দেখলে মনে হবে পাড়া মহল্লা বা গ্রামের কোন মাঠ হয়তো পানিতে দীর্ঘ দিন ধরে ডুবে রয়েছে। সেখানে জন্মেছে কচুরিপানা। কিন্তু বাস্তবতা পুরোটাই ভিন্ন। বেহাল দশা এই মাঠটি একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ছবিতে দেখা নাজুক অবস্থাটি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় অবস্থিত খান সাহেব ওসমান আলী আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম আউটডোর মাঠের। সেখানে জমে রয়েছে পানি আর সারি সারি কচুরিপানা।
নারায়ণগঞ্জের ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা জানায়, এই স্টেডিয়ামে দুটি আন্তর্জাতিক টেস্ট ও ১০টি ওয়ানডে ম্যাচসহ প্রিমিয়ার লিগের অসংখ্য টুর্নামেন্ট গড়িয়েছে।আর সেই মাঠের আউটডোর যেন এক বিশাল ডোবা আর ইনডোর যেন কচুরিপানায় ভরপুর এক দ্বীপ।
স্থানীয়রা জানান, গত ছয় বছর ধরে এই মাঠটির আউটার ও ইনডোর স্টেডিয়ামে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের মালিকানাধীন আন্তর্জাতিক মানের এ মাঠটির সংস্কারে কোনও উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ খেলোয়াড় ও সংগঠকদের। অযত্ন-অবহেলায় মাঠটি যেন এখন যে কোনো সময় পরিত্যক্ত ঘোষণা করার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, দ্রুতই মাঠের সংস্কার করে খেলার উপযোগী করতে কাজ চলছে।
স্টেডিয়ামটির নির্মাণ ইতিহাস থেকে জানা যায়, ২০০০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম উদ্বোধন করেন। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ বনাম অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ভেন্যু হিসেবে যাত্রা শুরু করে স্টেডিয়ামটি। দুই টেস্ট এবং ১০টি ওয়ানডেসহ প্রিমিয়ার লীগের অসংখ্য ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে এখানে। সর্বশেষ ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট ম্যাচের পর আর কোনও আন্তর্জাতিক ম্যাচ মাঠটিতে গড়ায়নি।
জলাবদ্ধতা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আউটার স্টেডিয়াম থেকে শুরু করে মূল স্টেডিয়াম ভরা থৈ থৈ পানি আর কচুরিপানা। মাঠটি ডিএনডি প্রজেক্টের ভেতরে থাকায় এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অনেক নিচু হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। পাশের আউটার স্টেডিয়াম বর্তমানের হাঁটু পানির নিচে তলিয়ে আছে। কচুরিপানা আর কালো নোংরা পানিতে সৃষ্ট উৎকট দুর্গন্ধে টেকা দায়। আউটার স্টেডিয়ামের জলাবদ্ধতার আটকে থাকা পানি চুইয়ে মূল স্টেডিয়ামের ভেতরে ঢুকে পড়ায় মাঠ পানির নিচে রয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পানির নিচে থাকায় এবং সংস্কার না হওয়ায় মাঠে জন্মেছে বড় বড় ঘাস। স্টেডিয়ামের দর্শক চেয়ারগুলো এখন বিবর্ণ ও নষ্ট হওয়ার পথে ২৫ হাজার দর্শকের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন গ্যালারিতে বসার চেয়ার, ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড, ভিআইপি গ্যালারি, সাংবাদিকদের বসার স্থান প্রেস বক্স, ক্রিকেটারদের ড্রেসিং ও ওয়েটিংরুমসহ বাথরুম সবই এখন ব্যবহারের অনুপযোগী হওয়ার পথে। হঠাৎ করে মূল রাস্তা থেকে দেখলে আর্স্তজাতিক স্টেডিয়াম না ভেবে বড় ধরনের জলাশয় ভেবে বসতে পারেন যে কেউ। স্টেডিয়ামের মূল মাঠে যেন ঘাসের চাষ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার (পদাধিকারে) সভাপতি মোস্তাইন বিল্লাহ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এই স্টেডিয়ামটির মালিক মূলত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। যতটুকু জানি মাঠটি ডিএনডিতে এবং নিচু এলাকায় অবস্থিত। মাঠের উন্নয়নের জন্য এটাকে উঁচু করতে ইতিমধ্যে বুয়েটের টিম নানা পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছে। আমরা মাঠটির উন্নয়নের জন্য ক্রীড়া পরিষদে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। তবে কবে নাগাদ এর কাজ শুরু হবে যেটা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বলতে পারবে। তবে মাঠের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে মাস্টার প্ল্যান হচ্ছে তা জানতে পেরেছি। অর্থাৎ কাজ হবে এটা নিশ্চিত।
বিসিবির নবনির্বাচিত পরিচালক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভির আহমেদ টিটু বলেন, ‘স্টেডিয়ামটি পড়েছে ডিএনডি এলাকার ভেতরে। বর্তমানে ডিএনডির অনেকগুলো এলাকা পানির নিচে। ডিএনডি পুরো এলাকারই চিত্র এই স্টেডিয়াম। ডিএনডির কাজগুলো সম্পন্ন হলে তখন হয়তো চিরস্থায়ী সমাধানে আসা যাবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ যৌথভাবে বুয়েটের মাধ্যমে তারা এটা জরিপ করেছে, কীভাবে করলে ভালো থাকবে। বুয়েট এরইমধ্যে তাদের জরিপ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এখন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের দায়িত্ব। তারা যেকোনো সময় কাজ শুরু করবে আবার খেলা শুরু করার জন্য। আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এবং নারায়ণগঞ্জবাসী হিসেবে দাবি জানাই, বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী যে কার্যক্রম করতে হবে সেটা যেন দ্রুত শুরু করে।’
জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চাইলে আগামী সাত দিনের মধ্যে স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শুরু করে দিতে পারি। একজন খেলোয়াড় বা সংগঠক হিসেবে স্টেডিয়ামের দ্রুত সংস্কার শুরু করার দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার সচিব পরিমল সিংহ বুধবার দুপুরে মুঠোফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘সাত দিন হয়েছে আমি যোগদান করেছি। পুরো বিষয়টি জানি না। জেনে আপনাকে জানাবো।’
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা