শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
ধর্মতও্ব

হে গুনাহগার আল্লাহকে একবার ডেকেই দেখ না

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

হে গুনাহগার আল্লাহকে একবার ডেকেই দেখ না

কোনো এক মসজিদের দরজায় লেখা আছে, ‘গোনাহ করতে করতে যদি তুমি ক্লান্ত হয়ে যাও, তবে ভিতরে এসো, আলস্ন্লাহর ক্ষমার কলম এখনো ক্লান্ত হয়নি’। সুবহানালস্ন্লাহ! কত চমৎকার আশা জাগানো বাণী। দুনিয়ার রংমহলে ডুবে আমরা প্রভুকে ভুলে যাই। প্রভু কিন্তু আমাদের কখনো ভোলেন না। সন্তান মাকে ভুলে গেলেও মা সন্তানকে ভোলেন না। মায়ের কান আর মন, সবসময় সজাগ থাকে, কখন সন্তান এসে ‘মা’ বলে ডাক দেবে? একজন মমতাময়ী মা তার সন্তানকে যতটুকু ভালোবাসেন, আল্লাহ তাঁর সৃষ্টিকে তার চেয়েও বেশি মায়া করেন। এ জন্যই আলস্ন্লাহর আরেক নাম রহমান। রাহিম। দয়াময়। পরম করুণাময়। আলস্ন্লাহর করুণা কত বেশি আসুন একটি গল্প থেকে জেনে নিই।

মহাকবি শেখ শাদি (রহ.) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ বোঁস্তার শেষ অধ্যায়ে তাওবাহর আলোচনায় গল্পটি বলেছেন। এক মূর্তিপূজক জীবনভর মূর্তির সেবা করে কাটিয়েছেন। স্বয়নে-স্বপনে, ঘুমে-জাগরণে সে শুধু মূর্তির পূজা-আর্চনা, জিকির-আসকার করত। একদিন সে বড় ধরনের মুসিবতে পড়ে গেল। মূর্তির সামনে সেজদায় অবনত হয়ে চোখের পানি ছেড়ে সে বলতে লাগল, হে আমার পরম পূজনীয় প্রভু! সারাটি জীবন তোমার ইবাদত করে কাটিয়ে দিয়েছি। আজ আমি এমন এক সমস্যায় পড়েছি, তুমি ছাড়া আর কেউ আমাকে উদ্ধার করতে পারবে না। দয়া করে আমাকে তুমি রক্ষা কর প্রভু!

এভাবে কয়েকদিন প্রার্থনার পরও মূর্তিপূজকের সমস্যা কাটল না। তখন সে হতাশ হয়ে বিমর্ষ মনে বলল, হায়! আমি কোন খোদার ইবাদতে জীবন কাটিয়ে দিয়েছি? এ মূর্তি তো আমার কোনো কথাই শুনতে পায়নি। আমি সব খোদা থেকে মুখ ফিরিয়ে এক খোদা           আলস্ন্লাহর দিকে মুখ ফিরাচ্ছি। মুসলমানরা যে আলস্ন্লাহর প্রার্থনা করে, আমিও সে আলস্ন্লাহরই দিকে মন ঘুরালাম। এই বলে মন্দিরের বেদিতে বসেই তিনি প্রার্থনার দুটি হাত তুলে বললেন, ‘হে সর্বশক্তিমান আলস্ন্লাহ! পুরোটা জীবন আমি ভুলের পথে ছিলাম। আজ এক মহাসংকটে পড়ে আমি বুঝতে পেরেছি কে আমার আসল প্রভু। ওগো দয়াময় আলস্ন্লাহ! তুমি আমাকে এই সংকট থেকে বাঁচিয়ে দাও। তুমি ছাড়া আজ আর কোনো উপাস্য নেই আমার। 

এভাবে যখন কেঁদে কেঁদে সে  আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে, তখনই খবর এলো তার ওই মুসিবত কেটে গেছে। সঙ্গে সঙ্গে সে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করল। এক  আল্লাহর ফকির পুরো ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করল। এই ফকির আগেও অনেকবার মূর্তিপূজককে আলস্ন্লাহর পথে দাওয়াত দিয়েছে। মূর্তিপূজক বারবার বলত, আল্লাহর চেয়ে তার মূর্তি বেশি শক্তিশালী। ফকির যখন দেখল, তার মুসিবত কেটে গেছে, তখন সে মনে বড় দুঃখ পেল। সে বলল, হায়! যে মানুষটা সারা জীবন আলস্ন্লাহর বিরোধিতা করে গেল, আজ তারই প্রার্থনা কবুল হলো? সঙ্গে সঙ্গে ফকিরের মনে এলহাম হলো, হে ফকির! মানুষটা মূর্তির কাছে চেয়ে হতাশ হয়েছে। আমার কাছে চেয়েও যদি হতাশ হতো তাহলে ওই পাথরের গড়া মূর্তি আর আমার মধ্যে পার্থক্য কী থাকত?

এই আবেগঘন গল্প বলার পর শেখ শাদি (রহ.) বলেন, হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর কাছে চাও। যত অন্যায় তুমি করে থাকো না কেন, মনে রেখ, আল্লাহ কোনো মূর্তি নন। চাওয়ার পর যদি আল্লাহ না দেন, তবে আলস্ন্লাহ আর মূর্তির মাঝে কোনো পার্থক্য থাকে না। তাই বান্দার প্রার্থনার কবুল করা আল্লাহর কর্তব্য হয়ে যায়। আমাদের অবশ্যই চাইতে হবে চাওয়ার মতো করে। আর আল্লাহর কাছে আমাদের সবচেয়ে বড় চাওয়া এবং পাওয়া হলো ক্ষমা। তিনি যদি দয়া করে আমাদের ক্ষমা করে দেন, তাঁর প্রিয় বান্দাদের কাতারে একটু জায়গা করে দেন, তবেই দুনিয়া এবং আখেরাতে আমরা সফল কাম হব। কবির ভাষায়—

আমাদের সব ব্যর্থতা সফল হবে, যদি তুমি ক্ষমা করো।

আমাদের সব সফলতা ব্যর্থ হবে, যদি তুমি পাকড়াও কর।

ফিরে আসি শুরুর কথায়। আমরা যারা গোনাহ করতে করতে ক্লান্ত, তাদের মনে করিয়ে দিতে চাই, ক্ষমা করতে আল্লাহর কখনো ক্লান্তি আসে না। তাই আসুন, জীবন সূর্য ডুবে যাওয়ার আগেই আমরা আল্লাহর দুয়ারে ধরনা দিই। আলস্ন্লাহর কুদরতি পায়ে সেজদায় পড়ে চোখের জলে বুক ভাসিয়ে ক্ষমা চাই। ক্ষমা পেলেই আমাদের জীবন সুখ-আনন্দে ভরে উঠবে। হে আল্লাহ! ক্ষমা নামক চাদরে আমাদের জড়িয়ে রাখুন। আমরা যেন কখনই আপনার কোলছেড়ে দুনিয়ার রঙে বিলীন না হয়ে যাই।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর