ভারসাম্য রক্ষা করা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। চলার পথের প্রতিটি পদক্ষেপেই এর প্রয়োজন অনস্বীকার্য। তবে ভারসাম্য অর্জন করাটা কঠিনও বটে। অনেকেই চিকন রশির উপর দিয়ে হাঁটতে পারেন। আবার অনেকে রাস্তায় হাঁটতে গিয়েও মাঝে মধ্যে পড়ে যান। মস্তিষ্কের নির্দেশ ঠিকভাবে পালনের জন্য শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যোগ ব্যায়ামে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য অনেক ব্যায়াম রয়েছে। এর মধ্যে বৃক্ষাসন সবচেয়ে কার্যকরী। আসন অবস্থায় শরীরকে দেখতে অনেকটা বৃক্ষের মতো দেখায় বলেই এর নাম বৃক্ষাসন।
এই আসন করার জন্য প্রথমে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়ান। এবার হাত দুটো নমস্কারের ভঙ্গিতে বুকের কাছে রাখুন কিংবা নমস্কারের ভঙ্গিমায় রেখে মাথার উপরে তুলুন যেন হাত কানের সঙ্গে লেগে থাকে। এবার ডান পা উঠিয়ে বাঁ পায়ের উরুতে রাখুন। পায়ের পাতার নিচের দিকটা উরুর সঙ্গে লেগে থাকবে। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে বিশ থেকে ত্রিশ সেকেন্ড এ অবস্থায় থাকুন। এরপর ডান পা নামিয়ে একইভাবে বাঁ পা উঠিয়ে আসনটি আবার করুন। এভাবে পা বদল করে করে আসনটি ছ'বার থেকে আটবার অভ্যাস করুন এবং প্রয়োজনমত শবাসনে বিশ্রাম নিন। এছাড়াও অধো মুখ বৃক্ষাসন নামে আরেকটি বৃক্ষাসন রয়েছে।
এই আসনের জন্য প্রথমে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এরপর উবু হয়ে দু'হাতের তালু মাটিতে স্থাপন করুন। এখন দু'হাতের উপর ধীরে ধীরে শরীরের ভারসাম্য স্থাপন করে পা দুটো মাটি থেকে শূন্যে তুলতে থাকুন এবং মাটির সাথে উল্লম্বভাবে শরীরটাকে সোজা উপরে খাড়া করে রাখুন। এ অবস্থায় শরীর বিপরীতমুখী অবস্থানে থাকবে অর্থাৎ মাথা নিচের দিকে এবং পা দুটো সোজা শূন্যে উপরের দিকে থাকবে। মাথাটাকে ঘাড় থেকে বাঁকিয়ে সামনের দিকে দেখার চেষ্টা করুন। শ্বাস-প্রশ্বাস স্বাভাবিক রেখে দশ থেকে বিশ সেকেন্ড এ অবস্থায় থাকুন। এরপর ধীরে ধীরে পা দুটো ভাঁজ করুন এবং কোমর থেকে বাঁকিয়ে সাবধানে পা দুটো মাটিতে নামিয়ে আনুন। প্রয়োজনমত শবাসনে বিশ্রাম নিন।
এ আসন অভ্যাসে দেহের ভারসাম্য ঠিক থাকে। পায়ের ধমনী, শিরা, পেশী ও স্নায়ু সতেজ ও সক্রিয় থাকে এবং পায়ের, কোমরের ও মেরুদণ্ডের শক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও উরুর সংযোগস্থলের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে সহায়তা করে। বাতরোগ হতে মুক্ত রাখে এবং পায়ের গঠন দৃঢ় ও সুন্দর হয়। শীর্ষাসনের সব উপকার এ আসনে পাওয়া যায় এবং হাতের গঠন দৃঢ়, সুন্দর ও সতেজ হয়ে ওঠে। এ আসন অবস্থায় হৃৎপিণ্ড মাথার উপরে থাকে এবং শিরা, উপশিরা, ধমনী সবই বিপরীতমুখী হয় বলে খুব সহজে হৃৎপিণ্ড মস্তিষ্কে প্রচুর রক্ত সঞ্চালিত করতে পারে। মস্তিষ্ক ও গলদেশ রক্তে প্লাবিত হয়ে যায়। ফলে মাথায় ও গলদেশে অবস্থিত সমস্ত গ্রন্থি ও স্নায়ুজাল রক্ত থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান দ্রুত সংগ্রহ করে সুস্থ ও সক্রিয় থাকতে পারে। যাদের কোনো হৃদরোগ বা রক্তচাপ বৃদ্ধিজনিত রোগ আছে, তাদের রোগ নিরাময় না হওয়া পর্যন্ত এ আসন করা ঠিক নয়। অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের এ আসন করা উচিৎ নয়। প্রাতঃক্রিয়াদি সম্পন্ন না করে, স্নান বা প্রাণায়াম করার ঠিক পরে বিশ্রাম না নিয়ে এ আসন করা কখনও উচিৎ হবে না।