বুধবার, ২৪ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
স্থাপনা

কদম রসুল (সা.)

মোহাম্মদ সোহেল

কদম রসুল (সা.)

মুসলমানদের কাছে রসুল (সা.)-এর পদচিহ্ন সবসময়েই পবিত্র হিসেবে পরিগণিত। রসুল (সা.)-এর প্রাচীনতম পদচিহ্ন সংবলিত সৌধটি হচ্ছে জেরুজালেমের ‘ডোম অব দি রক’। বলা হয়ে থাকে, এখান থেকে মহানবী (সা.) মিরাজে গমন করেছিলেন। মিরাজে রওনা হওয়ার পূর্বে তাঁর পা পাথরে ছাপ সৃষ্টি করেছিল। এ ধরনের আরও কিছু পদচিহ্ন সংরক্ষিত আছে দামেস্কের মসজিদ-ই-আকদাম-এ, যেখানে মুসা নবী (আ.)-এর পবিত্র পদচিহ্ন আছে বলে ধারণা করা হয়। আরও রয়েছে, মিসরের কায়রো, তুরস্কের ইস্তাম্বুলে এবং সিরিয়ার দামেস্কে। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে বেশ কয়েকটি কদম রসুল রয়েছে। যেমন, দিল্লি ও বাহরাইচ (উত্তর প্রদেশ), আহমদাবাদ (গুজরাট), কটক (ওড়িশা) এবং পশ্চিম বাংলার গৌড় ও মুর্শিদাবাদ প্রভৃতি অঞ্চলে। বাংলাদেশে নবীগঞ্জের কদম রসুল (নারায়ণগঞ্জ জেলা) এবং চট্টগ্রামে কদম মোবারক (রসুল নগর) এবং বাগিচা হাট মসজিদ, বিখ্যাত।

বাংলার প্রাচীনতম কদম রসুল কমপ্লেক্সটি গৌড়ে অবস্থিত। এটি ১৫৩০-১৫৩১ খ্রিস্টাব্দে সুলতান  নুসরত শাহ নির্মাণ করেন। জনশ্রুতিমতে তেরো শতকের সাধক জালালউদ্দীন তাবরিজি (রহ.)-এর পান্ডুয়ায় ইবাদতখানায় এ পদচিহ্ন সংবলিত পাথরটি পাওয়া যায়। নুসরাত শাহের পিতা সুলতান  হোসেন শাহ (১৪৯৪-১৫১৯) এ পাথরটি গৌড়ে নিয়ে এসেছিলেন। গৌড়ের কদম রসুল সৌধটি বাংলার আঞ্চলিক স্থাপত্যিক রীতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ। সুলতানি যুগে এ রীতি পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করেছিল। কুঁড়েঘর আকৃতির এ সৌধের মাঝে রয়েছে বর্গাকৃতির একটি কক্ষ, যার তিনদিকে রয়েছে বারান্দা। কেন্দ্রীয় গম্বুজ কক্ষটিতে পদচিহ্ন সংবলিত কালো পাথরটি রক্ষিত আছে।

মুর্শিদাবাদের কদম শরিফ কমপ্লেক্সটি ১৭৮১ খ্রিস্টাব্দে মীর জাফরের প্রধান খোজা বসন্ত আলী খান কর্তৃক নির্মিত একটি পুরাতন মসজিদের সঙ্গে সংযুক্ত। নওয়াব সিরাজউদ্দৌলার সময় (১৭৫৬-১৭৫৭) গৌড় থেকে পাথরটি বাংলার শেষ রাজধানী মুর্শিদাবাদে নিয়ে আসা হয়েছিল। কিন্তু মীর জাফর সেটিকে পুনরায় গৌড়ে ফিরিয়ে নিয়ে যান। তবে কদম শরিফ কমপ্লেক্সে রয়েছে নওয়াব পরিবারের সদস্যদের কবর, একটি অতিথিশালা এবং অন্যান্য বেশ কয়েকটি অবকাঠামোগত নিদর্শন। কদম শরিফ মসজিদটি তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এবং গম্বুজে রয়েছে প্যাঁচানো নকশা। মসজিদের চার কোনে রয়েছে চারটি অষ্টভূজাকৃতির কর্নার টাওয়ার। মসজিদের পূর্ব দিকের দেয়ালে রয়েছে তিনটি প্রবেশদ্বার। অভ্যন্তরের কিবলায় রয়েছে তিনটি মিহরাব এবং মধ্যের মিহরাবটি অপেক্ষাকৃত বড়। কক্ষের অভ্যন্তরের দক্ষিণ দেয়ালে আট খন্ড শিলালিপি সংস্থাপিত অবস্থায় পাওয়া গেছে। আরবি এবং ফারসির সংমিশ্রণে রচিত এই লিপি গৌড় ও পান্ডুয়ার ধ্বংসাবশেষ থেকে সংগৃহীত হয়েছিল এবং এতে কোরানের বাণী উৎকীর্ণ।

বাংলাদেশে সুপরিচিত কদম রসুলটি নারায়ণগঞ্জের বিপরীতে শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত নবীগঞ্জে। সতেরো শতকের প্রারম্ভে মির্জা নাথান কর্তৃক প্রণীত বাহারিস্তান-ই-গায়েবির বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, সম্রাট আকবর এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী আফগান নেতা মাসুম খান কাবুলী এ পদচিহ্ন সংবলিত পাথরটি একজন আরব বণিকের কাছ থেকে ক্রয় করেছিলেন।

এর কেন্দ্রে রয়েছে একটি মসজিদ এবং দুদিকে দুটি কক্ষ। এর একটিতে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এবং অন্যটিতে বারো শতকের (বাগদাদের) সাধক আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর পদচিহ্ন রয়েছে। সম্পূর্ণ কদম রসুল কমপ্লেক্সটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে মসজিদ, মাদরাসা, কবরস্থান প্রভৃতি অবকাঠামো। এটি কদম মোবারক নামেই সুপরিচিত। চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার অন্তর্গত বাগিচা হাটে আরেকটি কদম রসুল রয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর