বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে ডেনিস দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মূল্যায়ন তুলে ধরা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে ঢাকায় দায়িত্বপ্রাপ্ত সাত বিদেশি কূটনীতিক বলেছেন, বাংলাদেশের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে দুই নারীর অবস্থান মানেই নারীর ক্ষমতায়ন নয়। তাদের দাবি, বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ নারীই সহিংসতার শিকার। বিশ্ব নারী দিবসের দুই দিন আগে সাত বিদেশি নারী কূটনীতিকের বক্তব্যে বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্রই ফুটে উঠেছে। ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে দুই সম্মানিত নারীর নেতত্বে। সংসদে সরকার ও বিরোধী দলের নেতৃত্ব তো বটেই, কখনো কখনো তৃতীয় সংসদীয় গ্রুপের নেতৃত্বও ছিল নারীর হাতে। এ মুহূর্তে সংসদের নেতৃত্ব তো দৃশ্যত নারীময়। সংসদ নেতা, বিরোধী দলের নেতা, সরকারি দলের উপনেতা, স্পিকার সবাই নারী। সংসদের বাইরে জাতীয় রাজনীতির জনসমর্থনধন্য যে অংশটি রয়েছে তারও নেতৃত্বে আছেন একজন নারী। বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও নারীদের অবদান সমীহ জোগানোর মতো। দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ আসে যে খাত থেকে সেই তৈরি পোশাকশিল্পে কর্মরতদের ৮০ শতাংশই নারী। রাজনীতি ও অর্থনীতিতে নারীর পাকাপোক্ত অবদান সত্ত্বেও দুনিয়ার যেসব দেশের নারীরা সবচেয়ে নিগ্রহের শিকার বাংলাদেশ তার মধ্যে একটি। বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ নারী সহিংসতার শিকার এ তথ্যে বাড়াবাড়ির অভিযোগ করা গেলেও তাকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। রক্ষণশীল সমাজ হওয়ার কারণে বাংলাদেশে যৌন নিগ্রহের যেসব ঘটনা ঘটে তার ৯৫ শতাংশেরও বেশি গোপন রাখা হয়। সমাজে নারীর মর্যাদা মধ্যযুগের আবর্ত থেকে কিছুতেই বেরিয়ে আসতে পারছে না। বাংলাদেশের নারীরা যে খুব একটা সুখে নেই সাত বিদেশি মহিলা কূটনীতিকের বক্তব্যে তা ফুটে উঠেছে। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজেদের সামনের কাতারের বলে দাবি করলেও বাস্তবে যে আমরা এখনো আইয়ামে জাহেলিয়াত ঘৃণিত সময়কে ধারণ করছি তা এক জাজ্বল্যমান সত্যি। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হলে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে নারীদের বসানো নয় দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শীর্ষ পদগুলোতে নারীরা ঠাঁই পেলেও দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন না আসায় নারী নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। দুর্ভাগ্য একেই বলে।