উপন্যাসগুলো বিশাল হওয়ায় বড় ও মোটা বইগুলো সামলানো বা সেগুলো পড়ার ক্ষেত্রে অনেকের অনীহা দেখা যায়। আসলে অনীহার কিছু নেই। কারণ লেখকরা বলেছেন, একজন মানুষকে সব কিছু থেকে দূরে সরে যেতে বা পালাতে সাহায্য করে গল্প, উপন্যাস বা সাহিত্য। ইংরেজি ভাষায় যাকে বলা হয় ‘এস্কেপিজম’। এ পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অন্য যে কোনো শিল্পের চেয়ে সাহিত্যের ক্ষেত্রে তীব্র ও শক্তিশালী। আজকের ফিচারে সাহিত্যের কয়েকটি দুর্দান্ত উপন্যাসের নাম দেওয়া হলো যা সবার তালিকায় যুক্ত করা উচিত...
হারম্যান মেলভিলের
‘মোবি-ডিক (দ্য হোয়েল)’
হোয়েলিং শিপ ‘পিকোড’-এর ক্যাপ্টেন আহাব বিশালাকার হোয়াইট সাদা তিমির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন...
৭২০ পৃষ্ঠার বই ‘মোবি-ডিক (দ্য হোয়েল)’। এটি আমেরিকান লেখক মেলভিলের এক অনবদ্য সৃষ্টি। আমেরিকান লেখক হারম্যান মেলভিলের ১৮৫১ সালের উপন্যাস এটি। বইটি ইবনে ইসরাঈলের কাহিনিতে বর্ণিত হয়েছে। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র আহাব। হোয়েলিং শিপ ‘পিকোড’-এর ক্যাপ্টেন। গল্পের বর্ণনাকারী হলেন ইসমায়েল নামে এক নাবিক এবং এই সাহিত্যে অন্যতম জনপ্রিয় প্রথম লাইনটি হলো- “আমাকে ইসমায়েল বলে ডাকুন।” বইটি অদ্ভুত, পান্ডিত্যপূর্ণ, মজার, গভীর অর্থবহ এবং আমেরিকার অন্যতম জনপ্রিয় উপন্যাস।
হানিয়া ইয়ানাগিহারার ‘অ্যা লিটল লাইফ’
বইটির কাহিনি চলমান হয়েছে জুডের গল্পের ওপর ভিত্তি করে। উপন্যাসের চিত্রপট এগিয়ে যায় জুডের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতিকে ঘিরে...
চার বন্ধুর জীবনের গল্প নিয়ে হানিয়া ইয়ানাগিহারার উপন্যাস ‘অ্যা লিটল লাইফ’। ৭৩৬ পৃষ্ঠার এ বইটি ম্যান বুকার পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল। তবে সে বছর ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব সেভেন কিলিংস’ উপন্যাসের জন্য ম্যান বুকার পুরস্কার পান জ্যামাইকার লেখক মারলন জেমস। গল্পটি যতই এগিয়ে যায়, জুডের দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি ততই প্রকাশ পেতে থাকে। গল্পটি মারাত্মক কষ্টের এবং মন খারাপের। যেখানে কয়েক দশকের ঘটনা বলা হয়েছে এবং বইটির শেষ পৃষ্ঠাগুলো পড়ার সময় আপনি আবেগি হতে বাধ্য।
জর্জ এলিয়টের ‘মিডলমার্চ’
মিডলমার্চ উপন্যাসটি কয়েকটি ইংরেজি সেরা উপন্যাসের মধ্যে একটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য লেখা। বইটি এলিয়টের মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচিত।
ইংরেজি ফিকশন লেখাগুলোর মধ্যে জর্জ এলিয়টের ‘মিডলমার্চ’ অনবদ্য। ১৮৭৪ সালে এটির প্রথম অংশ সম্পূর্ণ প্রকাশ হয়েছিল এবং তারপর ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায় বইটি। বইটি এলিয়টের মাস্টারপিস হিসেবে বিবেচিত। উপন্যাসটি ‘মিডলমার্চ’ নামে একটি কাল্পনিক শহরের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জীবন নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে। ভদ্র সম্প্রদায়ের ভূমিমালিক থেকে শুরু করে খামারশ্রমিক বা কারখানার শ্রমিক পর্যন্ত সবার কথাই জায়গা পেয়েছে এ বইটিতে। বইটি ১৯ শতকে লেখা হলেও এতে রয়েছে অবিশ্বাস্য রকম আধুনিকতা বোধ।
চার্লস ডিকেন্সের ‘ব্লিক হাউস’
বইটিতে আদালতে যে একটি মামলা কয়েক দশক ধরে চলতে পারে তা দেখিয়েছেন। উপন্যাসটিতে রয়েছে অসংখ্য চরিত্র এবং কয়েকটি পার্শ্ব কাহিনি।
চার্লস ডিকেন্সের ‘ব্লিক হাউস’ বইটি তাঁকে এনে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী মর্যাদা। ‘ব্লিক হাউস’ তাঁর দীর্ঘতম উপন্যাস। ৯২৮ পৃষ্ঠার বইটি জার্নডাইস পরিবারের গল্পকে ঘিরে লেখা হয়েছে। যাদের জীবনের লক্ষ্য থাকে উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পদ পাওয়া। এভাবেই কাহিনি এগিয়ে যায়। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন বারবার ব্যর্থতার মুখে পড়ে। ডিকেন্স এই বইটিতে ‘কোর্ট অব চ্যান্সেরি’ নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন, এই আদালতে একটি মামলা কয়েক দশক ধরে চলতে পারে। উপন্যাসটিতে রয়েছে অসংখ্য চরিত্র এবং বেশ কয়েকটি পার্শ্ব কাহিনিও রয়েছে।
মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের ‘ডন কিয়োটে’
মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের ‘ডন কিয়োটে’ ৯৭৬ পৃষ্ঠার উপন্যাস। মিগুয়েল ডি সার্ভান্তেসের লেখা অমর এ সাহিত্যকর্ম সপ্তদশ শতকে লেখা।
বলা হয় ‘ডন কিয়োট’ বিশ্বের প্রথম আধুনিক উপন্যাস। স্পেনীয় ভাষায় রচিত সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ হিসেবে অভিহিত করা হয় ডন কিয়োটেকে। বইটি দুটি খন্ডে সমাপ্ত করা হয়েছে। প্রথম খন্ডে এ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র আলন্সো কিহানো (যদিও এই নাম বইয়ের শেষের দিকে দেওয়া হয়) হলেন একজন হিদাল্গো (নিম্ন স্পেনীয় অভিজাত সম্প্রদায়ের সদস্য)। তিনি একজন মধ্যবয়সী স্প্যানিশ ভদ্রলোক, যিনি বীরদের অনেক রোম্যান্স গাথা পড়েন। সেই থেকে তিনি তলোয়ার তুলে একজন ভবঘুরে বীর হয়ে ওঠার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের পুরনো ঘোড়া এবং বাস্তববাদী মানসিকতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী অভিযাত্রার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। ডন কিয়োটের ‘বীরত্বপূর্ণ’ কাজের মধ্যে রয়েছে উইন্ডমিলের সঙ্গে লড়াই করার চেষ্টা। যেখানে তিনি দৈত্য ভেবে ভুল করেছিলেন এমনকি তিনি এক পাল ভেড়ার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামেন।