বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

ইমানে অটল থাকতে হবে

মুহম্মাদ ওমর ফারুক

ইমানে অটল থাকতে হবে

মুমিনদের যে কোনো অবস্থায় ইমানের ওপর অটল থাকতে হবে। সাহাবি হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, মুমিনের দৃষ্টান্ত নরম কোমল শস্যের মতো, বাতাস যেদিকে দোলা দেয়, শস্যের পাতা সেদিকেই দুলতে থাকে। বাতাস থেমে গেলে স্থির হয়ে যায়। মুমিনও তেমনি বিভিন্ন আপদন্ডবিপদ দিয়ে তাকে দোলা দেওয়া হয়। আর কাফেরের দৃষ্টান্ত হলো দেবদারু গাছের মতো, দৃঢ় স্থির, অবশেষে আল্লাহ যখন ইচ্ছা করেন তাকে মূলোৎপাটন করে দেন। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৭৪৬৬)। উপরোক্ত হাদিসের মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে দুনিয়ার জীবনে সময়ে সময়ে মুমিনের ওপর বিপদন্ডমুসিবত এসে থাকে। এগুলোর মাধ্যমেও মুমিন বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রভূত কল্যাণ লাভ করে থাকে। বিপদ মুসিবত ইমানে অটল থাকলে তার গুনাহ মাফ হয়। বান্দার আমল-ইবাদতের কমতি থাকলে ক্ষতিপূরণ হয়। সৌভাগ্যবান বান্দা যারা, তাদের আত্মশুদ্ধির কাজ হয়ে যায় আল্লাহর তরফ থেকে নেওয়া পরীক্ষার মাধ্যমে। এরপর আল্লাহই তাদের রোগ-শোক, বিপদন্ডআপদ সব দূর করে দেন, তাঁর নেয়ামত দ্বারা তাদের  পরিপূর্ণ করে দেন। আর কাফেরকে আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতে অনেক আরাম-আয়েশ, স্বাচ্ছন্দ্যতা দান করলেও আখেরাতে তার জন্য কিছুই থাকে না। থাকে শুধুই যন্ত্রণা আর যন্ত্রণা। অবশেষে যখন আল্লাহ তাকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করেন, তখন তাকে যন্ত্রণাদায়ক ভয়ঙ্কর মৃত্যুর মুখোমুখি করেন এবং অনন্তকাল তার জন্য আজাব ও শাস্তির ফয়সালা করেন। প্রকৃত মুমিনের গুণাবলি বয়ান করতে গিয়ে হাদিসে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে মুমিন মানুষের সঙ্গে মেশে এবং তাদের উৎপাত-উপদ্রব সহ্য করে সে তার চেয়ে উত্তম যে মানুষের সঙ্গে মেশে না এবং তাদের উপদ্রবও সহ্য করে না। (আল আদাবুল মুফরাদ, হাদিস ৩৮৮)। মুমিন ব্যক্তি সব সময় মাওলা পাকের সাক্ষাতের আশায় ব্যতিব্যস্ত থাকে। এ সম্পর্কে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর যে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। এ কথা শুনে আমি জিজ্ঞাসা করলাম, হে আল্লাহর নবী! সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম। মৃত্যুকে অপছন্দের কথা বলছেন? আমরা প্রত্যেকেই মৃত্যুকে অপছন্দ করি। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সেটা নয়, বরং (মৃত্যুর সময়) যখন মুমিনকে আল্লাহর রহমত, সন্তুষ্টি ও জান্নাতের খোজ খবর দেওয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ পছন্দ করে, আল্লাহও তার সাক্ষাৎ পছন্দ করেন। আর কাফিরকে যখন (মৃত্যুর সময়) আল্লাহর আজাব ও গজবের (সুখবর) দেওয়া হয় তখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ অপছন্দ করে। আল্লাহও তার সাক্ষাৎ অপছন্দ করেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৬৮৫)।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর