যে কোনো বয়সের মানুষের জন্য সাঁতার হতে পারে স্বাস্থ্য সুরক্ষার অন্যতম উপায়। তারুণ্য ধরে রাখার পাশাপাশি শক্তিশালী পেশি গঠন, সুন্দর চুলের (কতক্ষণ সাঁতার করলো তার উপর নির্ভর করে) নিশ্চয়তাও দেয় সাঁতার।
দীর্ঘায়ুতা : 'মরিতে চাই না আমি সুন্দর ভুবনে'- মানবমনের চিরকালের আকুতি। তারুণ্য ও যৌবনের খুঁটি বলা হয় সাঁতারকে। সাউথ ক্যারোলিনা ইউনিভার্সিটি ৪০,০০০ লোকের উপর প্রায় ৩২ বছর পরীক্ষা চালায়। পরীক্ষায় দেখা যায়, যারা প্রতিদিন সাঁতার কাটেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি প্রায় ৫০% কম যারা সাঁতার কাটে না তাদের তুলনায়।
শরীরের শক্তি বৃদ্ধিতে : শরীরের হাড্ডি ও পেশির উপর অনেক চাপ ছাড়াই সাঁতার শরীরের জন্য অনেক উপকার সাধন করে থাকে। যখন আমরা পানিতে ডুবে থাকি তখন নিজেদের হালকা অনুভব করি। যদি কোমর পর্যন্ত পানিতে ডুবানো থাকে তবে শরীরের ৫০% ওজন কম অনুভব হয়। যখন গলা পর্যন্ত পানিতে শরীর ডুবানো থাকে তখন পানি আমাদের শরীরের প্রায় ৯০% ওজন বহন করে। কি অসাধারণ, তাই না?
যখন আমরা পানিতে খানিকটা ডুবে থাকি তখন সবাত ব্যায়ম করা সম্ভব। যাদের শরীরে অতিরিক্ত মেদ জমে গেছে কিংবা আথর্্রাইটিস রোগে ভুগছেন তাদের জন্য পানিই হতে পারে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট জায়গা ব্যায়াম করার জন্য!! বিশ্ব আথর্্রাইটিস ফাউন্ডেশন এমনটিই বলে থাকে। রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস রোগে আক্রান্ত একজন মহিলা বলেছেন যে তিনি পানিতে থাকলে ব্যথা অনুভব করেন না।
গরম পানির সুইমিং পুলে সাঁতার করার ফলে অস্থিসন্ধির ব্যথা ও দৃঢ়তা কেটে যায় আর্থ্রাইটিস রোগীর। সাঁতার অস্টিওআর্থ্রাইটিসের ব্যথা প্রশমন করে।
দুশ্চিন্তা, চাপ কমানো ও মস্তিষ্ক গঠন : এই পৃথিবীতে কেহই শারীরিক বা মানসিক চাপমুক্ত নয়। সাঁতার করার সময় শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে নিউরোহরমোনসহ বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরিত হয়। এতে শরীর ও মনে সুখ অনুভব হয়। 'ইয়োগা' করলে যেমন প্রশান্তি আসে ঠিক তেমনটি হয় সাঁতারেও। পরপর পেশীয় সংকোচন- প্রসারণ ও ছন্দময় গভীর প্রশ্বাসই এই সু-স্বাস্থ্যের মূল চাবিকাঠি। নিজের শ্বাস নেওয়ার শব্দ যখন মস্তিষ্কে প্রবেশ করে তখন অত্যন্ত উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। সাঁতার করার সময় চাপযুক্ত মস্তিষ্কের মৃত কোষগুলো দূর হয়ে প্রতিস্থাপিত হয় নতুন স্নায়ুকোষ।
ওজন কমাতে : ক্যালারি পোড়ানোর মাধ্যমে শরীরের ওজন কমে যায়। আসলে কতটুকু ক্যালারি খরচ হয় তার নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। তবে সাধারণ নিয়ম বলে- প্রতি ১০ মিনিট সাঁতারে ১৫০ ক্যালারি শক্তি খরচ হয়। প্রথম ৫০ ইয়ার্ড সাঁতার কাটা, তারপর বিশ্রাম- এভাবে ৩০০ ইয়ার্ড সাঁতার কাটলে এটা খুবই সহায়ক।
অ্যাজমা রোগীদের জন্য সু-খবর : যেহেতু প্রচুর বাতাস ফুসফুসে প্রবেশ করে তাই সাঁতার হলো অ্যাজমা রোগির জন্য মহাঔষধ। যারা মুখ দিয়ে শ্বাস নেন, ইমারজেন্সি যাদের খুব বেশি আনাগোনা, তারা খুব তাড়াতাড়ি সাঁতারে অংশ নিন।
লেখক: অধ্যাপক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল
কলেজ ও হাসপাতাল, ফোন: ০১৭১১৬১৭৭৩৫