বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন দেশের বিচারাঙ্গনকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রাখার সুপারিশ করেছে এবং এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবও পেশ করেছে। এতে বলা হয়েছে- কোনো রাজনৈতিক দল আইনজীবীদের কোনো সংগঠনকে নিজেদের অঙ্গসংগঠন হিসেবে স্বীকৃতি দিতে পারবে না। বিচারকদের রাজনৈতিক আনুগত্য প্রদর্শন অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আদালত চত্বরে রাজনৈতিক সমাবেশ, মিছিল এবং বিক্ষোভের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িতরা রাজনৈতিক আনুগত্যের পুরস্কার হিসেবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগও পেয়েছেন। এমন পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে রাজনৈতিক দলগুলোর সুস্পষ্ট অঙ্গীকার প্রয়োজন। কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে- আদালতের স্বাভাবিক বিচারিক কার্যক্রম ব্যাহত করে এমন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে আইনজীবীদের বিরত থাকা দরকার। আদালত প্রাঙ্গণে এ ধরনের কর্মসূচি বা কর্মকাণ্ড পেশাগত অসদাচরণের অন্তর্ভুক্ত করে বার কাউন্সিলের মাধ্যমে শৃঙ্খলামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যবস্থা প্রচলন এবং এজন্য বার কাউন্সিল আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা জরুরি।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সুপারিশ খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। স্বীকার করতেই হবে, পতিত কর্তৃত্ববাদী সরকার নয়, তারও আগে থেকে দেশের ক্ষমতাসীনদের হিজ মাস্টার্স ভয়েসের ভূমিকা পালনের অভিযোগ রয়েছে বিচারাঙ্গনের বিরুদ্ধে। আইনজীবী এমনকি বিচারকদের রাজনীতিচর্চা বিচার বিভাগের ভাবমূর্তিকে যে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে তাতে দ্বিমত পোষণের অবকাশ নেই। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। পাকিস্তানের ২৩ বছর ছিল গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য এক দুঃসময়। কিন্তু পাকিস্তানি সেনাপতি শাসকদের বিরুদ্ধে যত অভিযোগই থাক না কেন, সে সময়ও বিচারাঙ্গন শাসকগোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণের কালো ছায়া থেকে মুক্ত ছিল। কিন্তু বাংলাদেশে বিচার বেচাকেনা এবং বিচারক ও আইনজীবীদের রাজনৈতিক আনুগত্য মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকারকে কেড়ে নিয়েছে। সে অধিকার ফিরিয়ে আনতে বিচারকদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার অবসান জরুরি। আদালত অঙ্গনকে বিক্ষোভ, দলবাজি ও মব জাস্টিসের আখড়া করার আত্মঘাতী প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।