হঠাৎ করেই আলোচনা শুরু হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন কি না। আলোচনার উদ্ভব মূলত গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে। তিনি ওই দিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, খালেদা জিয়ার রাজনীতি করতে বাধা নেই। অসুস্থতার গ্রাউন্ডে দুটি শর্তে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি রাজনীতি করতে পারবেন না, এমন কোনো শর্ত সেখানে ছিল না। তবে, আদালতে দন্ডিত হওয়ার কারণে সংবিধানের ৬৬ ধারা মোতাবেক তিনি (খালেদা জিয়া) নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। আইনমন্ত্রীর এ বক্তব্য ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ সব দৈনিকেই প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর এ বক্তব্যের পরেই জনমনে ঔৎসুক্যের সৃষ্টি হয়েছে খালেদা জিয়া আদতেই রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন কি না।
বিষয়টি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ সন্দেহ নেই। কেননা, বিগত চার দশকেরও অধিক সময় ধরে দুজন রাজনৈতিক নেত্রীকে ঘিরে বাংলাদেশের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে; একজন শেখ হাসিনা, অপরজন বেগম খালেদা জিয়া। ফলে তাঁদের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা না থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। খালেদা জিয়া শুধু একটি দলের প্রধানই নন, দেশের জনগণের এক বিশাল অংশের সমর্থনপুষ্ট নন্দিত নেত্রী। তিনি বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী এবং তিনবার ওই পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন। দুবার ছিলেন জাতীয় সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবনে আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, তিনি এ পর্যন্ত যতগুলো সংসদীয় আসনে নির্বাচন করেছেন, তার সবগুলোতেই জয়লাভ করেছেন। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এ নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তাঁকে সময়ে সময়ে নানা বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হয়েছে। সেটা ঘরে-বাইরে দুই ক্ষেত্রেই। দলের বাইরে থেকে যেমন তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছে, তেমনি ভিতর থেকেও তাঁকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা কম হয়নি। তবে আশ্চর্য এক দৃঢ়তায় তিনি সেসব বৈরী পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছেন। উদাহরণ হিসেবে ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সময়ের কথা বলা যায়। সে সময় সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পড়েছিলেন বেগম জিয়া। ‘তত্ত্বাবধায়ক’ খোলস পরিহিত আধা-সামরিক সরকার চেষ্টা করেছিল তাঁকে রাজনীতি থেকে বিতাড়নের। একই সঙ্গে দলের অভ্যন্তরে ‘সংস্কার’ জিগির তুলে তাঁকে মাইনাস করার অপচেষ্টাও চলেছিল বেশ জোরেশোরে। ফখরুদ্দীন-মইন উর সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে দেশ থেকে বের করে দেওয়ারও চেষ্টা করেছিল। তাঁকে সপরিবারে তাঁর পছন্দমতো দেশে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়ারও প্রলোভন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু তাঁর সাফ জবাব ছিল, ‘দেশ ছেড়ে আমি কোথাও যাব না’। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। বাঁচলে এ দেশেই বাঁচব, মরলে এ দেশেই মরব।’ দলের নেতাদের অনেকেই তখন তথাকথিত ‘সংস্কারের চাঁদ’ দেখে আসন্ন ঈদের আনন্দে মাতোয়ারা। তো সেই চরম দুঃসময়েও বেগম খালেদা জিয়া ছিলেন দৃঢ়, ঋজু এবং অবিচল; যেমন থাকেন একজন দক্ষ নাবিক ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ সমুদ্রে নৌযানকে সঠিক পথে অক্ষত অবস্থায় নিয়ে যেতে। সে সময় তাঁর সহযাত্রী ছিলেন দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীরা। তাদের সমর্থনই তাঁকে সাহস জুগিয়েছে, এ কথা বলা নিশ্চয়ই অতিশয়োক্তি হবে না। কিন্তু এখন তিনি সেই অবস্থায় নেই। বয়স, অসুস্থতা, বিরূপ পরিবেশ-পরিস্থিতি আগের সেই দুর্দমনীয় বেগম খালেদা জিয়াকে অনেকটাই ন্যুব্জ করে দিয়েছে। যে কারণে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে আপসহীন ভূমিকার জন্য যিনি পেয়েছিলেন ‘আপসহীন নেত্রী’র অভিধা, সেই তাঁকে শেষ পর্যন্ত আপসের পথেই হাঁটতে হয়েছে। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে দায়ের করা মামলায় আদালত কর্তৃক দন্ডিত হয়ে তিনি কারান্তরিন হন ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। বিএনপির মতো একটি বিশাল রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেত্রীর এই কারাবরণে যে রকম প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা ছিল তা কিন্তু হয়নি। তাঁর দলের দায়িত্বশীল (!) নেতারা নেত্রীর মুক্তির জন্য তেমন কোনো জোরালো ভূমিকা নেননি বা নিতে পারেননি। বড়োসড়ো কোনো আন্দোলন-কর্মসূচি তো দূরের কথা, একটি বড় মিছিলও তারা সংগঠিত করতে পারেননি। দলের শুভানুধ্যায়ীরা শীর্ষ নেতাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে ‘স্বেচ্ছায় কারাবরণের’ মতো কর্মসূচি দেওয়ার পরামর্শ দিলেও তারা তাতে গা করেননি। নেতারা বলেছিলেন, কোনো ধরনের নেতিবাচক কর্মসূচি দিতে নাকি বেগম খালেদা জিয়া নিষেধ করে গেছেন। এ কথার সত্যতা যাচাই করার যেহেতু কোনো উপায় নেই, তাই শুভাকাক্সক্ষীরা চুপ মেরে গেছে। আর নিয়তির ওপর দায় চাপিয়ে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক আন্দোলন বা আইনি লড়াই, কোনোটাতেই যখন বেগম জিয়া মুক্ত হতে পারছিলেন না, তখন অনেকের মনেই শঙ্কা জেগেছিল, তাহলে কি বাকি জীবন তিনি কারান্তরালেই থাকবেন? সেই সঙ্গে এটাও বোঝা গিয়েছিল যে, সরকারের সঙ্গে সমঝোতাই তাঁর মুক্ত হওয়ার একমাত্র উপায়। শেষ পর্যন্ত সে উপায়টিকেই বেছে নিয়েছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পরিবারের পক্ষ থেকে ছোটভাই শামীম এস্কান্দারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২০ সালের ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুগ্রহে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত রেখে তিনি কারাগারের পরিবর্তে বাসায় অবস্থান করে চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ পান। এখনো সেভাবেই থাকছেন। প্রতি ছয় মাস পর পর সে মেয়াদ বাড়ছে। একদা আপসহীন নেত্রীর এই আপসকামিতা অস্বাভাবিক মনে হলেও আর কোনো গত্যন্তর ছিল বলে মনে হয় না। এতে তাঁর মনে আত্মগ্লানির সৃষ্টি হয়েছে কি না জানি না, তবে কোটি কোটি ভক্তের মনে স্বস্তি এনে দিয়েছে তাঁর এ মুক্তি। পাশাপাশি তাঁকে মুক্ত করতে দলীয় নেতাদের ব্যর্থতা ও অকর্মণ্যতা অনেকের কাছেই ক্ষমার অযোগ্য বলে বিবেচিত হয়ে আছে।
অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়া বুঝি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছেন। কিন্তু বাস্তবে যে তা নয়, তার প্রমাণ হঠাৎ করে তাঁর আলোচনায় ফিরে আসা। বর্তমান রাজনৈতিক সমস্যাসংকুল সময়ে তিনি পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন কি না-এ আলোচনা যথেষ্ট গুরুত্ববহ সন্দেহ নেই। কেননা, কাগজপত্রে তিনি এখনো বিএনপি নামে দলটির চেয়ারপারসন। তিনি কারারুদ্ধ হওয়ার পরে তদীয় পুত্র তারেক রহমানকে করা হয়েছে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। আদালত কর্তৃক দন্ডিত এবং বিদেশে অবস্থান সত্ত্বেও তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা কতটা যুক্তিসংগত হয়েছে, তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তাকে ওই পদে অধিষ্ঠানের পথ থেকে অন্তরায় দূর করতে কোনো রকম কাউন্সিল ছাড়াই দলীয় গঠনতন্ত্রের একটি ধারা মুছে ফেলতে হয়েছে; যে ধারায় নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে আদালত কর্তৃক দন্ডিত কোনো ব্যক্তি বিএনপির সদস্য হওয়া বা থাকার অযোগ্য বলে উল্লেখ ছিল। অবশ্য ওই ধারা বহাল থাকলে খালেদা জিয়াও বিএনপির চেয়ারপারসন থাকার যোগ্য থাকতেন কি না সে প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়া যাবে না। যাক সেটা ভিন্ন বিষয়, বিএনপির অভ্যন্তরীণ সমস্যা।আইনমন্ত্রীর পরে সরকারের আরেকজন মন্ত্রীও বলেছেন, খালেদা জিয়া রাজনীতি করতে পারবেন। গত ২২ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, খালেদা জিয়া জেলে থেকেও রাজনীতি করতে পারবেন, দলকে নির্দেশনা দিতে পারবেন। বেগম জিয়ার রাজনীতি নিয়ে সরকারের দুজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর ইতিবাচক মন্তব্য সংগত কারণেই জনমনে প্রশ্নের বুদবুদ সৃষ্টি করেছে। কেননা, গত ২৬ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ সেলিম বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়া রাজনীতি করবেন না’-মর্মে মুচলেকা দিয়ে কারামুক্ত হয়েছেন। তাঁর বক্তব্যের তিন সপ্তাহ পার না হতেই আইনমন্ত্রীর সম্পূর্ণ বিপরীত মন্তব্য তাই সচেতন ব্যক্তিদের চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। তাহলে কী ভিতরে ভিতরে কিছু একটা হচ্ছে? মন্ত্রীদের এসব বক্তব্য খালেদা জিয়া সম্পর্কে সরকারের নমনীয় মনোভাবের প্রতিফলন কি না তা নিয়েও কথা উঠেছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত অফিশিয়াল কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, বিএনপি বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে। তারা নিশ্চিত হতে চাচ্ছে, এটা সরকারের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ, নাকি চলমান আন্দোলনে ছন্দপতন ঘটানোর একটি প্রয়াস। কেউ কেউ অবশ্য মনে করছেন নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দুই পক্ষের মধ্যে সংলাপের যে তাগিদ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন মহল থেকে দেওয়া হচ্ছে, খালেদা জিয়ার পুনরায় রাজনীতিতে সরকারের অনাপত্তির বিষয়টি তার একটি সংকেত হতে পারে। খালেদা জিয়ার স্থায়ী জামিন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার পথে সরকার যদি বাধা সৃষ্টি না করে, তাহলে বিএনপিকে সংলাপে আনার পথ উন্মুক্ত হতে পারে। যদিও বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে ‘মতলববাজি’ বলে অভিহিত করে এক রকম উড়িয়ে দিয়েছেন। এদিকে ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ প্রতিদিনের ‘দলবিচ্ছিন্ন খালেদা জিয়া’ শীর্ষক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বর্তমানে তিনি দল থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন, দলের কোনো কর্মকান্ডের সঙ্গেই তাঁর সম্পৃক্তি নেই, কোনো হস্তক্ষেপও করছেন না। দলের নেতারাও তাঁর সঙ্গে এসব ব্যাপারে কোনো যোগাযোগ করেন না। দল চলছে তাঁর পুত্র তারেক রহমানের একক নির্দেশনায়।
বিদ্যমান পরিপ্রেক্ষিতে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, সরকার চাইলেও বিএনপি তাদের নেত্রীকে পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় দেখতে চাইবে কি না। কেননা, বেগম জিয়া সক্রিয় হলে চেয়ারপারসন হিসেবে তিনিই দলের যাবতীয় নির্দেশনা দেবেন। তখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান পদের আর কোনো কার্যকারিতা থাকবে না। পুত্র তারেক রহমান এবং তার সঙ্গী-সাঙ্গাৎরা তা মেনে নিতে পারবেন কি না তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। তবে দলের সিনিয়র নেতারা চান বেগম জিয়া সক্রিয় হোন। দলটির কেন্দ্রীয় একজন নেতা আলাপচারিতায় এক রকম নিশ্চিত করেই বললেন, খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হচ্ছেন এবং অচিরেই গুলশান অফিসে বসা শুরু করবেন। প্রচার রয়েছে, সিনিয়র নেতাদের বড় একটি অংশের সঙ্গে তারেক রহমানের বনিবনা হচ্ছে না। তার খবরদারি এবং হুকুম জারিকে তারা সব সময় মেনেও নিতে পারেন না, আবার প্রতিবাদও করতে পারেন না। তাই তারা চাচ্ছেন খালেদা জিয়া রাজনীতিতে সক্রিয় হোন। কারও কারও মতে, মন্ত্রীদের উল্লিখিত বক্তব্য সরকারের সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র নেতাদের যোগাযোগেরই ফলশ্রুতি।
বাস্তবিক যদি খালেদা জিয়া পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হন, তাহলে বিএনপিতে নতুন আরেক জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কর্তৃত্ব হারানোর আশঙ্কায় পুত্র মাতার ব্যাপারে কী ধরনের মনোভাব পোষণ করবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। কারও কারও ধারণা, বিএনপিকে সে ধরনের একটি জটিলতায় ফেলার উদ্দেশ্যেই সরকার খালেদা জিয়ার রাজনীতি বিষয়ে উদার মনোভাব দেখানোর চেষ্টা করছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপিতে যে অভ্যন্তরীণ নতুন পোলারাইজেশন হবে, তার প্রতিক্রিয়া কী হবে, সেটাই দেখার বিষয়।
লেখক : সাংবাদিক ও রাজনীতি বিশ্লেষক