শনিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

মা-বাবার মর্যাদা

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানি

মা-বাবার মর্যাদা

মা-বাবা এ পৃথিবীর অমূল্য সম্পদ। পরম শ্রদ্ধা ও সম্মানের পাত্র। সন্তানের কাছে মা-বাবার গুরুত্ব অনন্য। আল্লাহর ইবাদতের পর শ্রেষ্ঠ কাজ মা-বাবার সেবা করা। কোরআন- হাদিসে মা-বাবার অধিকার সবিস্তার বর্ণিত হয়েছে। মহান প্রভু ঘোষণা করেন, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ করেছেন তিনি ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কোর না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয় তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বোল না, তাদের ধমক দিও না এবং বল তাদের শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। তাদের প্রতি ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথা নত করে দাও এবং বল, হে পালনকর্তা! তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালনপালন করেছেন।’ সুরা বনি ইসরাইল আয়াত ২৩-২৪। এ আয়াতে আল্লাহ তাঁর ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছেন। সঙ্গে মা-বাবার প্রতি সদ্ব্যবহারেরও নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এতে মা-বাবার মর্যাদা অনেক গুরুত্ব লাভ করেছে। আল্লাহর ইবাদতের পর মানব জীবনে সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে স্থান পেয়েছে মা-বাবার সেবা করা। তাই তাঁদের বৈধ আদেশ-নিষেধ মানা, তাঁদের প্রয়োজনীয় ও সহায়ক যাবতীয় কিছু সাধ্যমতো ব্যবস্থা করা, তাঁদের প্রতি কষ্টদায়ক আচরণ পরিহার করা প্রতিটি সন্তানের জন্য একান্ত কর্তব্য কাজ এবং পরম সৌভাগ্যের বিষয়। উপরোল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ আমাদের মা-বাবার জন্য দোয়া করার একটি শ্রেষ্ঠ ও সংক্ষিপ্ত বাক্য শিক্ষা দিয়েছেন। মা-বাবা জীবিত বা মৃত হোক তাঁদের জন্য আমরা ওই বাক্য দ্বারা আল্লাহর কাছে নিয়মিত প্রার্থনা করতে পারি। কোরআন-হাদিসে এভাবে আরও বিভিন্ন দোয়া রয়েছে। কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়া করা উত্তম। তা সম্ভব না হলে আপন আপন অন্তরের কামনা যে কোনোভাবে আল্লাহর কাছে উপস্থাপন করা যায়। তাঁদের কেউ ইহকাল ত্যাগ করলে তাঁর জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে দোয়া এবং নেক আমল ও দান-সদকার মাধ্যমে শান্তি কামনা করা মানবতার দাবি। কারণ তখন তাঁরা একান্ত অসহায়। মহানবী (সা.) বলেন, ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তার সকল প্রকার সৎকর্মের পথ বন্ধ হয়ে যায়। তবে তিনটি ব্যবস্থা চালু থাকে। সদকায়ে জারিয়া অথবা এমন ইলম যা থেকে উপকৃত হওয়া যায় অথবা সৎ সন্তান যে তার (মা-বাবার) জন্য দোয়া করবে।’ মুসলিম। মা-বাবাকে সন্তুষ্ট রাখা সৌভাগ্যের বিষয়। যার মা-বাবা জীবিত আছেন সে অনেক ভাগ্যবান। সন্তানের জন্য মা-বাবার চেয়ে শুভাকাক্সক্ষী এ পৃথিবীতে আর কেউ নেই। মা-বাবা সন্তানের কল্যাণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করেন। সহ্য করেন জীবনের প্রতিটি পদে অসীম দুঃখকষ্ট। জিবরাইল (আ.) রমজানে একদিন বলেন, ‘যে ব্যক্তি মা-বাবা উভয়কে অথবা তাঁদের কোনো একজনকে বার্ধক্য অবস্থায় জীবিত পেয়েছে এবং তাঁদের মাধ্যমে সে বেহেশতে প্রবেশের পথ উন্মুক্ত করেনি সে ধ্বংস হোক। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমিন।’ মুসলিম। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া আল্লাহর কাছে অবশ্যই কবুল হয়। মা-বাবার দোয়া। মুসাফিরের দোয়া। অত্যাচারিত (মজলুম) ব্যক্তির দোয়া।’ আবু দাউদ, তিরমিজি। রসুলুল্লাহ (সা.)-এর যুগের এক মহান ব্যক্তি ওয়ায়েস আল করনি (রহ.)। তিনি মায়ের সেবায় নিয়োজিত থাকায় মহানবী (সা.)-এর সান্নিধ্য লাভ করতে পারেননি। রসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে শ্রেষ্ঠ তাবেয়ি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি সাহাবি ওমর (রহ.)-কে সেই ওয়ায়েস আল করনি (রহ.) থেকে নেক দোয়া গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। বিষয়টা আমাদের হৃদয়ে নাড়া দেয়। সবাইকে শিক্ষা নেওয়ার মতো উপদেশ এখানে রয়েছে। আমরা যারা কর্মব্যস্ততার কারণে মা-বাবাকে যথাযথভাবে সময় দিতে পারি না, তাঁদের প্রয়োজনে পাশে থাকতে পারি না, তা অবশ্যই অনাকাক্সিক্ষত বিষয়। তার পরও যে কোনোভাবে সময় করে যথাসাধ্য তাদের খবরাখবর নেওয়া এবং তাদের বিভিন্ন প্রয়োজনে সব ধরনের সহযোগিতার প্রচেষ্টা করা একান্ত জরুরি বিষয়, ইমানের দাবি, নৈতিক দায়িত্ব, আল্লাহ ও রসুলের বিধান। যা লঙ্ঘন করা অমার্জনীয় অপরাধ।

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর