মার্কিন সরকার সানার বিরুদ্ধে শত্রুতামূলক আচরণের ধারাবাহিকতায় পাঁচ ইয়েমেনি কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আর মাত্র তিন মাস পর ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের যুদ্ধের ছয় বছর পূর্ণ হবে।
এই যুদ্ধের কুশীলব বিভিন্ন। একদিকে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট এবং এই জোটের সদস্যরা, ক্ষমতাচ্যুত মনসুর হাদি সরকার এবং তাদের ভাড়াটে বাহিনী, সাউদার্ন ট্রানজিশনাল কাউন্সিল এবং তাদের সাথে যুক্ত মিলিশিয়া। অপরদিকে রয়েছে ইয়েমেনের সেনাবাহিনী এবং ইয়েমেনের জনপ্রিয় কমিটি-এই পক্ষগুলো প্রকাশ্যে ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িত ছিল। আবার এমন কিছু অভিনেতাও আছে যারা সরাসরি যুদ্ধে জড়িত না হলেও এই যুদ্ধে তাদের উপস্থিতি সুস্পষ্ট। এই ধরনের অভিনেতাদের অন্যতম হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ভূমিকা ছিল এই যুদ্ধ শুরু করার ব্যাপারে সৌদি সরকারকে সবুজ সংকেত দেওয়া। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় সৌদি আরবের সমালোচনা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল বলেছেন, রিয়াদ ঘোষণা করেছিল যুদ্ধ দ্রুতই শেষ হবে বেশি সময় লাগবে না। তার এই বিবৃতি থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতেই ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল।
এই যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ভূমিকা হল সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটকে অস্ত্রশস্ত্রসহ সার্বিক লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া। এক্ষেত্রে স্বয়ং মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগও স্বীকার করেছে যে তারা ইয়েমেনে সেনা মোতায়েন করেছে সৌদি সীমান্তের সুরক্ষার জন্য এবং এই জোটকে লজিস্টিক ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে সহায়তা করার জন্য।
নিউইয়র্ক টাইমস সৌদি-ইয়েমেনী সীমান্তে মার্কিন সামরিক কমান্ডোদের উপস্থিতির খবর দিয়ে জানিয়েছে, সামরিক কমান্ডোরা ইয়েমেনের হুথি বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রের ঘাঁটিগুলো শনাক্ত করে সেগুলোকে ধ্বংস করার কাজে সহায়তা করছে। এইসব ক্ষেপণাস্ত্র দিয়েই হুথিরা রিয়াদসহ সৌদি আরবের বিভিন্ন শহরে হামলা করত।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ভূমিকা হল আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সৌদি জোটকে সমর্থন দেওয়া। সৌদি আরব এবং তার মিত্ররা ইয়েমেনে মানবিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গত ছয় বছর ধরে বিশেষ করে নিরাপত্তা কাউন্সিলে সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি। বৈশ্বিক চাপ থেকে সৌদি আরবের বেঁচে থাকার মূল কারণ হল মার্কিন সরকারের ব্যাপক সমর্থন।
তারই ধারাবাহিকতায় মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে পাঁচ ইয়েমেনি পদস্থ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের লক্ষ্য হল ইয়েমেনের জাতীয় মুক্তি সরকারকে বৈধতা না দেওয়া। আসলে, নিষেধাজ্ঞার সাহায্যে ওয়াশিংটন ইয়েমেনের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে সৌদি জোটের পাশাপাশি ক্ষমতাচ্যুত মনসুর হাদি সরকারকেও সহায়তা করতে চায়। মার্কিন সরকারের আরেকটি টার্গেট হলো ইয়েমেনের বিরুদ্ধে সৌদি জোটের যুদ্ধ অব্যাহত রেখে সৌদি আরবের কাছে আরও বেশি অস্ত্র বিক্রি করা।
সুতরাং ইয়েমেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আচরণগুলো পর্যালোচনা করলে সহজেই বোঝা যাবে যে ইয়েমেনে যুদ্ধ চাপানোর পেছনে আমেরিকাই দায়ী। যেমনটি বলেছেন ইয়েমেনের সেনাবাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীর প্রাক্তন মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরফ গালিব লোকমান। সূত্র: পার্সটুডে
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত