বুধবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা
প্রতিবন্ধী দিবস

ভালো নেই পঞ্চগড়ের প্রতিবন্ধীরা

ভালো নেই পঞ্চগড়ের প্রতিবন্ধীরা
আজ বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে পঞ্চগড়ে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি উন্নযন সংস্থা নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। কিন্তু যাদের জন্য এই আয়োজন তারা কেমন আছে?
 
প্রতিবন্ধী, প্রতিবন্ধির পরিবার এবং তাদের নিয়ে কাজ করছে এমন সরকারি বেসকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে কথা বলে জানা যায়, গেছে, পঞ্চগড়ের প্রতিবন্ধীরা ভালো নেই। তাদেরকে সমাজের দয়া দাক্ষিণ্য নিয়েই বেঁচে থাকতে হচ্ছে। সামাজিক ও পারিবারিক অবহেলা তাদের সকাল সন্ধ্যার খাবারের মতোই নিত্যদিনের সঙ্গী। গ্রাম বা শহরের লোকজনসহ প্রতিবেশিরা তাদের ভিন্নচোখে দেখে। তাদের মতামত বা সুখ-দুঃখের কথা শোনার মতো কেউ নেই। অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করে দেয় না কেউ। ভর্তি হলেও সঠিক চিকিৎসা পাওয়া যায় না। ডাক্তার নার্সরাও তাদেরকে ভালো চোখে দেখে না। তাদের সঙ্গে কেউ ভালো করে কথা বলে না। নিত্যদিনের শারীরিক যন্ত্রণার সঙ্গে মানসিক বেদনা নিয়েই কেটে যাচ্ছে তাদের জীবন।
 
অধিকাংশ প্রতিবন্ধীই দারিদ্রসীমার নিচে বসবাস করছে। কারো কারো কোনরকমে  মাথাগুঁজে থাকার ঘরটিও নেই। কেউ কেউ ভিক্ষাবৃত্তি করে বেঁচে আছে। সরকারি বা বেসরকারি সহোযোগিতা একেবারেই অপ্রতুল। অফিসার এসে তাদের নাম লিখে নিয়ে গেলেও পরে আর কেউ খোঁজ নেয় না। অনেকের পড়ালেখা করতে ইচ্ছে থাকলেও পরিবারের সিদ্ধান্তের কারণে ভর্তি হতে পারে না। স্কুলে ভর্তি হলেও সহপাঠী ও শিক্ষকরা তাদের সঙ্গে ভালো আচরণ করেন না। ফলে স্কুল যেতে মন চায় না।
 
সদর উপজেলার কাজিপাড়া গ্রামের ৫০ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী জুলেখা বেগমের দুই পায়েই জন্ম থেকে সমস্যা। তাকে চলাফেরা করতে হয় স্ক্র্যাচে ভর করে। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। মেয়ে দুটির কোন রকমে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। ৬০ বছর বয়সী স্বামীও শ্রবণ প্রতিবন্ধী। ভ্যান চালিযে কোন রকমে সংসার চালিয়ে নেন। তিনি জানান, বয়স্ক ভাতা তিনি পান না। তার ছেলে বা স্বামীও কোন প্রকার অনুদান পান না। প্রতিবন্ধী হিসেবে শুধু তিনি বছরে একবার ১০ কেজি চাল পান। নিজেদের থাকার কোন ভিটেমাটি নেই। অন্যের এক খণ্ড জমিতে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তিনি।
 
উত্তর কাজিপাড়া  গ্রামের ২০ বছর বয়সী বেলী কথা বলতে পারে না। ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলে পড়লেও পারিবারিক আর সামাজিক অবহেলায় আর এগোতে পারেনি। সে কি করতে চায় এমন প্রশ্ন করলে এই প্রতিবেদকের কাছে সে কাগজ-কলম চায়। কাগজ-কলম দেয়া হলে সে লিখে জানায়, আমি সেলাইযের কাজ শিখতে চাই। জেসমিনের বাবা মজিবর রহমান জানান, মেয়েটিকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কেউ আসে না।   
পূর্বডাঙ্গাপাড়া গ্রামের জেসমিন কথা বলে অস্পস্ট উচ্চারণে। আর সব ইন্দ্রীয় সচল। ৫ম শ্রেণি পাশ করেছে। বাবা মারা গেছেন অনেকদিন আগে। ২ ভাই আর ২ বোনের মধ্যে ১ বোন, ১ ভাই প্রতিবন্ধী। বড় ভাই পানের ব্যবসা করে কোনরকমে সংসার চালায়। অস্পস্ট উচ্চারণে জানায় সে কিছু একটা করতে চায়।
 
পঞ্চগড়ে প্রতিবন্ধীদের উন্নয়নে সরকারি বা বেসরকারিভাবে উল্লেখ করার মতো কোন প্রতিষ্ঠান নেই। জেলা সমাজসেবা সমন্বয়ে সরকার প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কর্মশালা, সেমিনার, ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করলেও পঞ্চগড়ে খুব একটা চোখে পড়ে না। এ ব্যাপারে জেলা সমাজসেবার উপপরিচালক শহীদুল হক জানান, জেলায় জরিপকৃত প্রতিবন্ধী আছে ১২ হাজার ৮শ' ৩০ জন। সরকারি সহায়তা পাচ্ছে মাত্র ৩ হাজার ১০৩ জন। তাদেরকে মাসিক ৩শ' থেকে ৬শ' টাকা দেয়া হয়। পঞ্চগড়ে কোন আশ্রয় কেন্দ্র নেই। সরকারি সহযোগিতা অপ্রতুল।
 
বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান পল্লী সাহিত্য সংস্থার নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশিদ বলেন, অত্যন্ত করুণ জীবন যাপন করছে পঞ্চগড়ের প্রতিবন্ধীরা। সরকারের বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিৎ।
 
বিজয় প্রতিবন্ধী শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক মোশারফ হোসেন বলেন, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে মিডিয়ায় যেমন প্রচারণা দেখি, বাস্তবে তা দেখি না। সাহায্য সহযোগিতা অত্যন্ত কম।
 
 
বিডি-প্রতিদিন/ ০২ ডিসেম্বর, ২০১৪/ রশিদা

সর্বশেষ খবর