শুক্রবার, ৩০ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

দোয়া কবুলের মূল্যবান সময়

মো. আবু তালহা তারীফ

দোয়া কবুলের মূল্যবান সময়

দোয়া কবুলের জন্য মোমিন আল্লাহর দরবারের শরণাপন্ন। বিপদ-আপদ, ক্ষমা ও কিছু চাওয়া এবং ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় মোমিনরা দুই হাত তুলে ধরেন পালনকর্তার দরবারে। আল্লাহ অত্যধিক লজ্জাশীল দয়াময় পরম করুণাময়। যখন কোনো বান্দা তার কাছে দুই হাত তুলে প্রার্থনা করে তখন তিনি তাকে শূন্যহাতে ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ সুরা মোমিন, আয়াত ৬০। দোয়া কবুল হওয়ার আনন্দই আলাদা। চোখের পানি ফেলে তওবা, তসবিহ ও দরুদ পাঠের মাধ্যমে মূল্যবান সময়ে দোয়া করলে মহান আল্লাহ কবুল করে নেবেন। এজন্যই চাই দোয়া কবুলের সময়কে কাজে লাগানো। দোয়া কবুলের মূল্যবান সময়ের মধ্যে অন্যতম একটি হলো ফরজ নামাজের পর ও রাতের শেষাংশে। তখন দোয়া করলে মহান আল্লাহ কবুল করেন। যা আমরা মিশকাতের মাধ্যমে জানতে পারি। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হলো কোন সময়ের দোয়া বেশি গ্রহণযোগ্য? তিনি বললেন, ‘শেষ রাতের মধ্যের দোয়া এবং ফরজ নামাজের পরের দোয়া।’ ফরজ নামাজের পরসহ ফরজ নামাজের আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়কে দোয়া কবুলের জন্য খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তখন দোয়া করলে ফিরিয়ে দেওয়া হয় না।  হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া কখনো প্রত্যাখ্যাত হয় না।’ সুনানে আবু দাউদ। দোয়া কবুলের জন্য মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্য সপ্তাহে একটি বিশেষ দিন উপহার দিয়েছেন। স্বীয় বান্দারা যেন তাদের দোয়া প্রভুর দরবারে কবুল করিয়ে নিতে পারে। তা হলো জুমার দিনের দোয়া। বুখারিতে পাওয়া যায়, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিন সম্পর্কে অলোচনায় বললেন, ‘এদিন এমন একটি মুহুর্ত রয়েছে যে কোনো মুসলিম বান্দা যদি এ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু প্রার্থনা করে তবে তিনি তাকে তা অবশ্যই দিয়ে থাকেন এবং তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বুঝিয়ে দিলেন যে সে মুহুর্তটি খুবই সংক্ষিপ্ত।’ সুনানে আবু দাউদে রয়েছে, ‘আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত।’ আবার মুসলিমের বর্ণনায়, ‘জুমার দিন দোয়া কবুলের চূড়ান্ত সময় ইমামের মিম্বরে বসা থেকে নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত।’ এ ছাড়া শবেকদর, শবেবরাত, আরাফার মাঠে, সিজদায় লুটিয়ে, মুসাফির ও রোজা পালনরত অবস্থায় দোয়া কবুল হয়। অবশ্যই দোয়া কবুলের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো কিংবা দোয়া কবুল হচ্ছে না এমনটি মনে করা উচিত নয়। দোয়ার সময় স্মরণ রাখতে  হবে আল্লাহ আমার কথা শুনছেন তিনি আমার দোয়া কবুল করবেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সব সময় গ্রহণ করা হয়। যদি না সে দোয়ায় কোনো অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার কথা না থাকে এবং দোয়ায় তাড়াহুড়া না করে। জিজ্ঞাসা করা হলো হে রাসুলুল্লাহ, তাড়াহুড়া করা কী? উত্তরে বললেন, সে বলতে থাকে আমি তো দোয়া করেছি, আমি তো দোয়া করেছি; কিন্তু আমি দেখতে পেলাম না যে তিনি আমার দোয়া কবুল করেছেন। তখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, আর দোয়া করা থেকে নিজেকে বিরত রাখে।’ বুখারি ও মুসলিম।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর