দেশের ক্রান্তিকাল চলছে। ইতোমধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে (ক্ষমতাসীন দলও ছিল) এখন পর্যন্ত ৩ শতাধিক (মতান্তরে ৪ শতাধিক) মানুষের মৃত্যু ঘটেছে। তাদের মধ্যে শিশু, ছাত্র, গৃহবধূ, পুলিশসহ সাধারণ মানুষ রয়েছে; যা অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং যা আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলের কাছে অনাকাক্সিক্ষত। সমস্যাটি সৃষ্টি হয়েছে শাসনগত ত্রুটির কারণে। সাংবিধানিক ত্রুটির কারণেই প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক শাসন তথা এক ব্যক্তির শাসন পরিচালিত হয়ে আসছে। বিদ্যমান পদ্ধতি বজায় থাকলে আমরা আগামীতেও এক ব্যক্তির শাসন দেখতে পাব। সে ক্ষেত্রে সর্বস্তরে গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রায়ণের কথা ‘সিডিএলজি’ দীর্ঘদিন যাবৎ বলে আসছে। তার রূপরেখা বহুদিন আগে থেকে বৃহৎ দুটি দলসহ সব রাজনৈতিক দলের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সংক্ষেপে গণতান্ত্রিক জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের রূপরেখা তুলে ধরছি - ১. দুই ধরনের সরকারব্যবস্থা থাকবে, তথা জাতীয় সরকার ও স্থানীয় সরকার। ২. জাতীয় সরকারের হাতে জাতীয় কাজ, বৈশ্বিক কাজ, জাতীয় নিরাপত্তার কাজ নির্দিষ্ট থাকবে। আর যাবতীয় স্থানীয় কাজ স্থানীয় সরকার এককভাবে সম্পন্ন করবে। ৩. স্থানীয় ইউনিটগুলোর সঙ্গে ‘সরকার’ সংযুক্ত করে প্রতিটি স্থানীয় ইউনিটকে প্রজাতান্ত্রিক রূপ দিতে হবে।
৪. জেলা সরকার হবে স্থানীয় সরকারের সর্বোচ্চ ইউনিট (প্রদেশব্যবস্থা অবাস্তবায়নযোগ্য হওয়ায় তৎস্থলে জেলা সরকারব্যবস্থা চালু করে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের চিন্তা করতে হবে)। ৫. প্রতিটি জেলা সরকার থেকে দুজন প্রতিনিধি নিয়ে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ করতে হবে। ৬. নগরীয় বাংলাদেশকে সামনে করে স্থানীয় সরকারের স্তর বিন্যাস করতে হবে। ৭. জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সমানুপাতিক হারে ভোটের ব্যবস্থা করতে হবে (স্থানীয় সরকারেও একই ব্যবস্থা হবে, তবে পরবর্তীতে)। ৮. জাতীয় সংসদের ও স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। তাহলে প্রেসিডেন্ট পদটি সর্বদলীয় হয়ে যাবে। ৯. প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী পরপর দুবার নির্বাচিত হতে পারবেন না। ১০. প্রধানমন্ত্রী একাধারে দলপ্রধান, সরকারপ্রধান ও সংসদীয় দলের প্রধান হতে পারবেন না। ১১. সমহারে সমগুরুত্বে নরনারীর গণতান্ত্রিক ক্ষমতায়ণের জন্য প্রথমে জাতীয় সংসদে ও স্থানীয় সরকারের সংসদগুলোয় ১০০:১০০ হারে ক্ষমতায়নের চিন্তা করা যেতে পারে। ১২. সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিগুলো আরও গণতান্ত্রিক করে কার্যকর করা যেতে পারে। ১৩. তা ছাড়া গণতান্ত্রিক জাতীয় নির্বাচন কমিশন, গণতান্ত্রিক স্থানীয় নির্বাচন কমিশন, গণতান্ত্রিক দুর্নীতি দমন কমিশন, গণতান্ত্রিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, গণতান্ত্রিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক শিল্পব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক বিচার বিভাগ, গণতান্ত্রিক মিডিয়া, গণতান্ত্রিক নির্বাহী বিভাগ, গণতান্ত্রিক পুলিশিং ব্যবস্থা, গণতান্ত্রিক ভূমিব্যবস্থা, তথা এভাবে রাষ্ট্রের ২৮টি ক্ষেত্রকে গণতান্ত্রিক করতে হবে। আমরা দেশকে ভালোবাসি। নতুন প্রজন্মসহ সব মানুষকে ভালোবাসি। রাষ্ট্র সবার। এখন প্রয়োজন রাষ্ট্র ও সরকার গঠনের উদ্যোগ। তবেই আমরা নাগরিক হতে এবং সরকারের অংশ হতে পারব। ধন্যবাদ সবাইকে।
প্রস্তাবকবৃন্দ : সেন্টার ফর ডেমোক্রেটিক লোকাল গভর্নেন্স (সিডিএলজি)-এর সদস্য।
email : [email protected]