বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

মুসলিম উম্মাহর রাজধানী কাবা

এম এ মান্নান

মুসলিম উম্মাহর রাজধানী কাবা

কাবাঘর বা হারাম শরিফ এমন এক ধর্মীয় স্থাপনা যেখানে প্রতি বছর অন্তত ৫০ লাখ তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটে।

দুনিয়ার প্রায় দেড় শ কোটি মানুষ প্রতিদিন কাবাঘরমুখী হয়ে মহান আল্লাহর দরবারে নামাজ আদায় করে। বলা হয়. কাবাঘর হলো মুসলমানদের আধ্যাত্মিক রাজধানী। মুসলমানদের দৈনন্দিন জীবনযাপন বিশেষত ইবাদতের সঙ্গে কাবাঘরের সম্পর্ক এমনই সুগভীর যে এ কারণেই তাদের কাবাকেন্দ্রিক উম্মাহ বলে অভিহিত করা হয়। কাবাঘরের সৃষ্টি ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী জগৎ সৃষ্টির সময়। হজরত ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতি ধারণ করছে এ ঘরটি।

আল্লাহ রব্বুল আলামিন কাবাঘর বা হারাম শরিফকে সুমহান মর্যাদা দিয়েছেন। একে কেন্দ্র করে হজ পালিত হয়। আরবের মক্কা নগরীতে এ ঘর অবস্থিত। বুখারির হাদিসে এ সম্পর্কে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, ‘হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মক্কা বিজয়ের দিন রসুলুল্লাহ তাঁর ভাষণে বলেছেন, আল্লাহ মক্কা এলাকাকে সপ্তম আকাশ ও ভূমন্ডল সৃষ্টির দিন থেকেই হারাম শরিফ সাব্যস্ত করেছেন। অতএব আল্লাহর সেই সাব্যস্তকরণ অনুসারেই কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম শরিফ হিসেবে অক্ষুণœ থাকবে। সেমতে এ এলাকায় আমার আগেও যুদ্ধবিগ্রহ হালাল ছিল না, আমার পরও কারও জন্য হালাল হবে না। একমাত্র আমার ক্ষেত্রে এক দিনের অল্প সময়ের জন্য আল্লাহর তরফ থেকে তা হালাল করা হয়েছিল। মক্কার কোনো গাছের একটি কাঁটা ভাঙাও নিষিদ্ধ, এ এলাকায় কোনো বন্যজন্তু তাড়া করাও নিষিদ্ধ এবং এখানকার পথে পাওয়া কোনো বস্তু মালিকের সন্ধানলাভের জন্য বিশেষরূপে ঢোলশোহরত করার উদ্দেশ্য ছাড়া উঠিয়ে নেওয়াও নিষিদ্ধ। মক্কার কোনো ঘাস, পাতা-লতা ছিন্ন করাও নিষিদ্ধ। তখন আব্বাস (রা.) বলেন, ‘ইয়া রসুলুল্লাহ! এজখের নামীয় ঘাস এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখুন। কারণ এ ঘাস আমাদের ঘরের জন্য এবং কর্মকারদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়। তিনি বললেন, আচ্ছা! এজখের ঘাস এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হলো।’ পবিত্র কাবাঘরে যারা হজ ও ওমরাহ পালন করতে যান তারা জমজমের পানিপানের তাগিদ অনুভব করেন। আনুমানিক হিসেবে ৫ হাজার বছর আগে এ কূপের সৃষ্টি। হজ পালনের মাধ্যমে মানুষ কলুষতা থেকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পায়। হজরত আবু হোরায়রা বলেন, ‘আমি রসুলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ করতে যাবে এবং সব ধরনের অশোভনীয় ও গুনাহের কাজ থেকে বেঁচে থাকবে, হজ থেকে প্রত্যাবর্তনকালে ওই ব্যক্তির অবস্থা এমন হবে যে তার সব গুনাহ মাফ হয়ে সে এরূপ বেগুনাহ হয়ে গেছে, যেরূপ বেগুনাহ মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার দিন ছিল।’ বুখারি।

হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন বা স্তম্ভ। হজ শব্দের অর্থ কোনো পবিত্র স্থান দর্শনের সংকল্প করা। ইসলামী পরিভাষায় হজ অর্থ আল্লাহ রব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট স্থানগুলো এবং খানায়ে কাবা তাওয়াফ, ৯ জিলহজ আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত থাকা এবং অন্য কয়েকটি স্থানে আল্লাহ ও রসুলের নির্দেশিত অনুষ্ঠান পালন। আল্লাহ রব্বুল আলামিন ইরশাদ করছেন, ‘আর তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে হজ ও ওমরাহ পরিপূর্ণভাবে পালন কর।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৯৬।

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর প্রত্যেক মানুষের ওপর ফরজ এ ঘরের হজ করা, যে এ ঘর পর্যন্ত যাতায়াতের (দৈহিক ও আর্থিক) সামর্থ্য রাখে। আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে তবে আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগতের মুখাপেক্ষী নন।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পাঁচটি বিষয়ের প্রতি ইসলামের ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে- এ কথার সাক্ষ্য দেওয়া যে আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহর রসুল, নামাজ কায়েম, জাকাত আদায়, বায়তুল্লাহর হজ করা ও রমজানের রোজা রাখা।’ বুখারি, মুসলিম।

হজ সম্পর্কে বিপুলসংখ্যক হাদিস রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘নবী (সা.) আমাদের উপস্থিতিতে বললেন, হে লোকেরা! আল্লাহ তোমাদের ওপর হজ ফরজ করেছেন। কাজেই তোমরা হজ কর। উপস্থিত জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রসুল! প্রতি বছরই কি হজ? তিনি নিরুত্তর রইলেন। অগত্যা ওই ব্যক্তি এ প্রশ্নটি পরপর তিনবার করলেন। তখন রসুলুল্লাহ বললেন, উত্তরে যদি আমি হ্যাঁ বলতাম, তাহলে তোমাদের ওপর প্রতি বছর হজ ফরজ হয়ে যেত, অথচ তা পালন করার সামর্থ্য তোমাদের থাকত না। এরপর তিনি বললেন, যতক্ষণ আমি তোমাদের ছেড়ে দিই, তোমরাও আমাকে ছেড়ে রেখ। কারণ তোমাদের পূর্ববর্তী যারা ছিল তারা অতিরিক্ত প্রশ্ন করার ও নিজেদের নবীদের ব্যাপারে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। কাজেই যখন আমি তোমাদের কোনো কিছুর হুকুম দিই, তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী পালন কর। আর যখন কোনো কাজ থেকে বারণ করি, তা থেকে বিরত থেক।’ মুসলিম। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর  হজ পালন সীমিত করা হয়েছে। আমরা আল্লাহর দরবারে মিনতি জানাব, এ মুসিবত থেকে তিনি যেন আমাদের সবাইকে মাফ করেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হজ পালনের তৌফিক দান করুন।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর