বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

নতুন উচ্চতায় জুয়েলারি শিল্প

বিশেষ আয়োজনের প্রতিবেদন তৈরি করেছেন- শাহেদ আলী ইরশাদ, জয়শ্রী ভাদুড়ী ও রাশেদ হোসাইন

প্রাচীনকাল থেকেই স্বর্ণের গহনা মানুষের কাছে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। অনেকের কাছে এটা আভিজাত্যের, মর্যাদার অংশ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকে। একটা সময় ছিল যখন জুয়েলারি ব্যবসাকে ছোট করে দেখা হতো। এখন সেই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে মানুষ। বিগত দিনগুলোয় স্বর্ণ ব্যবসা সম্প্রসারণ ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে নানাভাবে অবদান রেখেছেন এর উদ্যোক্তারা। দেশে স্বাধীনতার ৫০ বছরে জুয়েলারি ব্যবসার উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো স্বর্ণ নীতিমালা প্রণয়ন ও স্বর্ণের গহনা আমদানির পরিবর্তে গোল্ড রিফাইনারি স্থাপনের উদ্যোগ। দেশে গোল্ড রিফাইনারি স্থাপনের মাধ্যমে স্বর্ণের গহনা আমদানির পরিবর্তে এখন রপ্তানির উদ্দেশ্যে স্বর্ণের বার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দেশের রিফাইনারিতে উৎপাদিত স্বর্ণের বারে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খোদাই থাকবে। এতে বিশ্ববাজারে দেশের সুনাম বৃদ্ধি পাবে। দীর্ঘদিনের আমদানিনির্ভরতার বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এখন থেকে বাংলাদেশের স্বর্ণালংকার রপ্তানি হবে সারা বিশ্বে। বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগের মাধ্যমে সর্বপ্রথম গোল্ড রিফাইনারি স্থাপন করতে যাচ্ছে শীর্ষ শিল্প গোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। এর মাধ্যমে দেশে জুয়েলারি শিল্পে দারুণ এক বিপ্লব ঘটবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর বলেন, দেশের বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য স্বর্ণ আমদানি হয়। দেশে স্বর্ণ শোধনাগার স্থাপনের মাধ্যমে দেশের বাজারের চাহিদা পূরণ হবে। সেই সঙ্গে এটা কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পাশাপাশি আগামী দিনগুলোয় স্বর্ণ রপ্তানিও করা যাবে। চীন, ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপে স্বর্ণপিণ্ড ও স্বর্ণালংকার রপ্তানিতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ খোদাই করা স্বর্ণের বার দেশের ব্র্যান্ডিংয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এ উদ্যোগ দেশের স্বর্ণ ও জুয়েলারি শিল্পে ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বাজুসের সাবেক সভাপতি ডা. দিলীপ কুমার রায় বলেন, সায়েম সোবহান আনভীর জুয়েলারি শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। বাংলাদেশে আর বিদেশি অলংকার আমদানি নয়, আমরা নিজেরাই জুয়েলারি রিফাইন ইন্ডাস্ট্রি প্রতিষ্ঠা করে দেশে অলংকার প্রস্তুত করব। আমাদের তৈরি গহনা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করব। পাশাপাশি আমাদের দেশে হারিয়ে যাওয়া হাজার হাজার স্বর্ণশিল্পীকে আবার কর্মমুখী করে তুলব। হাতে তৈরি স্বর্ণের গহনার প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে প্রস্তুত হয়। অথচ স্বর্ণের অলংকার রপ্তানিতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। ভারত বিদেশে স্বর্ণালংকার রপ্তানির মাধ্যমে প্রতি বছর বেশ ভালো পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করছে। বাংলাদেশে প্রস্তুত স্বর্ণালংকার রপ্তানির বিশাল সম্ভাবনা থাকলেও এতদিন তা কাজে লাগানো যায়নি। এশিয়ার বহু দেশ প্রতি বছর বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের স্বর্ণের গহনা রপ্তানি করে। বাংলাদেশের কারিগরদের হাতে তৈরি গহনার আলাদা কদর রয়েছে বিশ্ববাজারে। ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি গহনার বিপুল চাহিদা রয়েছে। পৃথিবীর সেরা স্বর্ণালংকার শিল্পী ও কারিগররা বাংলাদেশের; যাদের হাতের কাজ বিশ্বসেরা। তেমনি একটি বিরাট সুযোগ এবং সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জোরালো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে। আমাদের স্বর্ণশিল্পী বা কারিগরদের তৈরি স্বর্ণালংকার বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে খ্যাতি অর্জনের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সময় এসেছে।

সর্বশেষ খবর