সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বদলাচ্ছে নেশা। এবার মদ, গাঁজা, সিগারেট বা অন্য কোনো নেশাজাতীয় দ্রব্যের পাশাপাশি নেশার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে স্যানিটারি ন্যাপকিন। সম্প্রতি স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে নেশা করার প্রচলন দেখা গেছে ইন্দোনেশিয়ায়।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোতে বলা হয়েছে, দেশটির টিনএজাররা স্যানিটারি ন্যাপকিন এবং কটনপ্যাড পানিতে সিদ্ধ করে পানিটুকু নেশা হিসেবে পান করছে। এতে না কি ভাল নেশা হয়। আর সেই নেশাতেই ডুবেছে তারা।
ইন্দোনেশিয়া ন্যাশানাল ড্রাগ এজেন্সির (বিএনএন) রির্পোট জানানো হয়, স্যানিটারি প্যাডের মধ্যে ক্লোরিন থাকে। যেটি মানবদেহে এক প্রকার হ্যালুসিয়েশন এবং তীব্র নেশার অনুভূতি জাগায়। এছাড়া মানবদেহের জন্য এটি অত্যন্ত ক্ষতিকারক বলে জানানো হয়।
ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় সংবাদপত্রে জাকার্তা পোস্ট, জাভা পোস ও পোস বেলিটুং-এ গত সপ্তাহ থেকেই এই নতুন নেশার বিষয়ে টানা প্রতিবেদন ছাপা হচ্ছে। বিএনএন এর অধ্যক্ষ সিনিয়র কমান্ডার সুপ্রিনার্টো VICE এর সঙ্গে কথোপকথনে জানান, “এরা যে দ্রব্যটি ব্যবহার করছে তা আইনত ব্যবহার করা যায়, কিন্তু যে কারণে এটি ব্যবহার করার কথা কিন্তু এরা সেই কাজে ব্যবহার করছে না। এটা সঠিক নয়। একে ড্রাগের মত ব্যবহার করা হচ্ছে।'
তিনি আরও জানান, নোংরা আবর্জনার মধ্যে থেকে কুড়িয়ে সেই স্যানিটারি প্যাডকে কিছু মানুষ ফুটন্ত পানিতে ফেলে দিচ্ছে। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে তারা সেই তরল অনেকের সঙ্গে বসে পান করছে।
রিপোর্টে আরও জানানো হয়েছে, জাকার্তার রাজধানী জাভায় বেশ কয়েকজনকে স্যানিটারি ন্যাপকিন দিয়ে নেশা করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বেলিটুং দ্বীপের বাসিন্দা ১৪ বছরের এক কিশোর স্থানীয় সংবাদপত্রকে জানিয়েছে, “প্যাডের ওপরের আস্তরণ সরিয়ে ফেলে তাকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত ফোটানো হয়। এরপর সেটি নিঙরে যে তরলটি বেরোয় তাকে একটি পাত্রে রেখে দেওয়া হয়। এর স্বাদ তেতো হয়। কিন্তু তবুও বাচ্চা থেকে যুবক সবাই সারাদিন ওই তরল পান করে চলে।”
ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি মাসে লাখ লাখ টেম্পুন ফেলে দেওয়া হয়। আসলে ওখানে লোকেরা মনে করেন যে নারীরা টেম্পুন ব্যবহার করেন তারা ভার্জিন নন। রিপোর্টে প্রকাশ পেয়েছে এর আগেও ২০১৬ তে এরকমভাবেই স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা হত।
স্ট্রেটস টাইমস এর সঙ্গে কথোপকথনে, ইন্দোনেশিয়ার নিরাপদ পানীয়কে তদারকি করা দায়িত্বে থাকা জিমি গিটিং বলেন, 'আমি জানি না কে এটি শুরু করেছিল তবে এই প্রবণতাটি প্রায় ২ বছর আগে শুরু হয়েছিল।' আপাতত এর বিরুদ্ধে কোনো আইন নেই। কিছু বাচ্চা মশার হাত থেকে বাঁচতে তৈরি করা ক্রিম ও কাশির সিরাপ খেয়েও নেশা করে। এদের আটকাতেও কোনো আইন নেই। প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে এই সব নেশায় আসক্ত বাচ্চারা বঞ্চিত সম্প্রদায়ের হয় কিমবা রাস্তায় থাকে এরা।
ইন্দোনেশিয়া সরকার জানিয়েছে- তারা এই ঘটনার তদন্ত করবে এবং পরীক্ষা করবে টেম্পুন ও স্যানিটারি প্যাডে এমন কী কী কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যার ফলে এত নেশা হয়!
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম