শিরোনাম
মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা ও শেখ কামাল

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা ও শেখ কামাল

অকার্যকর লকডাউনে দেশ জেরবার, সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস। কিন্তু তা বোঝার মতো জ্ঞানবুদ্ধি প্রশাসনে তেমন কারও নেই। জনগণ দেশের মালিক, মালিককে সম্মান করতে হয় তা সেবকের অনেকেই ভুলে গেছে। আমলাতন্ত্রের প্রাদুর্ভাবে রাজনীতি প্রায় শূন্যের কোঠায়। সমাজের কোথাও এখন আর রাজনীতির সুবাতাস বয় না। অনেকটাই জোর যার মুল্লুক তার অবস্থা। এর মধ্যে দম বন্ধ করে চার দেয়ালের ভিতরে পড়ে আছি। আইয়ুব-ইয়াহিয়ার আমলে হাত-পা ছুড়ে চিৎকার করতাম, পূর্ব পাকিস্তান একটা বৃহত্তর কারাগার। সেটাই দেখছি লকডাউনের দিনগুলোয়। সাধারণ মানুষের সে যে কী কষ্ট তা বলার মতো নয়। কত সোনার সংসারে কাজকর্ম না থাকায় শুধু হাহাকার আর হাহাকার। পেটের জ্বালা যে কী যারা না জ্বলেছে তাদের শত চেষ্টা করেও বোঝানো যাবে না। ‘কি যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে’। যে সাপের দংশনে দংশিত হয়নি তাকে বিষাক্ত সাপের দংশনের যন্ত্রণা বোঝানো যাবে না। যে নারী মা হয়নি তাকে মাতৃত্বের বেদনা বোঝানো যায় না। গরিবের দুঃখ গরিবের যন্ত্রণা গরিবের হাসিকান্না সে যে কত মধুময় হৃদয়স্পর্শী সে শুধু গরিবই বোঝে। দারিদ্র্য যাকে স্পর্শ করেনি তাদের ওসব বোঝার সুযোগ কোথায়? যাক, তবু শেষ পর্যন্ত সবকিছু খুলে দেওয়া হলো। দেখা যাক আল্লাহ রব্বুল আলামিন কী করেন। অবশেষে আল্লাহর ওপর ভরসা করে লকডাউন তুলে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষকে শত কোটি অভিনন্দন। এখন প্রয়োজন হবে করোনার টিকা, যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আর আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা।

দিন পেরিয়ে রাত পোহালেই ১১ আগস্ট মুক্তিযুদ্ধে কাদেরিয়া বাহিনীর জন্য এক অভাবনীয় সৌভাগ্যের দিন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের অস্ত্রবোঝাই সাত জাহাজের বহরে আক্রমণ করে সব থেকে বড় দুটি জাহাজ দখল করে নিয়েছিল কাদেরিয়া বাহিনী। সে অস্ত্র দখল একদিকে পাকিস্তানি হানাদারদের যেমন ভীতসন্ত্রস্ত, আতঙ্কিত করেছিল তেমনি কাদেরিয়া বাহিনী অস্ত্রবলে বলীয়ান হয়েছিল শত গুণে। পরের দিনগুলো পাকিস্তানিরা সব সময় শঙ্কিত থাকত অস্ত্রবোঝাই জাহাজ দখল করে আমরা কতটা বলবান হয়েছি তা নিয়ে। যুদ্ধে জয়-পরাজয়ের প্রধান চাবিকাঠি শত্রুপক্ষের শক্তি-সামর্থ্য সঠিকভাবে নিরূপণ করা। পাকিস্তানিরা আমাদের শক্তি-সামর্থ্য কখনো সঠিকভাবে নিরূপণ করতে পারেনি। আর এটা ধ্রুব সত্য, দখল করা অস্ত্রে আমরা ভীষণ বলবান হয়েছিলাম। যেখানে চাইনিজ তিন ইঞ্চি মর্টারের প্রায় ২ লাখ গোলা নামানো হয়েছিল। আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তার ২৫-৩০ হাজারের বেশি ব্যবহার করতে পারিনি। গ্রেনেড দখল করা হয়েছিল কয়েক লাখ। যার ১০ ভাগের ১ ভাগও ফাটাতে পারিনি। সিক্স পাউন্ডারের গোলা প্রায় ১০ হাজার। আমরা ব্যবহার করেছি ৩-৪ বা ৫ শ। রকেট লঞ্চার এবং ব্লান্ডারসাইটের গোলা ছিল কয়েক লাখ। আমরা ব্যবহার করতে পেরেছি বেশ কয়েক হাজার। থ্রি নট থ্রি গুলি, চাইনিজ ৭.৬২, ৭.৬৫, নাইন এমএম, থ্রি নট থ্রি এসব গোলাগুলিতে আমাদের অস্ত্রভান্ডার ভরে উঠেছিল। স্বাধীনতা পর্যন্ত ভান্ডারে আর কখনো টান পড়েনি। ঝড়ঝাপটা কত গেছে। কিন্তু খুব একটা মজুদে হাত দিতে হয়নি। কারণ অক্টোবর-নভেম্বর থেকে যুদ্ধ পরিস্থিতি বদলে গিয়েছিল। এত দিন আমরা ছিলাম ডিফেন্সিভ। কিন্তু অক্টোবর থেকে মুক্তিবাহিনী হয় অফেন্সিভ। পাকিস্তানিরা তাদের ক্যাম্পে বাংকার করে লুকিয়ে থাকত। সেসব বাংকারও আমাদের গতি রোধ করতে পারেনি। জেলা শহরের বাইরে নাগরপুর-বাসাইল থানা আমরা অতি সহজেই দখল করে নিয়েছিলাম। পাকা রাস্তার গা-ঘেঁষা থানাগুলোই শুধু হানাদারদের দখলে ছিল ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। মাটিকাটায় জাহাজ দখলের যুদ্ধে মূল নেতৃত্বে ছিল মেজর হাবিবুর রহমান বীরবিক্রম, অন্যদের মধ্যে জিয়াউল হক, ক্যাপ্টেন মোতাহার, জমশেদ, আকবর। আজ অনেকেই নেই। মেজর হাবিব চলে গেছে প্রায় দেড় যুগ। অন্য অনেকেই এপার থেকে ওপারে চলে গেছে। আমিও কোনো দিন চলে যাব। কিন্তু মাটিকাটা জাহাজ দখল করে যারা মুক্তিযুদ্ধের গতি-প্রকৃতিই বদলে দিয়েছিল তারা তেমন যথাযথ সম্মান পায়নি। বরং অনেকেই দুর্ভোগ ভোগ করেছে। কারণ ইদানীং মুক্তিযুদ্ধটা হৃদয়ের না হয়ে দেখাবার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। ৫ আগস্ট ছিল ক্যাপ্টেন শেখ কামালের জন্মদিন। ৩ আগস্ট আমার লেখা ছিল। তাই সেদিন লিখতে পারিনি। ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছার জন্মদিন। কামাল এবং বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা উভয় সম্পর্কে আমাদের নেতা ’৬৯-এর গণআন্দোলনের মহানায়ক জননেতা তোফায়েল আহমেদ দারুণ দুটি লেখা লিখেছেন। তাঁর দরদভরা লেখা অনেককেই স্পর্শ করবে, আমাকেও করেছে। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুপাগল, আমাদের কথায় বঙ্গবন্ধুর শত্রুরা ভাবতে পারে আমরা বাড়িয়ে বলছি। হ্যাঁ, এখনকার হাইব্রিড নেতানেত্রীদের বাড়িয়ে বলার ক্ষমতা এবং প্রবণতা দুই-ই আছে। কিন্তু আমরা যারা একটু প্রবীণ তারা বাড়িয়ে বলতে শিখিনি। বরং আমাদের অনেক কিছুই কমিয়ে বলার অভ্যাস। জননেতা তোফায়েল আহমেদের লেখায়ও তেমন যে হয়নি তা নয়। আমি তো বঙ্গবন্ধুর একজন উন্মাদ পাগল। যৌবনে ছেলেমেয়েরা যখন প্রেমে পড়ে পাগল হয় অনেকেই বাবা-মার কথা না শুনে ভালোবাসার হাত ধরে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে পা বাড়ায়, আমি তেমনি যৌবনে প্রেম করতে না পারলেও বঙ্গবন্ধুকে ঠিক তেমনি করে ভালোবেসেছি। তার পরও বলব, বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরার ক্ষমতা ও যোগ্যতা এখনো আমাদের কারও নেই।

বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সময়ে ‘শেখ ফজিলাতুন নেছা, আমার মা’ শিরোনামে দারুণ সুন্দর লিখেছেন। লেখা পড়ে সত্যিই শিহরণ জাগে। ব্যক্তিজীবনে ফজিলাতুন নেছা বা বঙ্গমাতার সঙ্গে ১৯৬৯-৭০ থেকে আমার জানাশোনা, পরিচয়। তারও আগে ১৯৬০-৬২ সালে ছাত্রলীগের এক সম্মেলনে ঢাকায় এসে আমার ছোটবোন রহিমা ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে ছিল। একদিন বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী না আসায় রহিমার সেকি কান্না, বড় ভাই আসে না। মায়ের জন্য পরান পোড়ে- এসব শুনে বঙ্গমাতা বলেছিলেন, ‘লতিফ তো আর আসবে না। তুমি বুঝি জান না, লতিফ তো তোমাকে বিক্রি করে গেছে।’ এসব শুনে রহিমা আরও কাঁদছিল দেখে বঙ্গমাতা তার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বারবার বলছিলেন, ‘তুমি কেঁদো না। আমরা তোমাকে কষ্ট দেব না, কোনো কাজ করাব না। তোমাকে ভালো স্কুলে পড়ার ব্যবস্থা করব।’ বঙ্গমাতার পরশে রহিমা কিছুটা স্থির হয়ে বলেছিল, ‘সে তো বুঝলাম। আমি তো সেজন্য কাঁদছি না। আমার মার জন্য কান্না পাচ্ছে।’ তখন আবার তিনি বলেছিলেন, ‘তাতে কী! বেশি কান্না পেলে গাড়ি পাঠিয়ে তোমার মাকে নিয়ে আসব। না হয় যখন কান্না পাবে তখন তোমাকে নিয়ে গিয়ে মাকে দেখিয়ে আনবে।’ এসবে রহিমা কিছুটা শান্ত হয়ে পরের রাত বঙ্গমাতার কাছেই কাটিয়েছিল। তৃতীয় দিন বিকালে রহিমাকে নিতে যখন লতিফ ভাই আসেন তখন তাকে জড়িয়ে ধরে রহিমার সেকি কান্না। আমাদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সেই ১৯৬২ থেকে নিবিড় সম্পর্ক। ’৬৫-তে আমি সেনাবাহিনীতে গিয়েছিলাম। ’৬৭-এর শেষে সেনাবাহিনী থেকে ফিরে এসে আবার লেখাপড়ায় যোগ দিয়ে রাজনীতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ি। ১৯৬৮-৬৯-৭০-৭১ মাঝেমধ্যেই বঙ্গমাতার সঙ্গে দেখা হয়েছে। তখন বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী ছিলেন আমাদের স্বপ্নপুরুষ। দু-চার বার টাঙ্গাইলের মিষ্টি নিয়েও ও বাড়ি গেছি। মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় ২৩ মার্চ বিকালেও আমি ধানমন্ডির বাড়িতে বেশ কয়েকজন সহকর্মীর সঙ্গে এসেছিলাম। সেদিনও বঙ্গমাতা ভিতরে ডেকে কী যেন খেতে দিয়েছিলেন। তাঁর গ্রামের মায়ের মতো স্বভাব ছিল। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস মারাত্মক দুশ্চিন্তা দুর্ভাবনার মধ্যে তাঁকে কাটাতে হয়েছিল। আল্লাহর দয়ায় ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদারপ্রধান নিয়াজি যখন নতজানু হয়ে আত্মসমর্পণ করে সেদিন সকাল ৮টা থেকে লে. জে. আমির আবদুল্লাহ নিয়াজির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। ১০টায় গিয়েছিলাম ১৪ ডিভিশন সদর দফতরে বাঘের গুহায়। নিয়াজি আমাদের সামনে এসে সবাইকে সটান স্যালুট করেছিলেন। জেনারেল নাগরা, ব্রিগেডিয়ার সানসিং, ব্রিগেডিয়ার হরদেও সিং ক্লের এবং সমস্ত বাঙালির পক্ষে একমাত্র আমি ছিলাম। নাগরা সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। ব্রি. সানসিং, ব্রি. ক্লেরের পর তিনি বলেছিলেন, ‘এবার যার সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি তিনি তোমার পরম বন্ধু। যার কারণে তুমি এক রাতও শান্তিতে ঘুমাতে পারনি এই সেই টাইগার সিদ্দিকী।’ কেন যেন নিয়াজি আবার সটান স্যালুট করে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। আমি হাত মেলাতে পারিনি। নাগরা বারবার বলছিলেন, ‘পরাজিত সেনাপতির সঙ্গে হাত মেলানো বীরত্বের লক্ষণ।’ আমি বলেছিলাম, না, এই খুনি পাষন্ডের সঙ্গে হাত মেলাতে পারব না। দেশবাসী সে অধিকার আমাকে দেয়নি। নিয়াজির সঙ্গে হাত মেলালে আল্লাহ নারাজ হবেন। আমি সেদিন হাত মেলাতে পারিনি বা মেলাইনি। বিকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতজানু হয়ে হানাদাররা আত্মসমর্পণ করে। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়ি গিয়েছিলাম। সূর্য ডুবে যাচ্ছিল। ৩২-এর বাড়ির সামনে আমরা ডাকাডাকি করছিলাম। তখন একটি ডাটসান গাড়ি সামনে এসে দাঁড়ায়। বলে, বঙ্গবন্ধুর পরিবার তো এখানে থাকে না। তারা থাকে ১৮ নম্বরে। চলুন, আমরা নিয়ে যাচ্ছি। আমরা সেই অচেনা মানুষদের পেছনে ১৮ নম্বরে গিয়েছিলাম। ডাটসান গাড়িটা আমার থেকে ৬০-৭০ গজ আগে ছিল। বঙ্গবন্ধুর পরিবার যে বাড়িতে ছিল সেই বাড়ির দরজায় গাড়ি থামতেই পাকিস্তানি হানাদাররা তার ওপর গুলি চালায়। চারজন যাত্রীর চারজনই নিমেষে শেষ হয়ে যায়। আমার গাড়িতেও গুলি লেগেছিল দুটি। একটি ইঞ্জিনে, আরেকটি ড্রাইভিং সিটের উইন্ডোতে। আল্লাহর দয়ায় কেউ হতাহত হয়নি। সেখান থেকে ফিরে সঙ্গে সঙ্গে জানিয়েছিলাম মিত্রবাহিনীর হেডকোয়ার্টারে ব্রিগেডিয়ার সানসিং বাবাজিকে। তিনি একটি কোম্পানিসহ ক্যাপ্টেন তারাকে বঙ্গবন্ধুর বন্দী পরিবারকে উদ্ধারের দায়িত্ব দেন। তারা অনেক চেষ্টা করে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে উদ্ধার করে। মিত্রবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের প্রক্রিয়া চলছিল সেই সকাল ৮টা থেকে। হানাদারদের প্রধান সেনাপতি নিয়াজি আনুষ্ঠানিকভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করেছে বিকাল ৫টায়। কিন্তু রাত ৮টায়ও বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে আটক রাখা হানাদার দল আত্মসমর্পণ করবে না। এসব তারা মানে না। এই ছিল পাকিস্তান হানাদার। ১৮ ডিসেম্বর পল্টন ময়দানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনসভা। সেখানে শেখ জামালকে নিয়ে গিয়েছিলাম এবং সভা শেষে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছিলাম। ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গমাতার সঙ্গে দেখা হয়নি। দেখা হয়েছিল ১৮ ডিসেম্বর দুপুর দুই-আড়াইটায়। আমি গিয়ে বঙ্গমাতাকে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করেছিলাম। সেই ছবি কেন যেন চ্যানেলে সারা দিনই দেখানো হচ্ছিল। আমার সঙ্গে ছিল মেজর হাবিব, ক্যাপ্টেন সবুর, ক্যাপ্টেন ফজলুল হক, ব্রিগেডিয়ার ফজলুর রহমান। নেতৃবৃন্দের মধ্যে ছিলেন বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী এমপি, বাছেত সিদ্দিকী এমপি, হাতেম আলী তালুকদার এমএনএ, প্রিন্সিপাল হুমায়ুন খালিদ এমএনএ ও মোয়াজ্জেম হোসেন খান। অনেক নেতা তখনো ভারতেই ছিলেন। তাই সবাই অংশ নিতে পারেননি।

বঙ্গমাতাকে নিয়ে কত কথা কত স্মৃতি। আমার জন্য মায়ের মতোই ছিলেন তিনি। তাঁর কোনো ত্রুটি ছিল না, তা বলব না। মানুষ হিসেবে ভুলত্রুটি যা থাকে কমবেশি তাঁরও হয়তো ছিল। কিন্তু পরিপূর্ণ মানুষ ছিলেন তিনি। স্বামীকে সহযোগিতা করতেন সব বিষয়ে। তিনি যে অসাধারণ রান্না করতেন যা একমাত্র আমার মায়ের রান্নার সঙ্গে তুলনা করা চলে। বঙ্গবন্ধু জেলে থাকতেন, তাঁকে বাড়ি থেকে প্রতিনিয়তই খাবার পাঠাতেন। সেটা ছিল বঙ্গমাতার কাজ। অন্যদিকে শেখ কামাল, যে ছিল বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠতম বিনয়ী মানুষ। সে যে কত বদনাম নিয়ে পরপারে গেল বলার মতো নয়। অমন সংস্কৃতিমনা ক্রীড়াবিদ বিনয়ী মানুষ দুটি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোথাও কোনোখানে সে বঙ্গবন্ধুর পরিচয় দিয়ে ক্ষমতা দেখাত না। বরং কেউ জানতে না চাইলে বুঝতে পারত না যে সে জাতির পিতার বড় ছেলে। তার পরও তার নামে কত বদনাম! শেখ কামাল বেঁচে থাকলে সাংস্কৃতিক জগতে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আরও অনেকদূর এগিয়ে যেত। কী অবাক বিস্ময়ের কথা! ছেলে-মা দুজনেরই আগস্টে জন্ম, আবার সেই আগস্টেই মৃত্যু। আল্লাহর কী অপার মহিমা। আল্লাহ বঙ্গমাতা এবং শেখ কামালকে বেহেশতবাসী করুন।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর