শনিবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ইসলাম খেলাধুলা সমর্থন করে

মুফতি রফিকুল ইসলাম আল মাদানী

ইসলাম খেলাধুলা সমর্থন করে

ইসলাম মানুষের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ সাধনে অনেক গুরুত্বারোপ করে। মেধা বিকাশের জন্য বৈধভাবে আনন্দ উপভোগ ও সৃজনশীল মননশীলতাকে উৎসাহিত করে। অনুপ্রাণিত করে শারীরিক শক্তি অর্জনের প্রতি। ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনে এসব বিষয়ে যথেষ্ট উদাহরণ পাওয়া যায়। তিনি সাহাবাদের আনন্দ প্রদানের জন্য বাস্তবসম্মত ও আবেগময় রসিকতা করতেন। তাঁর বিবিদের তিনি শিক্ষণীয় গল্প শোনাতেন। তাঁদের সঙ্গে তিনি দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘তিনি এক ভ্রমণে রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে ছিলেন, তিনি বলেন, আমি তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করে আমি তাঁর আগে চলে গেলাম। অতঃপর আমি স্বাস্থ্যবতী হয়ে যাওয়ার পর আবারও তাঁর সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করলাম, এবার তিনি আমাকে  পেছনে ফেলে বিজয়ী হলেন। তিনি বলেন, এই বিজয় সেই বিজয়ের বদলা।’ (আবু দাউদ-২৫৭৮, সহিহ)

রসুলুল্লাহ (সা.) জনৈক সাহাবিকে অনুপ্রাণিত করতে গিয়ে আবেগময় কণ্ঠে ব্যক্ত করেন, ‘আজ আমাদের শ্রেষ্ঠতম অশ্বারোহী হলো, আবু কাতাদাহ এবং শ্রেষ্ঠতম পদাতিক হলো, সালামা।’ (সহিহ মুসলিম-৪৫৭০)। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছেই আমি খেলতাম। আমার কিছু বান্ধবী ছিল তারা আমার সঙ্গে খেলা করত। রসুলুল্লাহ (সা.) প্রবেশ করলে তারা নিরুদ্দেশ হয়ে যেত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন, তারা আমার সঙ্গে খেলা করত। (সহিহ বুখারি- ৬১৩০)

অপর এক বর্ণনায় রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা তোমাদের বাচ্চাদের সাঁতার ও তীর নিক্ষেপ শিক্ষা দাও। আর মুমিন মহিলাদের জন্য সুতা কাটা ও ভাঁজ করা কতই না সুন্দর বিনোদন।’ (আল মারিফা, ইবনে মান্দাহ)। বিনোদন ও খেলাধুলা সমর্থন করে এমন বর্ণনা মহানবী (সা.) ও সাহাবাগণ থেকে অনেক পরিমাণে উল্লেখ আছে। বর্তমান বিশ্বে শিশু, যুবক ও বয়স্ক সব শ্রেণির মানুষ বিভিন্ন ধরনের শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় আক্রান্ত হচ্ছে। হাঁটু ব্যথা, কোমর ব্যথা, পিঠ ব্যথা, ঘাড় ব্যথা, অটিজম ও ডায়াবেটিস বর্তমান বিশ্বে নিত্যদিনের সমস্যা। এসব সমস্যার শ্রেষ্ঠ সমাধান হচ্ছে শরীরচর্চা করা। শরীরচর্চার জন্য উত্তম ও সহজ উপায় হচ্ছে খেলাধুলা, সাঁতার ও হাঁটাচলা করা। তাই সব বয়সের ব্যক্তিবর্গকে শরীরচর্চার জন্য কিছু সময় বের করতে হবে। বিশেষ করে শিশুদের মেধা ও শারীরিক বিকাশের জন্য এর বিকল্প নেই। তাই তাদের অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়া অতীব জরুরি। তবে ইসলামী শরিয়তের নির্দেশনা অনুসারে কিছু নেতিবাচক দিক পরিহার করা আবশ্যক। বিশেষ করে লক্ষণীয় কয়েকটি বিষয় হলো, ইসলামী আকিদা-বিশ্বাস ও বিধিবিধান পরিপন্থী বিষয় হলে তা বর্জন করা। জুয়া, বাজি ও আর্থিক লেনদেন জাতীয় কিছু সম্পৃক্ত না রাখা। নামাজের সময় খেলা অথবা এর জন্য নামাজ, রোজা ইত্যাদি ছেড়ে না দেওয়া। খেলা ও বিনোদনের প্রতি অতি নেশাপূর্ণ আসক্ত না হওয়া। পোশাক-পরিচ্ছেদ, আচার-আচরণ ও ধর্মীয় নিয়মনীতি লঙ্ঘন না করা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণ ও সময়ের অপচয়রোধ করা। মানসিক বা শারীরিক দিক থেকে কোনো উপকার নেই এমন খেলাধুলা ও বিনোদন পরিহার করা। 

লেখক : গবেষক, ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর