আচরণগত সমস্যা রয়েছে তার। সবশেষ দেখা মিলেছে শ্রীলঙ্কা সিরিজে। শাস্তিও পেয়েছেন। বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে নিষিদ্ধ হয়েছেন তিন ওয়ানডেতে। তাই খেলতে পারেননি এশিয়া কাপের প্রথম দুই ম্যাচ। সাজঘরে বসে দেখেছেন আনকোরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রিয় দলের হার। ম্যাচগুলোতে তার উপস্থিতি যে কতটা প্রয়োজন ছিল. সবাই উপলব্ধি করেছেন তা হাড়ে হাড়ে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে দেশ সেরা ক্রিকেটার যখনই ফিরেছেন পাকিস্তান ম্যাচে, দলের চেহারাটাই বদলে গিয়েছিল পুরোপুরি। যদিও নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসে সর্বোচ্চ রান করে হেরেছিল টাইগাররা, কিন্তু পাল্টে গিয়েছিল দলের চেহারা। বাংলা লিংকের দুই বাঘের এক বাঘ সাকিব আল হাসান এবার টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম ভরসা। কাল অনুশীলন শেষে কথা বলেছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। জানিয়েছেন, দ্বিতীয় পর্বে খেলতে চান ভারত, পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। তবে টি-২০ বিশ্বকাপের আগে ওয়ানডেতে আইসিসির অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে ৩ নাম্বারে নেমে গেছেন সাকিব। প্রথমে পাকিস্তানের মোহাম্মদ হাফিজ, দ্বিতীয় স্থানে শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলি ম্যাথুস।
২০০৭ সাল থেকে টি-২০ বিশ্বকাপ খেলছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম আসরেই বাজিমাত করেছিল টাইগাররা। মোহাম্মদ আশরাফুলের দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে জায়গা করে নিয়েছিল সুপার এইটে। টি-২০ বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত এটাই টাইগারদের সেরা পারফরম্যান্স। পরের তিন আসরের প্রথম রাউন্ডের বেড়া ডিঙাতে পারেনি টাইগাররা। প্রতিটি আসরেই খেলেছেন সাকিব। এবার ঘরের মাটিতে টুর্নামেন্ট। তাই ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রত্যাশার বেলুনটা অনেক বেশি। জানেন ক্রিকেটাররাও। এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারের পর সেই প্রত্যাশায় দাগ পড়েছে। প্রথম পর্বের কঠিন বেড়া ডিঙানোয় টাইগারদের মূল বাঁধা সেই আফগানিস্তানই। কিন্তু আমলে নিচ্ছেন না বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার, 'টি-২০ বিশ্বকাপে ভালো করাই আমাদের লক্ষ্য। ভালো মানে বাছাই পর্বের তিনটি ম্যাচই আমাদের জিততে হবে। তিন ম্যাচ জেতাই ভালো ফল। এরপর কি হবে, সেটা পরে ভাবা যাবে। তবে ভালো করতে হলে নিজেদের সেরাটা খেলতে হবে।' শ্রীলঙ্কা সিরিজে চট্টগ্রাম টেস্ট ছাড়া প্রতিটি ম্যাচই হেরেছে টাইগাররা। দুটি টি-২০ হেরেছিল শেষ বলে। এছাড়া প্রথম ওয়ানডেতে জয়ের ক্ষেত্র তৈরি করেও হেরেছিল নিজেদের ভুলে। এশিয়া কাপে পুরোপুরি ব্যর্থ। একমাত্র পাকিস্তানের বিপক্ষে লড়াই করেছিল যা। এসব এখন অতীত বলেন সাকিব, 'আমি মনে করি দলের কারো বিষয়গুলো মনে নেই। আর টি-২০ ক্রিকেট সম্পূর্ণ ভিন্ন ফরম্যাটের খেলা। আগেরগুলো ছিল ওয়ানডে। টি-২০ ক্রিকেটে সবকিছুই ভিন্ন, নতুন।' আফগানিস্তানের কাছে এশিয়া কাপে হেরেছিল ৩২ রানে। দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে হলে আফগানদেরই হারাতে হবে। তারপরও এই ম্যাচ নিয়ে বাড়তি কোনো চাপ নিতে রাজি নন সাকিব, 'আফগানিস্তান সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই আমার। আমরা সেরা ক্রিকেটটা খেলতে চাই। আগে কি হয়েছে, সেটা নিয়ে ভাবছি না। টি-২০ আলাদা ফরম্যাটের খেলা। প্রতিপক্ষের চেয়ে নিজেদের নিয়েই ভাবছি বেশি।'
আসর ঘরের মাটিতে। বাড়তি কিছু সুবিধা থাকছেই। কিন্তু সেসব নিয়ে না ভেবে আপাতত দ্বিতীয় রাউন্ডকেই টার্গেট করেছেন সাবেক অধিনায়ক, 'প্রথমে আমাদের প্রথম পর্ব ডিঙাতে হবে। এরপর টার্গেট দ্বিতীয় রাউন্ড। যদিও এ বিষয়ে আমরা কোনো ধরনের আলাপ করিনি। প্রথমে তো প্রথম ম্যাচ জিততে হবে। এরপর দ্বিতীয় ম্যাচ। তারপর তৃতীয় ম্যাচ। মূলপর্বে উঠার পর সত্যিকারের টার্গেট ঠিক করব।' ঘরের মাটিতে বলে বাড়তি চাপ থাকছে টাইগারদের ওপর। কিন্তু সাকিব ব্যক্তিগতভাবে চাপ নিচ্ছেন না, 'আমি কোনো চাপ বোধ করছি না। ২০১১ সালের বিশ্বকাপেও আমরা ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ খেলেছিলাম। আমাদের সবগুলো ম্যাচ এখানেই খেলেছিলাম। তাই আমরা জানি কি ধরনের চাপ আসতে পারে।'
দলের অন্যতম সিনিয়র ক্রিকেটার। আগের চারটি টি-২০ বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। এবার খেলবেন পঞ্চম আসর। অভিজ্ঞতাটুকুকে কাজে লাগাতে চান পুরোপুরি, 'ভালো করার বিষয়ে আমরা সবাই আশাবাদী। দেশের মাটিতে খেলা, তাই সবাই ভালো করতে চান। সুযোগ বারবার আসে না। আবার কবে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ হবে, স্বাভাবিকভাবে তাই এটা আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আমিও আমার সেরা খেলাটা খেলতে চাই।' ঘরের মাঠে টুর্নামেন্ট বলে প্রত্যাশা সবার অনেক। কিন্তু সাকিব দেশের মানুষের কাছে দোয়া চেয়েছেন, 'আমার মনে হয় প্রত্যাশা না করে সমর্থন করা উচিত দেশবাসীর।'