বাংলাদেশি নারীদের সাফল্যের পাল্লা দিনে দিনে ভারী হয়েই চলেছে। কেউ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ক্রীড়াযজ্ঞ থেকে নিয়ে আসছেন স্বর্ণপদক, কেউ আছেন বিশ্বের দাপুটে কোন দেশের পার্লামেন্টে নীতি নির্ধারকের ভূমিকায়, কেউ বা অন্য দেশের মাটিতে অর্জন করছেন সেরা বেকারের গৌরব। এবার কিক বক্সিংয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কিক বক্সার রুকসানা বেগম।
হালকা-পাতলা গড়নের রুকসানা গত শনিবার (২৩ এপ্রিল) রিংয়ে নেমে যেন হয়ে গেলেন অগ্নিস্ফুলিংগ। পুড়িয়ে ছারখার করে দিলেন প্রতিপক্ষকে। বিপরীত পাশে ছিলেন সুইডিশ চ্যাম্পিয়ন সুজানা স্যালমি জার্ভি। পাঁচ রাউন্ডের প্রতিটিতে তাঁকে হারিয়ে 'মুয়ে থাই' (কিক বক্সিংয়ের একটি বিশেষ ধরণ) বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব জিতে নেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এ নারী। এতদিন রুকসানা ব্রিটিশ চ্যাম্পিয়নের শিরোপাটি দখলে রেখেছিলেন। এবার দখলে নিলেন আন্তর্জাতিক শিরোপা।
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাব জয়ের লড়াইয়ে নামার এক দিন আগে স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুকসানা বলেছিলেন, ''এই লড়াই হয়তো কিক বক্সিং সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলে দেওয়ার কারণ হবে। কেননা, অনেকে আমার দিকে তাকিয়ে ভাবেন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পরিবারের এতটুকুন একটা মেয়ে। আর আমার প্রশিক্ষক তো প্রায়ই মজা করেন আমাকে নিয়ে।''
সত্যিই তাই। নিজের জেদ ও লক্ষ্যকে পরিণতি দিয়েছেন দৃঢ়চেতা রুকসানা। তার জেদের কাছে হার মানতে বাধ্য হয়েছে শারীরিক গড়ন নিয়ে ভ্রু কুচকানো মানুষগুলো।
লন্ডনের দ্য রাউন্ড চাপেল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় ওয়ার্ল্ড কিক বক্সিং অ্যাসোসিয়েশনের (৪৮ কেজি ওজনশ্রেণি) বিশ্ব খেতাব জয়ের ওই লড়াই। ২০১০ সাল থেকে ব্রিটিশ মুয়ে থাই (৪৮ থেকে ৫০ কেজি ওজনশ্রেণি) শিরোপা টানা ধরে রাখা রুকসানার এটাই প্রথম বিশ্ব জয়। প্রায় চার বছর ধরে ব্রিটিশ জাতীয় মুয়ে থাই দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা রুকসানা ২০১৩ ও সর্বশেষ ২০১৫ সালের মার্চে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন খেতাবের জন্য লড়েছিলেন।
লন্ডনের সেভেন কিংস এলাকায় জন্ম নেওয়া রুকসানার আদিবাড়ি বাংলাদেশের সিলেট জেলার বালাগঞ্জে। আওলাদ আলী ও মিনারা বেগম দম্পতির তিন ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে রুকসানা দ্বিতীয়। পড়াশোনা করেছেন স্থাপত্য নিয়ে। শখের বসে বছর ১৫ আগে শুরু করেন কিক বক্সিং প্রশিক্ষণ। তবে ২০০৬ সালে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টার থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার আগ পর্যন্ত এই কিক বক্সিং শেখার বিষয়টি পরিবারকেও জানাননি তিনি। এখন তিনি কিক বক্সিংয়ের ব্যক্তিগত প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তিনি ফাইট ফর পিস নামে একটি চ্যারিটির মুয়ে থাই প্রশিক্ষক এবং স্পোর্টিং ইকুয়াল নামে আরেকটি দাতব্য সংগঠনের অ্যাম্বাসেডর।
১৬ বছর বয়সে রুকসানা সর্বশেষ বাংলাদেশে আসেন।
বিডি-প্রতিদিন/এস আহমেদ