॥ দুই॥
১৯৭২ সালে বাংলাদেশ হাই কোর্টে প্রধান বিচারপতি বাদে ১০ জন বিচারপতি, একজন অ্যাটর্নি জেনারেল, একজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, দুজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও চারজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ছিলেন। আমার মনে হয় এর পাশাপাশি ২০২৩ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও আইন অফিসারের সংখ্যা উল্লেখ করলে আমাদের সার্বিক উন্নতি আমরা বুঝতে পারব। ২০২৩ সালের ৩০ মার্চ বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বাদে আপিল বিভাগে সাতজন বিচারপতি এবং হাই কোর্ট বিভাগে ৯৫ জন বিচারপতি আছেন। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল পদে একজন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল পদে তিনজন, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ৬২ জন এবং সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ১৪৮ জন তাদের কর্তব্য পালন করে যাচ্ছেন।
১৯৭২ সালের ৩১ ডিসেম্বর মোট ২০ হাজার ৫৬৭টি মামলা হাই কোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ছিল। ওই সময়ে হাই কোর্টে ১০ জন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। সে বিবেচনায় একজন বিচারপতির বিপরীতে ২ হাজার ৫৬টি মামলা বিচারাধীন ছিল। কিন্তু ২০২১ সালে ৩১ ডিসেম্বর হাই কোর্ট বিভাগে মোট ৫ লাখ ১২ হাজার ৫৭৬টি মামলা বিচারাধীন ছিল। ২০২১ সালে হাই কোর্ট বিভাগে ৯২ জন বিচারপতি কর্মরত ছিলেন। সে বিবেচনায় ২০২১ সালে একজন বিচারপতির বিপরীতে ৫ হাজার ৫৭১টি মামলা বিচারাধীন ছিল। যে কোনো বিবেচনায় এটি অনেক বেশি।একজন বিচারপ্রার্থী দ্রুততম সময়ে উচ্চ আদালত থেকে তার মামলার সিদ্ধান্ত পাবেন, এটি মানুষের সহজাত আকাক্সক্ষা। আমরা গণমানুষের এই আকাক্সক্ষা কতটা পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি? আজ যেদিন এ লেখা লিখছি সেদিন অর্থাৎ ১২.০৩.২০২৩ ইং তারিখে হাই কোর্ট বিভাগের কজলিস্ট পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে ১৯৮৮ সালের ফৌজদারি আপিল, ১৯৯১ সালের দেওয়ানি রিভিশন ও ১৯৯৫ সালের দেওয়ানি ফার্স্ট আপিল পেন্ডিং আছে। অর্থাৎ এ মামলাগুলো যথাক্রমে ৩৫, ৩২ ও ২৮ বছর যাবৎ পেন্ডিং আছে এবং এর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।
হাই কোর্টের বিচারপতি এবং আইনজীবীরা কাজ করেন না এমন নয় অথবা বিষয়টি এমন নয় যে বিচারকদের গাফিলতির জন্য বিপুল পরিমাণ মামলা বিচারের অপেক্ষায় পড়ে আছে। কোনো পরিসংখ্যানে ২০২০ ও ২০২১ সাল উল্লেখ করতে চাই না, কারণ ওই দুটি বছর করোনাভাইরাসের জন্য স্বাভাবিকভাবে কোর্টের কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। ২০১৮ সালে হাই কোর্ট বিভাগে মোট ৪৯ হাজার ৩৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ওই বছর ৯৫ জন বিচারপতি হাই কোর্ট বিভাগে কর্মরত থাকায় গড়ে একজন বিচারপতি ৫১৬টি করে মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। পরিসংখ্যানের দিক থেকে এটি কম নয়। কিন্তু এত নিষ্পত্তির পরেও বিপুল পরিমাণ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় জমে আছে।
মূলত বিচারপতির সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় কম এবং নিষ্পত্তিকৃত মামলার তুলনায় প্রচুর নতুন মামলা হাই কোর্টে দাখিল হওয়ার কারণে অনেক নিষ্পত্তি করেও পেন্ডিং মামলার জট কমানো যাচ্ছে না। ২০১৮ সালে ৮৮ হাজার ৮০১টি মামলা হাই কোর্ট বিভাগে দায়ের হয়েছিল, ওই বছর নিষ্পত্তি হয়েছিল ৪৯ হাজার ৫৩টি মামলা। হাই কোর্টে বেশি বেশি মামলা দায়েরের অনেক কারণ আছে। ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো হওয়ায় মানুষ তথা মামলার পক্ষগণ সহজেই ঢাকায় এসে মামলা দায়ের করতে পারছে। সামাজিক অস্থিরতার কারণে মানুষের মধ্যে ধৈর্য ও সহনশীলতা কমে যাওয়ায় নিম্ন আদালতের সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ পক্ষগণ পরাজয় মেনে নিতে চায় না, তারা হাই কোর্টে মামলা করে ফলাফল অনুকূলে নেওয়ার চেষ্টা করে। আগে এমন একটি সময় ছিল, যখন হাই কোর্টের আইনজীবীরা ঢাকায়ই থাকতেন, তাদের সঙ্গে এলাকার বা লোকাল বারের তেমন কোনো যোগাযোগ ছিল না। কিন্তু বর্তমানে যারা হাই কোর্টে প্র্যাকটিস করেন তাদের অনেকেই নিয়মিত এলাকায় যান এবং লোকাল বারের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রাখেন। ফলে মামলার পক্ষগণ সহজেই হাই কোর্টের অ্যাডভোকেটদের নৈকট্য লাভের সুযোগ পাচ্ছেন এবং ফলশ্রুতিতে সহজেই হাই কোর্টে মামলা দায়ের করতে পারছেন। আগে হাই কোর্টে অ্যাডভোকেটের সংখ্যা অনেক কম ছিল, কিন্তু বর্তমানে হাই কোর্টে প্রায় ১৩ হাজার অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্ত আছেন এবং তাদের মধ্যে অনেকেই নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন। যেহেতু অনেক অ্যাডভোকেট এখানে কাজ করেন তাই মামলার পক্ষগণ অল্প খরচে মামলা করার সুযোগ পাচ্ছে এবং এ কারণে মামলা দায়েরের সংখ্যা বাড়ছে।
১৯৮১ সালে আমি যখন বিচার বিভাগে যোগদান করি তখন বিচার বিভাগে ১৮০ জন বিচারক কর্মরত ছিলেন। যদি সবার জন্য একটি কোর্ট ধরি সেক্ষেত্রে ওই সময় ১৮০টি কোর্ট ছিল। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন আদালতে কোর্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি ১৯৮১ সালে মুন্সেফ পদে বরিশালে যোগদান করি। ১৯৮২ সালে ঢাকায় জেলা জজসহ জেলা জজ পদমর্যাদার মোট চারটি কোর্ট ছিল। অপর তিনটি কোর্ট হলো- বিভাগীয় স্পেশাল জজ, শ্রম আদালত ও প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল। উল্লেখ্য, ১৯৮২ সালে ঢাকা জেলার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ মহাকুমা অন্তর্ভুক্ত ছিল। মহাকুমাতে তখন জেলা জজ ছিল না। শুধু মুন্সেফ কোর্ট ও সাবজজ কোর্ট ছিল। বৃহত্তর জেলার সাবেক মহাকুমাগুলোতে বর্তমানে জেলা জজ পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তা কর্মরত আছেন। ঢাকা জেলায় বর্তমানে ঢাকার জেলা জজসহ জেলা জজ পদমর্যাদার ৪৬ জন জেলা জজ বিভিন্ন কোর্টের দায়িত্বে আছেন। তেমনি বরিশালে ১৯৮২ সালে একজন জেলা জজ ছিলেন। বর্তমানে সেখানে জেলা জজ পদমর্যাদার ১০ জন কর্মকর্তা বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন। একইভাবে সিলেটে জেলা জজসহ জেলা জজ পদমর্যাদার নয়জন কর্মকর্তা বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন।
নিম্ন আদালতে বর্তমানে ১ হাজার ৮১০টি কোর্ট চালু আছে। যার মধ্যে জেলা জজ ও সম পদপর্যাদার কোর্টের সংখ্যা ২৫৯টি এবং অতিরিক্ত জেলা জজের কোর্টের সংখ্যা ১১৯টি। জেলা জজ ও সম পদমর্যাদার কোর্ট এবং অতিরিক্ত জেলা জজগণের কোর্টের রায় ও আদেশের বিরুদ্ধে মামলা হাই কোর্টে করতে হয়। নিম্ন আদালতে কোর্টের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ায় তাদের নিষ্পত্তিও বৃদ্ধি পেয়েছে, ফলশ্রুতিতে হাই কোর্টে মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকারি অফিসগুলো থেকে বিভিন্ন সময় যেসব আদেশ প্রদান করা হয়, অনেক সময়ই সেগুলো আইননির্ভর নয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ ওইসব আদেশের বিরুদ্ধে সহজেই রিট মামলা দায়ের করে প্রতিকারের আশায়। সর্বোপরি বর্তমানে বাংলাদেশে জনসংখ্যা ১৭ কোটির চেয়ে একটু বেশি। অথচ ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর একাধিক ভাষণে জনসংখ্যার কথা বলেছেন সাড়ে ৭ কোটি। বর্তমানে এ বিপুল পরিমাণ জনসংখার জন্য স্বাভাবিকভাবেই মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এসবের চেয়েও সর্বশেষ ও মূল কারণ হিসেবে আমার কাছে মনে হয় সুপ্রিম কোর্টের ওপর মানুষের সহজাত আস্থার জন্য বিচারপ্রার্থী মানুষ সুপ্রিম কোর্টে মামলা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে এবং এভাবে অনেক কারণের জন্য সুপ্রিম কোর্টে মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সুপ্রিম কোর্টে মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এটি বাস্তব সত্য। এ মামলা নিষ্পত্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিগণ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে শুধু বিচারপতিগণ ইচ্ছা করলেই অধিক হারে নিষ্পত্তি করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে অ্যাডভোকেটদের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। হাই কোর্ট বিভাগে দুই ধরনের বেঞ্চ থাকে। একটি মোশন বেঞ্চ অপরটি শুনানির বেঞ্চ। মোশন বেঞ্চে মূলত মামলা ফাইলিং করে শুনানি করতে হয়। সব মোশন বেঞ্চই মোশন কেসে আদেশ প্রদান বাদেও তার এখতিয়ারাধীন মামলার শুনানি ও নিষ্পত্তি করতে পারেন। কিন্তু ফৌজদারি ও রিট মোশন বেঞ্চগুলো মোশন শুনানি করার পর হাতে খুব কম সময় পান মূল মামলার শুনানি করার জন্য। তাই ইচ্ছা করলেও সময়ের অভাবে মোশন বেঞ্চগুলো অধিকহারে মূল মামলার শুনানি গ্রহণ করতে পারে না। তবে অনেক ব্যস্ততার মধ্যেও মোশন বেঞ্চগুলো শুনানির জন্য মামলা ফিক্স করে এবং শুনানি করে থাকে।
কিন্তু যে বেঞ্চগুলো শুনানির জন্য নির্ধারিত সে বেঞ্চগুলোকে আমরা সাধারণত হিয়ারিং বেঞ্চ বলি। সাধারণভাবে হিয়ারিং বেঞ্চগুলো তাদের সময়কে পরিপূর্ণভাবে কাজে লাগাতে পারে না। হাই কোর্টে যেসব মামলা বিচারাধীন সেগুলোতে ইতোপূর্বে ২/১টি রায় হয়েছে। সুতরাং অ্যাডভোকেটরা শুনানিতে অংশগ্রহণ করলে বিচারকের পক্ষে মামলাটি সহজে নিষ্পত্তি করা সম্ভব। এটি ঠিক যে একটি মামলায় একজন বিচারপতি আইনজীবীর অনুপস্থিতিতে নথি দেখে নিষ্পত্তি করতে পারেন। কিন্তু বাস্তবে এটি করা কঠিন। কারণ নিম্ন আদালতের প্লিডিংস দেখতে হবে। তারপর রায় ও অন্যান্য সাক্ষ্য যদি থাকে তাও তাকে শুনতে বা দেখতে হবে। আইজীবীদের উপস্থিতি বাদে বিচারকের একার পক্ষে এগুলো দেখা বা পড়া হয়ে ওঠে না। কিন্তু মজার কথা হলো যাদের উপস্থিতি বাদে শুনানি করা সম্ভব নয় তাদের অর্থাৎ আইনজীবীদের হিয়ারিং বেঞ্চে বিশেষ করে ফৌজদারি মামলার শুনানির সময় পাওয়া যায় না। হাই কোর্ট বিভাগের মোশন বেঞ্চগুলোর ভিতরে অ্যাডভোকেটদের জন্য নির্ধারিত আসন পাওয়া কষ্টকর, অর্থাৎ আপনি বসার একটু জায়গা পাবেন না, এমনকি ভোরবেলা সেখানে ঢুকতেও কষ্ট হয়। কিন্তু হিয়ারিং বেঞ্চে বিশেষ করে দেওয়ানি আপিল ও ফৌজদারি মামলার হিয়ারিং বেঞ্চে কোর্ট শুরুর সময় দু-চারজন আইনজীবী উপস্থিত থাকলেও তারা সময় নিয়ে অন্যত্র চলে যান, এরপরই বেশির ভাগ হিয়ারিং বেঞ্চগুলোতে আইনজীবী পাওয়া যায় না। ফলে হিয়ারিং বেঞ্চগুলো কাক্সিক্ষত পর্যায়ে মামলা শুনানি করতে পারে না।
হিয়ারিং বেঞ্চে বিশেষ করে ফৌজদারি মামলার বেঞ্চগুলোতে মামলা শুনানি করার ব্যাপারে অ্যাডভোকেটদের এই যে আগ্রহের অভাব, এটি কি কেবল তার জন্য? মামলা দায়েরের পর শুনানি করার বিষয়ে পক্ষদের আগ্রহ বিভিন্ন কারণে কমে যায়। হিয়ারিং বেঞ্চে শুনানির সময় আইনজীবীদের অনুপস্থিত থাকার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, আইনজীবীরা মামলা দায়েরে এবং মোশন কেসে শুনানিতে বেশি লাভবান হন, তাই ওই মামলাগুলোর ব্যাপারে তারা যতটা সিরিয়াস থাকেন অন্য মামলার ব্যাপারে ততটা সিরিয়াস থাকেন না।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন ওঠে, একজন বিচারপ্রার্থী একটি মামলা একজন আইনজীবীর মাধ্যমে হাই কোর্ট বিভাগে দায়েরের পর শুনানির সময় আগ্রহহীন হলেন কেন? এর অনেক কারণ আছে। তবে মোটা দাগের কারণগুলো নিয়ে সংক্ষেপে দু-একটি কথা বলা যেতে পারে। প্রথমেই দেওয়ানি মামলার বিষয়ে ধরা যাক। সাধারণত পরাজিত পক্ষ যুগ্ম জেলা জজের রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল দায়ের করে। এ ছাড়াও জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজগণ আপিলে যে রায় প্রদান করেন তার বিরুদ্ধে হাই কোর্ট বিভাগে রিভিশন দায়ের করতে হয়। এ ছাড়া নিম্ন আদালতের বেশ কিছু আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন করা যায়। আপিল বা রিভিশন যেটিই দায়ের করা হোক না কেন খেয়াল রাখতে হবে নিম্ন আদালতে যে পক্ষ কাক্সিক্ষত প্রতিকার পেতে ব্যর্থ হয়েছে, সেই পক্ষ হাই কোর্ট বিভাগে এসেছে। সে আপিল বা রিভিশন যাই দায়ের করুক না কেন, দায়ের করে ক্ষেত্রমত স্টে বা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার প্রার্থনা করে এবং বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দরখাস্তকারী বা আপিলকারী স্টে বা অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ পেয়ে থাকে। অর্থাৎ হাই কোর্টে মামলা দায়েরের পর নিম্ন আদালতে বিজয়ী পক্ষের চেয়ে তার (পরাজিত পক্ষ) অবস্থান ভালো হয়ে যায়। এই ভালো অবস্থানের কারণে আপিলকারী বা রিভিশনকারী সহসা আর দেওয়ানি মামলাগুলো শুনানি করতে চায় না। যেহেতু পক্ষগণের কোনো তাড়া বা গরজ থাকে না, তাই অ্যাডভোকেটরাও মামলা করার কোনো তাগিদ অনুভব করে না। এরকম দেওয়ানি মামলা শুনানি করার তাগিদ অনুভব করার জন্য আমার মনে হয় মামলা দায়েরের পর যে অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিকার দেওয়া হয় তার সর্বোচ্চ একটি সময়সীমা থাকা প্রয়োজন। হতে পারে সেটি ৫, ৭ বা ১০ বছর। অর্থাৎ ওই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে মূল মামলার শুনানি না করলে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের কার্যকারিতা লোপ পাবে। এরকম একটি বাধ্যবাধকতা থাকলে ওই সময়সীমার মধ্যে মামলা দায়েরকারী শুনানি করতে বাধ্য থাকবে।
উক্তরূপ একটি বাধ্যবাধকতা না থাকলে দেওয়ানি মামলার পক্ষগণকে শুনানিমুখী করা যাবে না। বাস্তবিকতার আলোকে আপনি দেখতে পাবেন যতগুলো রিভিশন ও আপিল হাই কোর্টে শুনানির জন্য ফিক্স হয় তার শতকরা ৮০ ভাগ মামলা প্রতিপক্ষ অর্থাৎ নিম্ন আদালতে যে বিজয়ী হয়েছিল তার পদক্ষেপের জন্য ফিক্স হয়। পরাজিত পক্ষ হাই কোর্ট বিভাগে মামলা দায়ের করার পর আবার নতুন করে আর একটি সিদ্ধান্ত তার বিপক্ষে যাক, সে ওই রকম কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না, তাই মামলার শুনানি যতদূর সম্ভব সে এড়িয়ে চলতে চায়।
♦ লেখক : বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি