য-ন্যায়ের ক্ষেত্রে তিনি কখনো শিথিলতা প্রদর্শন করতেন না এবং সীমা অতিক্রমও করতেন না। শ্রেষ্ঠ লোকেরাই তার দরবারে উপস্থিত হতেন। যার দ্বারা জনগণ উপকৃত হতো তিনিই তার বিবেচনায় সর্বোত্তম। যে ব্যক্তি মানুষের দুঃখ-কষ্টে সর্বাধিক ব্যথিত হতো, তিনিও তার কাছে সর্বোত্তম।

 

হুসাইন (রা.) বলেন, এরপর আমি তার কাছে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মজলিস (বৈঠক) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উঠতে বসতে আল্লাহর জিকির করতেন। তিনি কোথাও কোনো মজলিসে গেলে তার যে প্রান্তে খালি জায়গা পেতেন সেখানে বসতেন এবং অন্যদেরও অনুরূপ নির্দেশ দিতেন। সভাস্থ সবার প্রতি তিনি তার প্রাপ্য দিতেন। ফলে তাদের প্রত্যেকেই ভাবতেন যে, তিনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে অন্যদের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান। কেউ তার কাছে কোনো প্রয়োজনে এলে সে চলে যেতে উদ্যোগী না হওয়া পর্যন্ত তিনি ধৈর্য ধারণ করে অপেক্ষা করতেন। তার কাছে কেউ কিছু চাইলে, তিনি তাকে তা দান করতেন, দেওয়ার মতো কিছু না থাকলে বিনয় প্রকাশ করে বিদায় দিতেন। তার সদা হাসিমুখ, প্রশস্ত মন ও সদাচার সবার জন্য বিস্তারিত ছিল। তিনি ছিলেন তাদের পিতৃতুল্য। অধিকারের ক্ষেত্রে সবাই ছিল তার কাছে সমান।

     লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর