এমন কঠিন সময় বোধহয় অতীত নিকটে পার করেননি শেন জারগেনসন। এমন চাপও বোধহয় অনুভব করেননি এই অস্ট্রেলিয়ান। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর তার হাত ধরেই বাংলাদেশের ওয়ানডের যে গ্রাফটা উপরে উঠছিল ধেই ধেই করে, সেই গ্রাফটাই এখন নিচে নামছে উল্কা গতিতে। এমনই তার গতি, যাতে সিট বেল্ট বাঁধারও সময় পাচ্ছেন না ক্রিকেটাররা। এমনকি কোচ জারগেনসনও। গত দুই বছর ধরে যে ক্রিকেটাররা প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিচ্ছিল, দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার কাছে তারাই কি না আত্দসমর্পণ করছেন অসহায়ভাবে। আর সেটা দেখতে দেখতে হতাশ হয়ে পড়েছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। হতাশ কোচও। তারপরও টানেলের শেষ প্রান্তে আলোর দেখা পাওয়ার মতো ঘুরে দাঁড়ানোর সুপ্ত বাসনার কথা জানিয়েছেন। সঙ্গে সাফাইও গাইছেন শিষ্যদের।
শক্তি, সামর্থ্য এবং ইতিহাসের বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে অনেকটা পথ এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। পরিসংখ্যানও তাই বলে! দুই দলের যে ৩৫টি ওয়ানডে হয়েছে, তাতে টাইগারদের সাফল্য সাকুল্যে চারটি। অথচ গত দুই বছরে যে তিনটি ওয়ানডে খেলেছিল দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে, তার দুটিতেই হেসেছিল টাইগাররা। কিন্তু এবার ঘরের মাটিতে কি যে হলো টাইগারদের, শক্ত জমিন খুঁজে পাচ্ছে না।
এক ম্যাচ হাতে রেখেই এরমধ্যে ওয়ানডে সিরিজ হেরেছে। এর আগে হেরেছে টি-২০ ও টেস্ট সিরিজেও। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম টেস্টে ঘুরে দাঁড়িয়েছিল জারগেনসনের শিষ্যরা। অবশ্য শেষ বল পর্যন্ত লড়াই করেছিল টি-২০ সিরিজে। আর প্রথম দুই ওয়ানডেতে হাত তেল চিটচিটে করে ক্যাচ ফেলেছে একের পর এক। সব মিলিয়ে লজ্জার এক সিরিজ খেলল টাইগাররা। কিন্তু কোচ বাজে খেলার বিষয়টিকে এড়িয়ে আজ আবার ভালো খেলার স্বপ্ন দেখছেন, 'সিরিজের পারফরম্যান্স নিয়ে মন্তব্য করা কঠিন। শক্তিশালী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আমরা সেরা ক্রিকেটটা খেলতে পারছি না। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম ঘরের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ হারছি। আগামীকাল (আজ) আমরা পজেটিভ ক্রিকেট খেলতে চেষ্টা করব।'
প্রথম ওয়ানডেতে চারটি ক্যাচ মিস। সেই ধারা ধরে রাখল দ্বিতীয়টিতেও। এছাড়া ব্যাটসম্যানরাও কেমন যেন খোলশবন্দী হয়ে পড়েছেন। দিতে পারছেন না ফিনিশিং। টেকটিক্যাল কোনো সমস্যা রয়েছে কি? 'আমি মনে করি আমাদের ওয়ানডে ফর্ম খুবই ভালো। যদিও আমরা দুটি ম্যাচ হেরেছি। অনেকেই এই পারফরম্যান্স নিয়ে প্যানিক সৃষ্টি করতে চাইছেন। কিন্তু আমি তেমনটা ভাবছি না। আমাদের সামর্থ্য আছে ভালো ক্রিকেট খেলার। এটা ঠিক শেষ ম্যাচে আমরা ভালো অবস্থানে ছিলাম না। তবে এটাও ঠিক আমরা ফিনিশিং দিতে পারছি না।'
প্রথম দুই ওয়ানডেতে সাকিব আল হাসান, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, সোহাগ গাজী, মুমিনুল হক ও নাসির হোসেনরা যেভাবে ক্যাচ ছেড়েছেন, তাতে জন্ম দিয়েছে শুধু বিস্ময়ের। বিস্ময়কর বাজে ফিল্ডিংয়ের ব্যাখ্যায় কোচ বলেন, 'আমরা আসলে কঠোর পরিশ্রম করছি। ছেলেরাও পরিশ্রম করছেন। নিউজিল্যান্ড সিরিজ খেয়াল করলেই হবে। আসলে আমরা সুযোগগুলোকে কাজে লাগাতে পারিনি। সবাইকে একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমাদের দলটা তরুণ। আমরা যখন-তখন ভুল করতেই পারি।'
ক্যাচ মিস করতে করতে রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করেছে ক্রিকেটারদের উপর। হারের বৃত্ত ভাঙতে না পারায় পরিবর্তন এসেছে শারীরিক ভাষায়ও। এই পরিবর্তনের কথা অস্বীকার করেননি জারগেনসন, 'এমন পরিস্থিতিতে হয়তো মিথ্যা নয়। কিছু কিছু সময় মনে হয়েছে। তবে আমরা সুযোগ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু ধরতে পারিনি। আমরা জানি আমরা ভালো ওয়ানডে দল। সামর্থ্য সম্পর্কেও পরিষ্কার জানি। তাই কি করব সে বিষয়ে কোনো ব্যখ্যা দিতে রাজি নই।' ব্যাটিংয়েও ভালো হচ্ছে না, সেটাও অস্বীকার করেননি কোচ, 'আমরা ব্যাটিংয়েও ভালো করতে পারছি না। কিন্তু এটা মনে রাখতে হবে এই ক্রিকেটারদেরই ভালো ওয়ানডে রেকর্ড রয়েছে।'
ক্রিকেটারদের ভুল স্বীকার করে আড়াল করতে চাইছে ব্যর্থতা। বারবার বলতে চেয়েছেন সামর্থ্যের কথা। আজকের ম্যাচে আসলে কি হবে? 'আমরা আজ ভালো খেলতে চাই। ভুলগুলো থেকে বেরিয়ে এসে ভালো খেলতে চাই। সত্যিই আমরা ভালো ক্রিকেট খেলতে চাই।' চাইলেই কি হবে? হারতে হারতে আত্দবিশ্বাসের তলানিতে চলে আসা টাইগাররা আসলেই কি পারবেন ঘুরে দাঁড়াতে আজ?