শুক্রবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সুদকে আল্লাহ হারাম করেছেন

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

সুদকে আল্লাহ হারাম করেছেন

অর্থনৈতিক শোষণের আরেক নাম সুদ। সুদ ধনীকে আরও ধনী গরিবকে আরও গরিব করে। আরবি ‘রিবা’ শব্দের বাংলা অর্থ বেড়ে যাওয়া, বেশি হওয়া, অতিরিক্ত ইত্যাদি। ইবনে কাসির সুদের সংজ্ঞায় বলেন, ‘চুক্তির বাইরে মূল সম্পদের সঙ্গে অতিরিক্ত সম্পদকে রিবা তথা সুদ বলে। যেমন এক মণ ধানের সঙ্গে এক মণ ৫ কেজি ধান বেশি নেওয়া।’ মুফাসসির আলী সাবুনি বলেন, ‘সময়ের বিনিময়ে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতা থেকে যে অতিরিক্ত সুবিধা নেয় তাকেই সুদ বলে।’ সুদের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘যারা সুদ খায় তাদের অবস্থা হচ্ছে শয়তানের স্পর্শে সহজাত বিচারবুদ্ধি লোপ পাওয়া ব্যক্তির মতো। এজন্যই তারা বলে, ব্যবসা তো সুদের মতোই। অথচ আল্লাহ ব্যবসা হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন। যার কাছে তার প্রভুর আয়াত পৌঁছেছে এবং সে সুদ খাওয়া থেকে বিরত থেকেছে, তার অতীতের বিষয় সম্পূর্ণ আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু যারা আয়াত জানার পরও সুদ খেতে থাকবে, জাহান্নামই হবে ঠিকানা। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। জেনে রাখো! সুদের টাকা আল্লাহর রহমত থেকে পুরোপুরি বঞ্চিত। আর সৎ দান তার অনুগ্রহসিক্ত হয়ে বহুগুণে সমৃদ্ধ হয়। যারা অকৃতজ্ঞ এবং জেনেবুঝে ক্রমাগত গোনাহের কাজ করে যাচ্ছে আল্লাহ তাদের পছন্দ করেন না।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৫-২৭৬। মুমিনমাত্রই সুদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখবে না। আল্লাহ বলেন, ‘ওহে তোমরা যারা ইমান এনেছ, আল্লাহকে ভয় কর। আর মানুষের কাছে তোমাদের যে সুদ পাওনা রয়েছে, তা ছেড়ে দাও। যদি সত্যিই তোমরা মুমিন হয়ে থাক তাহলে সুদের সঙ্গে বিন্দু পরিমাণ সম্পর্কও রেখো না।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৭৮। সুদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা মানে আল্লাহ ও তাঁর রসুলের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করা। পরের আয়াতেই আল্লাহ বলেন, ‘যদি তোমরা সুদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখো তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রসুল তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবেন। সাবধান! এখনই ফিরে এসো আর সুদ ছেড়ে দাও। সুদ ছেড়ে দিলে মূলধন তোমরা পাবে। তোমরা জুলুম করো না, তোমাদের ওপরও জুলুম করা হবে না।’ সূরা বাকারা, আয়াত ২৮৯। ইসলামী অর্থনীতিবিদরা বলেন, সুদ দুই রকমের হতে পারে। একই বস্তু বিনিময় করে বেশি গ্রহণ করা। যেমন এক কেজি চালের বিনিময়ে দেড় কেজি চাল নেওয়া। কিংবা এক কেজি চালের বিনিময় এক কেজি চাল সঙ্গে অন্য কিছু নেওয়া। এটা স্পষ্ট সুদ। আরেক ধরনের সুদ হলো সময়ের বিনিময়ে অতিরিক্ত নেওয়া। যেমন ১০০ টাকা ঋণ দিয়ে এক মাস পর ১১০ টাকা নেওয়া। কিংবা এক কেজি চাল দিয়ে এক মাস পর এক কেজি চাল সঙ্গে আরও কিছ, হতে পারে টাকা বা অন্যকিছু নেওয়া। জাহেলি যুগে দ্বিতীয় ধরনের সুদ প্রচলিত ছিল। কেউ কারও কাছে কোনো বস্তু বা অর্থ ঋণ নিলে ফেরত দেওয়ার সময় হলে বলত, আর কিছুদিন আমার কাছে থাকুক, বিনিময়ে তোমাকে বাড়িয়ে দেব। একপর্যায়ে দেখা যেত, সুদ মূলধনের চেয়ে বেশি হয়ে যেত। আধুনিক ব্যাংক ও বীমা কোম্পানিগুলোও দ্বিতীয় ধরনের সুদ দেয়। ব্যাংকগুলো বেশি দেওয়ার কথা বলে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য টাকা জমা নেয়। তবে ইসলামী অর্থনীতির সূত্র মেনে চললে সুদ থেকে বেঁচে চলা সহজ। ইসলামী শরিয়ামতে পরিচালিত ব্যাংকগুলো চেষ্টা করে সুদমুক্ত থাকার। তবে তাদেরও নানান সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যে কারণে কখনো-সখনো তারা চাইলেও সুদমুক্ত থাকতে পারে না। সুদমুক্ত রাখতে পারে না। সুদের ব্যাপারে মূলনীতি হলো- একই বস্তুর বিনিময়ে বেশি নেওয়া যাবে না। যেমন এক কেজি চালের বিনিময়ে এক কেজি চালই নিতে হবে। দেড় কেজি নিলেই তা সুদ হবে।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাস্সিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাস্সির সোসাইটি।

www.selimazadi.com

সর্বশেষ খবর