জঙ্গি সংগঠনের অর্থ লেনদেনে সহায়তা করার অভিযোগে ফেঁসে যাচ্ছে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিডেট। জঙ্গি সংগঠনকে অর্থ সহায়তা প্রদানের অভিযোগে গ্রেফতার তিন আইনজীবী এ ব্যাংকের মাধ্যমেই অর্থ লেনদেন করেছেন বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শিগগিরই ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বরাবর চিঠি দেওয়া হবে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা (৩৯), অ্যাডভোকেট হাসানুজ্জামান লিটন (৩০) ও অ্যাডভোকেট মাহফুজ চৌধুরী বাপন (২৫)। ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টের মাধ্যমে তারা জঙ্গি সংগঠন শহীদ হামজা ব্রিগেডের সাথে লেনদেন করেছেন বলে জানতে পেরেছে র্যাব। জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি থেকে এই তিন আইনজীবীকে গ্রেফতার করে র্যাব। পরদিন চট্টগ্রামের বাঁশখালীর আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের চার দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়।
রিমান্ডের প্রথম দিনে র্যাব জানতে পেরেছে, কোন এক বড় ভাইয়ের মাধ্যমে এই বিপুল অর্থ পেয়েছেন শাকিলা। এখন সেই বড় ভাইয়ের পরিচয় জানার চেষ্টা চলছে। আর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফায়দা হাসিলের জন্য কোন রাজনৈতিক দল এই জঙ্গি সংগঠনকে অর্থায়ন করেছে কি না, সেটাও খুঁজে দেখা দরকার।
সুপ্রীমকোট আইনজীবি সমিতির ৪র্থ তলার ৪১১ নম্বর কক্ষে বসতেন শাকিলা ফারজানা। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পদধারী নেতা হলেও মামলার দিন ছাড়া হাইকোর্ট প্রাঙ্গনে দেখা যেতো না তাকে।
র্যাবের তদন্তে ডাচ বাংলার ব্যাংকের পাঁচটি একাউন্টের মাধ্যমে মোট এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা লেনদেনের প্রমাণ মেলে। এর মধ্যে ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা, হাসানুজ্জামান লিটন ও মাহফুজ চৌধুরী বাপনের কাছ থেকে শহীদ হামজা ব্রিগেডের ফান্ডে গেছে এক কোটি আট লাখ টাকা। জানা গেছে, শাকিলার টাকার উৎস তার এক বড়ো ভা্ই। একই সঙ্গে হামজা ব্রিগেডের আরেক অর্থদাতা দুবাইর নাগরিক আল্লামা লিবাদির ব্যাপারে তথ্য জড়ো করছে র্যাব।
রিমান্ডের টাকার উৎস এবং অর্থায়নে আরও কারা জড়িত এসব বিষয়কে গুরুত্ব দিচ্ছে তদন্তকারী সংস্থা। এছাড়া জঙ্গি অর্থ লেনদেনে কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মাধ্যমগুলো জড়িত সে বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে।
জঙ্গিবাদে আইন পেশাধারীদের জড়িত হওয়া এবং অর্থায়নের বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে নিরাপত্তা বিশ্লেষকদেরও। তারা বলছেন, দেশে প্রথমবার আলোচনায় আসা এ ঘটনা প্রমান করাও তদন্তকারী বাহিনীর জন্য চ্যালেঞ্জ।
এদিকে জঙ্গি অর্থ লেনদেনে সহায়তার অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব সোনালি ও বেসরকারি এক্সিম ব্যাংকের নামেও। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রবিবার রাতে বলেন, ''আমরা জানতে পেরেছি, তিন আইনজীবী সোনালী, ডাচ বাংলা ও এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ লেনদেন করেছেন। তাই আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে শিগগিরই চিঠি পাঠাবো। প্রয়োজনে সরেজমিনে পরিদর্শন করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।''
বিডি-প্রতিদিন/২৪ আগস্ট, ২০১৫/ এস আহমেদ