শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় ডাক্তারের মৃত্যু

চিকিৎসার সীমাবদ্ধতা দুর্ভাগ্যজনক

করোনাবিরোধী লড়াইয়ে বুধবার শাহাদাতবরণ করেছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। করোনায় মৃত্যুবরণকারী এই চিকিৎসক সাধারণ মানুষের কাছে মানবিক ডাক্তার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সিলেট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পাশাপাশি একটি বেসরকারি হাসপাতালেও রোগী দেখতেন তিনি। প্রতিদিন শত শত মানুষকে সেবা দিতেন নিবেদিতপ্রাণ এই চিকিৎসক। সপ্তাহে এক দিন ছুটে যেতেন গ্রামের বাড়িতে গ্রামবাসীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে। এহেন নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসক নিজে যখন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন, তখন তার সামনে হাজির হলো অবিশ্বাস্য এক বাস্তবতা। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় গিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রবল আকুতি ছিল তার। কিন্তু এয়ার অ্যাম্বুলেন্স দূরে থাক, একটি ‘আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সও’ কপালে জোটেনি মঈনের! শেষ পর্যন্ত রূঢ় বাস্তবতায় আফসোসকে সঙ্গী করে নিজে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ঢাকায় আসেন। বুধবার ভোর সাড়ে ৪টায় তিনি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। দেশে কভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া প্রথম চিকিৎসক তিনি। বুধবারই তার লাশ গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার উত্তর খুরমা ইউনিয়নের নাদামপুর গ্রামে নিয়ে দাফন করা হয়। ডা. মঈনের স্ত্রীও একজন চিকিৎসক। এ দম্পতির এক ছেলে আর এক মেয়ে আছে। মরণব্যাধি করোনা বাংলাদেশে ছোবল হানার পর অনেক চিকিৎসকই ব্যক্তিগত নিরাপত্তার কথা ভেবে নিজেকে গুটিয়ে নেন। বন্ধ করে দেন রোগী দেখা। স্বার্থপরতায় আটকে থাকেননি ডা. মঈন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ায় নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দী করে কোয়ারেন্টাইনে থাকা শুরু করেন। তার শরীরের প্রয়োজনীয় নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হয় ঢাকার আইইডিসিআরে। ৫ এপ্রিল জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনি। ৭ এপ্রিল শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় সিলেটের একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ওই সময় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় গিয়ে ভেনটিলেশনসহ করোনায় পর্যাপ্ত চিকিৎসার সুযোগ আছে এমন হাসপাতালে ভর্তি হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। করোনাভাইরাসে একজন নিবেদিতপ্রাণ চিকিৎসকের অসহায় মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। তার মৃত্যু দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাকে তুলে ধরেছে; যা কাটিয়ে উঠতে সব চেষ্টা হবে- এমনটিই প্রত্যাশিত।

সর্বশেষ খবর