সোমবার, ১৩ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

জামায়াতের এজেন্ডা বাংলাদেশে চলবে না

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

জামায়াতের এজেন্ডা বাংলাদেশে চলবে না

মার্চ বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। ১৯৪৮ সাল থেকে দীর্ঘ সংগ্রামের পথ ধরে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সমগ্র মানুষকে একাত্তরের মার্চে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত পর্বে নিয়ে আসেন। স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যা কিছু প্রয়োজন, যত ত্যাগ, যত রক্ত, বাঙালি জাতি তা দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়। একাত্তরের ৭ মার্চ রমনার রেসকোর্স মাঠে সাড়ে সাত কোটি মানুষের হৃদয়ের কথা বঙ্গবন্ধু বলে দিলেন; রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দিব, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ। একাত্তরের ৯ মাসে বাংলাদেশের মানুষ অকাতরে রক্ত ঢেলেছে, কখনো পিছপা হয়নি।  বুক চেতিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের সামনে দাঁড়িয়ে গুলিতে লুটিয়ে পড়ার আগ মুহূর্তে চিৎকার করে বলেছে ‘জয় বাংলা’। এই জয় বাংলার মাহাত্ম্য এত মহান, এত মহীয়ান যে, বাংলার মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিয়া, সুন্নি, আহমদিয়া, ব্রাহ্মণ, মুচি সবাই একই বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাত্র ৯ মাসের মাথায় আমরা পাকিস্তানিদের পরাজিত করতে সক্ষম হই। স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জন্ম হয়। স্বাধীনতা অর্জনই যে চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল না সেটা বঙ্গবন্ধু যেমন ৭ মার্চের ভাষণে উল্লেখ করেছেন, তেমনি বাহাত্তরের সংবিধানেও তা স্পষ্ট করেছেন। বাহাত্তরের সংবিধানের একেবারে শুরুতে প্রস্তাবনায় লেখা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশের জনগণ জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি।’ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের লক্ষ্য জাতীয় মুক্তি। প্রেক্ষাপট তুলে ধরা ও প্রাসঙ্গিকতার জন্য লেখার এ পর্যায়ে একটু পিছনে ফিরে যাব এবং তারপর আবার বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সাম্প্রতিক সময়ে, বিশেষ করে পঞ্চগড়ে ধর্মের নামে যে সংঘাত, সংঘর্ষ, রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে সে কথায় আসব। বঙ্গবন্ধু অসমাপ্ত আত্মজীবনীর ৭৫ নম্বর পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘পাকিস্তান হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। এই ষড়যন্ত্রের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বাঙালি জনগোষ্ঠীকে রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা ও দাবিয়ে রাখা এবং তার মাধ্যমে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সম্পদ লুণ্ঠন করে পশ্চিম পাকিস্তানকে সমৃদ্ধ করা। এই লক্ষ্য অর্জন করার জন্য পাকিস্তানের পাঞ্জাবি শাসকগোষ্ঠী দুটি কৌশল অবলম্বন করে। এর মধ্যে প্রথম ও প্রধান কৌশল ছিল, ইসলাম ধর্মকে রাজনীতির প্রধান অনুষঙ্গ করা, যার মাধ্যমে বাংলা, বাঙালি, বাঙালি সংস্কৃতি ইত্যাদি সবকিছুকে ইসলাম ধর্মের বিরোধী হিসেবে উপস্থিত করা। দ্বিতীয়ত, ক্ষমতার উপঢৌকনের মাধ্যমে বাঙালিদের মধ্য থেকে একশ্রেণির দালাল সৃষ্টি করা, যারা পশ্চিম পাকিস্তানিদের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতে থাকবে নিজেদের ন্যায্য অধিকার, ভাত, কাপড়, খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, চাকরি, কর্মসংস্থান ইত্যাদি সবকিছুর বিনিময়ে হলেও পাকিস্তানকে রক্ষা করতে হবে; তা না হলে পৃথিবীতে ইসলাম ধর্ম থাকবে না। তাদের কথায় ইসলাম ধর্ম আর পাকিস্তান সমার্থক হয়ে যায়। তখন পূর্ব পাকিস্তানে যারা পাঞ্জাবিদের এই রাজনৈতিক ধর্মের অপব্যাখ্যার সঙ্গে যুক্ত হয়ে দালালি করেছে তাদের রাজনৈতিক পরিচয় ছিল, বিভিন্ন নামের মুসলিম লীগ এবং জামায়াতসহ সব ইসলামিস্ট নামধারী দলগুলো। একাত্তরে জামায়াতের আমির আবুল আলা মওদুদী বলেন, ‘পাকিস্তানের নিরাপত্তা হচ্ছে গোটা বিশ্বের ইসলামের নিরাপত্তা’ (দৈনিক সংগ্রাম- ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১)। মওদুদীর প্রধান শিষ্য, গোলাম আযম বলেন, পাকিস্তান ও ইসলামকে জামায়াত এক ও অভিন্ন মনে করে (দৈনিক সংগ্রাম ৬ সেপ্টেম্বর-১৯৭১)। এহেন জামায়াত ও তার গুরু আবুল আলা মওদুদীর হুকুমে জামায়াতের ক্যাডার বাহিনী ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানের লাহোরে আহমদীয় সম্প্রদায়ের ওপর পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞ চালায়। তাতে প্রায় ৫০ হাজার আহমদীয় সম্প্রদায়ের মানুষ নিহত হয়। জামায়াতের দাবি, তারা মুসলমান নয়, তারা মুসলমান পরিচয় ধারণ করতে পারবে না। তখনো পাকিস্তান পরিপূর্ণ ধর্মতন্ত্রের রাষ্ট্রে পরিণত হয়নি। সেই হত্যাযজ্ঞ থামাতে ১৯৫৩ সালে পাকিস্তানে প্রথমবারের মতো শুধু লাহোরে সামরিক আইন জারি করা হয়। হত্যা মামলায় মওদুদীর ফাঁসির আদেশ হয়। কিন্তু সৌদি আরবের হস্তক্ষেপে সেবার মওদুদী বেঁচে যান। হত্যাযজ্ঞের তদন্তের জন্য পাকিস্তান সরকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ মুনিরের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেছিল। মোহাম্মদ মুনির ওই সময়ে পাকিস্তানের সব ইসলামিস্ট দল, গোষ্ঠী, সেক্টর ও শ্রেণির নেতৃস্থানীয় সব মাওলানা ও আলেমকে ডেকেছিলেন। সবাইকে একসঙ্গে বসিয়ে তিনি তাদের কাছে দুটি প্রশ্ন করেন,  মুসলমান কে ও ইসলাম কী। বিচারপতি মুনির বলেছিলেন, আপনারা সবাই একমত হয়ে যেটা বলবেন আমি সেটাই গ্রহণ করব। কিছু সময়ের মধ্যে বিচারপতি মুনির দেখলেন, তারা কেউ কারও সঙ্গে একমত হচ্ছে না, বরং হট্টগোলের মধ্য দিয়ে একপর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেল। বিচারপতি মুনির বিরক্ত হয়ে পুলিশ ডেকে সবাইকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেন। সেবারের মতো আহমদীয় সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করার জামায়াতি চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু ১৯৭৪ সালে এসে জামায়াত সফল হয়। সে সময়ে পাকিস্তানে পিপলস পার্টি ক্ষমতায় এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রধানমন্ত্রী। জামায়াত ও সমমনা উগ্রপন্থি ইসলামিস্ট গোষ্ঠী আহমদীয় সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে আবার মাঠে নামে। পশ্চিমা আধুনিকতায় অভ্যস্ত জুলফিকার আলী ভুট্টো নিজে ধর্মকর্মের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। কিন্তু ১৯৫৩ সালের ঘটনা এবং একই সঙ্গে জামায়াতসহ ইসলামিস্ট গোষ্ঠীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর গোয়েন্দা সংস্থার সুসম্পর্কের কথা ভুট্টো জানতেন। তিনি জানতেন, মোল্লা ও মিলিটারি এক হয়ে ক্ষিপ্ত হলে পাকিস্তানে তার পক্ষে ক্ষমতায় থাকা সম্ভব হবে না। সুতরাং ধর্ম রক্ষা নয়, ক্ষমতা রক্ষার জন্য জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৪ সালে আহমদীয় সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা এবং সেই অনুসারে সংবিধান সংশোধন করেন। কিন্তু তোষণ নীতি কাজে লাগেনি। মাত্র তিন বছরের মাথায় ওই একই জামায়াত এবং মোল্লা ও মিলিটারি এক হয়ে শুধু ক্ষমতাচ্যুত নয়, জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসিতেও ঝুলাল। এটা ছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরের ঘটনা। কিন্তু ১৯৫৩ সালে ধর্মের নামে আহমদীয় সম্প্রদায়ের প্রায় ৫০ হাজার মানুষকে হত্যা এবং ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যত অধর্মের কাজ ও বাঙালিদের শোষণ নির্যাতন করা হয়েছে, সেসব বঙ্গবন্ধু শুধু স্বচক্ষে দেখেছেন তা নয়, তার চরম তিক্ত দহনে নিজে সমৃদ্ধ হয়েছেন। তাই স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই বঙ্গবন্ধু ধর্মের নামে রাজনীতি সাংবিধানিকভাবে বন্ধ করে দিলেন। ধর্ম তার নিজস্ব মহিমায় থাকবে, আর রাজনীতি তার স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে সব নাগরিকের শান্তি, নিরাপত্তা ও কল্যাণে স্বাধীনভাবে কাজ করবে। কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, পক্ষ ও দল রাষ্ট্র এবং রাজনীতির বিষয়ে ধর্মকে আনতে পারবে না।  কেউ কারও প্রতি বিদ্বেষ ও হিংসা ছড়াতে পারবে না। সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের মানুষ নিজ নিজ বিশ্বাস অনুসারে ধর্ম পালন ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান করবে, কেউ বাধা দিতে পারবে না। সব ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এই স্বাধীনতা রক্ষায় রাষ্ট্র সর্বদা অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় থাকবে। কে হিন্দু, কে মুসলমান, কে খ্রিস্টান, আর কে তা নয়, এই সংজ্ঞা দেওয়ার অধিকার কারও থাকবে না, এমন কী রাষ্ট্রেরও নয়। অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর নির্ধারিত জাতীয় মুক্তির সামগ্রিকতার মধ্যে এটাই ছিল অন্যতম প্রধান একটি বৈশিষ্ট্য ও অনুষঙ্গ। বঙ্গবন্ধু যত দিন বেঁচে ছিলেন, ততদিন এটা নিয়ে কোনো পক্ষ থেকেই কখনো কোনো কথা ওঠেনি, কেউ বিভ্রান্তি ছড়ানোর সাহস পায়নি। কিন্তু পঁচাত্তরের জাতীয় ট্র্যাজেডির পর সর্বময় ক্ষমতার অধিকার হয়ে  প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সামরিক আদেশ দ্বারা বাহাত্তরের সংবিধান থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সংবলিত সবকিছু বাতিলের সঙ্গে ধর্মীয় রাজনীতি বন্ধ রাখার যেসব বিধিবিধান ছিল তাও উঠিয়ে দেন। তার ফলে এতদিন নিষিদ্ধ থাকা জামায়াত ও নেজামে ইসলামসহ সব ধর্মীয় গোষ্ঠী বাংলাদেশে আবার রাজনীতি করার সুযোগ পেয়ে যায়। তারা ভিন্ন নামে ও প্ল্যাটফরমে রাজনীতি করলেও কতগুলো জায়গায় তারা সবাই এক ও কঠিনভাবে ঐক্যবদ্ধ।  প্রথমত, তারা সবাই একাত্তরে পাকিস্তানের সব রকম হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞের সহযোগী ছিল এবং এখনো তারা পাকিস্তান ও ইসলাম ধর্মকে এক ও অভিন্ন মনে করে। যে কথা জামায়াতের মওদুদী ও গোলাম আযম একাত্তরে প্রকাশ্যে বলেছে। দ্বিতীয়ত, তারা জাতির পিতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান দেখায় না, মানে না, মুক্তিযুদ্ধের ন্যায্যতাকে তারা এখনো স্বীকার করে না, আর সে কারণেই জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতকে সম্মান দেখায় না। তৃতীয়ত, তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানি স্টাইলের একটা ধর্মতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানাতে বদ্ধপরিকর। এরা কৌশলগত কারণে ও নেতৃত্বের দ্বন্দ্বের জন্য আলাদা নামে ও প্ল্যাটফরম থেকে একই এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজ করছে। ইসলামী আন্দোলন নামের দলটি এখন সবাইকে ছাড়িয়ে সর্বত্র সামনের সারিতে থাকছে। আর হেফাজত তো ২০১০ সালে জামায়াতের বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়। তারা জামায়াতি নেতাদের যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে বাঁচাতে শুধু বিচারের বিরোধিতা করে ক্ষান্ত হয়নি, গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে রীতিমতো মিথ্যাচার ও কুৎসা রটিয়েছে। হেফাজতের ১৩ দফা বাংলাদেশের মৃত্যু সনদের সমান। ওই সম্মিলিত গোষ্ঠী বাংলাদেশের নাগরিক অধিকারসহ সব সুবিধার ওপর ভর করে রাষ্ট্রের মৌলিক আদর্শের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। তারা রাষ্ট্র ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে সর্বশেষ গত ৩-৪ মার্চে পঞ্চগড় জেলায় আহমদীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে। তাতে দুজন নিহতসহ আহত হয়েছেন আরও অনেকে। আহমদীয় সম্প্রদায়ের মানুষের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন নামের সংগঠনটি এই আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছে। পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি, ইমাম-মোয়াজ্জিন কল্যাণ সমিতি, কওমি ওলামা পরিষদ, জাতীয় ওলামা মাশায়েক পরিষদ, সম্মিলিত খতমে নবুয়ত সংরক্ষণ পরিষদ, তারা সবাই আহমদীয় সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণে অংশ নেয়। নিশ্চিত করে বলা যায়, উপরোক্ত সংগঠনসমূহের নামের আড়ালে জামায়াত, হেফাজতসহ অন্যান্য সব উগ্রবাদী ইসলামিস্ট দল রয়েছে। পঞ্চগড়ে আলোচ্য, আহমদীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ওপর এবার প্রথম আক্রমণ হয় ৩ মার্চ শুক্রবার। ৪ মার্চ আবার আক্রমণ হয়। সংগত কারণেই প্রশ্ন ওঠে রাষ্ট্র শক্তি, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কেন আহমদীয় সম্প্রদায়ের বাড়িঘর রক্ষা করতে পারল না। তাহলে কি ধরে নিতে হবে ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠী আজ রাষ্ট্র শক্তির চেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। প্রত্যেকটি মানুষ ও সম্প্রদায়ের জন্য নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম-কর্ম পালন ও অনুষ্ঠানাদি করার অধিকার নিশ্চিত করার সাংবিধানিক দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে। মানুষের এই স্বাধীন অধিকার যারা কেড়ে নিতে চায় তারা রাষ্ট্রদ্রোহী। রাষ্ট্র শক্তির সঙ্গে বৃহত্তর মানুষকে সর্বশক্তি প্রয়োগ করে তাদের দমন করা উচিত। আহমদীয় সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবিতে সফল হলে কিছুদিন পরেই তারা বলবে শিয়া সম্প্রদায়ের মানুষও মুসলমান নয়। তারপর তারা বলবে বাংলাদেশকে ইসলামিক রাষ্ট্র ঘোষণা করতে হবে। তারা ইতোমধ্যে বলেছে, বাংলাদেশ মুসলমানদের রাষ্ট্র। তাই যদি হয় তাহলে বাংলাদেশ বলতে আর কিছু থাকবে না। স্বাধীনতার ৫২ বছরের মাথায় এসে একাত্তরের মার্চ মাসের গৌরবোজ্জ্বল ঘটনাসমূহকে আমরা স্মরণ করছি। মার্চের শক্তি বলে আমরা একাত্তরে পাকিস্তানিদের পরাজিত করেছি। কিন্তু ৩-৪ মার্চে পঞ্চগড়ের ঘটনা মার্চ মাসের মর্যাদাকে ম্লান করে দিয়েছে। আহমদীয় সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণার দাবি জামায়াতের এজেন্ডা, পাকিস্তান আমল থেকে তারা এই দাবি করে আসছে। কিন্তু মার্চ মাসের গৌরবের সঙ্গে জামায়াতের এজেন্ডা যায় না। তাই মার্চ মাসের গৌরব, স্বাধীনতার মাহাত্ম্য ও বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক আদর্শ রক্ষায় সমগ্র বাঙালি জাতিকে আবার একাত্তরের মার্চের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে জামায়াতি এজেন্ডা বাস্তবায়নের সব চেষ্টাকে রুখে দিতে হবে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক

[email protected]

সর্বশেষ খবর