বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেন গত ৯ ডিসেম্বর বহুল প্রত্যাশিত বাণিজ্য চুক্তি আলোচনায় ইতি ঘটাতে পারেননি। তবে চুক্তি স্বাক্ষর না হলেও অচলায়তন কিছুটা দূর হয়েছে। চুক্তিহীন অবস্থা ঠেকানোর চূড়ান্ত অবকাশ হিসেবে আগামী রবিবারের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের জন্য দুই নেতা একমত হয়েছেন।
বৃটিশ জলসীমায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাছ ধরার সুযোগ নিয়ে মূখ্য আলোচনার ত্রি-কোর্স ডিনারে বিগ ফিশ রেসিপি অন্তর্ভুক্ত ছিল। সন্ধ্যা ৬টার নির্ধারিত খাবার সাড়ে ৭টায় শুরু হয়। এসময় মিস ভন ডার লেন মজাদার গরম মাছ ভূনা মি. জনসনের পাতে তুলে দেন। তবুও আলোচনায় খুব একটা বরফ গলেনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মনে করছেন।
চলমান নীতি অনুসারে যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ইউরোপীয় দেশগুলো অবাধে মাছ শিকার করতে পারে। ইইউ বিশেষ করে ফ্রান্স এই সুবিধা আগামীতেও বলবৎ রাখতে চায়।
যুক্তরাজ্য এতে রাজী না হলে ইউরোপের বাজারে তাদের শুল্কমুক্ত মাছ রপ্তানিতে রাজী নয় ইইউভূক্ত সদস্য রাষ্ট্র। এছাড়া বৃটেনে ইইউ নাগরিকদের কর্মসংস্থান অধিকার এবং পরিবেশ বিষয়ক নীতিমালা বহাল রাখা, যাত্রী ও মালামাল পরিবহনে সীমান্ত চৌকিতে তল্লাশি ও শুল্ক আদায় এবং উভয়পক্ষের মধ্যে বিরোধ হলে ইউরোপীয় আদালতে সমাধানের কর্তৃত্ব চায় ইইউ।
ইইউর সাথে বৃটেনের ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে গত কয়েক দিনের আলোচনায় যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব ছিল। বৃটিশ ব্রেক্সিট আলোচক লর্ড ফ্রস্ট ও ইউরোপীয় প্রধান সমন্বয়ক মিশেল বার্নিয়ার লন্ডনে ও ব্রাসেলসে বহুত দেন-দরবার শেষে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কর্মকর্তাদের ‘আনলক’ অবস্থার অবসান ঘটাতে সোমবার বরিস জনসন এবং উরসুলা ভন ডার লেন প্রায় ৯০ মিনিট টেলিফোনে কথা বলেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতরাতে দু’নেতা ও তাদের প্রধান আলোচকরা মুখোমুখি হয়েছিলেন।
ইইউ সদর দপ্তরে জনসনের আগমনের সময় ইইউ পতাকা দিয়ে তৈরি মাস্ক নিয়ে ফটোগ্রাফের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন মিস ভন ডের লেইন। জার্মান প্রাক্তন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মি. জনসনকে খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে কোভিড বিধি লঙ্ঘন করার জন্য হালকা উপহাস করে বলেন, ‘দূরত্ব বজায় রাখুন’। এসময় মি. জনসন ১০ নম্বর ব্র্যান্ডযুক্ত মাস্ক পরিধান করেছিলেন। তিনি জবাব দিয়েছিলেন, ‘আপনি এখানে একটি শক্ত জাহাজ চালাচ্ছেন, উরসুলা এবং যথার্থই বলেছেন’। সংক্ষিপ্ত ফটোসেশন শেষে মিস ভন ডের লেন খাবারের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরুর সময় ফরাসি ভাষায় বলেন অ্যালোনস-ওয়াই অর্থাৎ চলুন, চলুন। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রীও জবাব দিলেন অ্যালোনস-ওয়াই (Allons-y)।
বরিস জনসন এবং উরসুলা ভন ডার লেন আলোচনার শুরুতে ক্যামেরার সামনে মাস্ক খুলে একে অপরকে স্বাগত জানান। তারপর দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা ধরে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে উভয় পক্ষ যুক্তি এবং পাল্টা যুক্তি উপস্থাপন করেন। তারা ব্রেক্সিট-পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে অচলাবস্থা ভাঙার চেষ্টা করেছেন। চুক্তি বাস্তবায়নের সময়সীমা ১৩ই ডিসেম্বর রোববার পর্যন্ত পেছাতে একমত হয়েছেন। উভয় পক্ষই আশা করছেন যে, সপ্তাহান্তে পুনরায় আলোচানার মাধ্যমে একটা যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছবেন এবং নতুন বছরটিতে বিশৃঙ্খলামুক্ত রাখতে সচেষ্ট হবেন।
গতরাতের খাবারের আগে ইউরোক্র্যাটরা বলছিলেন, তারা ‘অলৌকিক আশার প্রত্যাশায় করছেন’ এবং জার্মান মিস ভন ডের লেন সর্বোতভাবে জনসনকে তার কিছু অবস্থান পরিবর্তন করার জন্য প্রলুব্ধ করেছেন। জনসনও সমানতালে রসঘন আলোচনায় সুরাহা টানতে সচেষ্ট ছিলেন।
এদিকে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস যাওয়ার আগে জনসন এমপিদের বলেছিলেন যে, তিনি রাতের খাবারে আলোচনার ব্যাপারে পিছপা হবেন না এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন চিরতরে যুক্তরাজ্যকে আবদ্ধ রাখার মত আপত্তিজনক দাবি প্রত্যাহার করবে বলে আশা করছেন। তিনি বৃটেনের পার্লামেন্ট ‘হাউজ অব কমন্সে’ বলছিলেন, বৃটিশ জলসীমায় ইইউ’র প্রবেশাধিকার এবং ইইউ’র লাল ফিতার দৌরাত্ম্য থেকে বিচ্ছিন্ন হতে প্রতিবন্ধক কোনও চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন না। বিরোধী লেবার পার্টির এক প্রশ্নের জবাবে আরো দৃঢ়তার সঙ্গে অভয় দিয়ে বলেন, শুধু তিনি নন, কোন প্রধানমন্ত্রীই তা গ্রহণ করবেন না।
তবে ইইউ থেকে সর্বোতভাবে চূড়ান্ত বিদায়ের প্রাক্কালে মাত্র তিন সপ্তাহ সময়ে চলমান অনিশ্চয়তায় বৃটেন ও ইইউতে অনিশ্চয়তা ও অস্বস্তি বাড়ছে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল