বহু বছর পর ফুটবলের বিশ্ব আসরে খেলতে আসে অস্ট্রেলিয়া ২০০৬ সালে। প্রথমবার ১৯৭৪ সালে অখ্যাত অস্ট্রেলিয়া খেলেছিল বিশ্বকাপ। অনুপস্থিতির সময়টা দীর্ঘ হলেও ফিরে এসে সকারুখ্যাত অস্ট্রেলিয়ানরা প্রমাণ দিল, তারা মোটেও ফুটবল ভুলে যায়নি। ব্রাজিল, ক্রোয়েশিয়া এবং জাপানের বিপক্ষে দুর্দান্ত সব ম্যাচ উপহার দিয়ে জার্মানি বিশ্বকাপে 'এফ' গ্রুপ থেকে ব্রাজিলিয়ানদের সঙ্গী হয় নকআউট পর্বে। সেবারের চ্যাম্পিয়ন ইতালিয়ানরা সকারুদের গতি দ্বিতীয় রাউন্ডে থামিয়ে দিলেও অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলে নিজেদেরকে 'গোল্ডেন জেনারেশন' হিসেবে পরিচিত করান টিম কাহিল, মাক স্কোয়ারজার, লুকাস নিল ও মার্ক ভিদুকারা।
দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে খেলতে হয়েছিল জার্মানি, ঘানা এবং সার্বিয়ার সঙ্গে। সার্বিয়ার বিপক্ষে জয় এবং ঘানার সঙ্গে ড্র করেও নকআউট পর্ব নিশ্চিত করতে পারেনি গোল ব্যবধানের মারপ্যাঁচে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সরব উপস্থিতিকে স্বীকৃতি দিয়েছিল সমালোচকরা। সেই অস্ট্রেলিয়া টানা তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চে। সকারুদের 'গোল্ডেন জেনারেশনে'র অনেকেই আর দলে নেই। এরই মধ্যে দলকে বিদায় জানিয়েছেন দীর্ঘদিন অধিনায়কের দায়িত্ব বহনকারী লুকাস নিল। সাবেক তারকা ফুটবলার হ্যারি কেওয়েলও এরই মধ্যে জাতীয় দল থেকে অবসর নিয়েছেন। টিকে আছেন কেবল টিম কাহিল, মিল জেদিনাক, মার্ক মিলিগান এবং লুক উইকশায়ার। নতুন অনেক তারকাও তৈরি হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়। তবে 'গোল্ডেন জেনারেশনে'র জন্য সম্ভবত এবারের বিশ্বকাপটা বড় নিষ্ঠুর হতে যাচ্ছে।
ব্রাজিল বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়াকে 'বি' গ্রুপে খেলতে হবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন স্পেন এবং রানার্সআপ নেদারল্যান্ডের সঙ্গে। এই গ্রুপে আরও আছে ল্যাটিন ফুটবলের অন্যতম শক্তি চিলি। বি গ্রুপে বড় রকমের দুর্ঘটনা ঘটলেই কেবল স্পেন ও নেদারল্যান্ডকে টপকে নকআউপ পর্ব খেলতে পারে চিলি। অস্ট্রেলিয়াকে নকআউট পর্ব খেলতে হলে কেবল দুর্ঘটনাই নয়, অলৌকিক কিছু করে দেখাতে হবে। তবে অলৌকিক কিছুর জন্যই দলটাকে প্রস্তুত করছেন অস্ট্রেলিয়ান কোচ অ্যাঞ্জি পস্তেকগলু। অ্যাঞ্জির পরিবার জার্মানি থেকে মেলবোর্নে মাইগ্রেশন করে ১৯৭০ সালে। তখন তার বয়স ছিল পাঁচ বছর। জার্মানিতে অবস্থানের সময়কার উল্লেখযোগ্য কোনো স্মৃতি নেই তার। মনেপ্রাণেই একজন অস্ট্রেলিয়ান তিনি। অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে ডিফেন্ডার হিসেবে ৪টা ম্যাচ খেলেছেন ১৯৮৬ সালে। ২০১৩ সাল থেকে জাতীয় দলের দায়িত্বে আছেন তিনি। বিশ্বকাপের ড্র অনুষ্ঠানের পরই অস্ট্রেলিয়ান কোচ বিশ্বকাপে তার লক্ষ্য নিয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছিলেন। গ্রুপে স্পেন ও জার্মানির উপস্থিতি মেনে নিয়েও তিনি বলেছিলেন, 'আমার লক্ষ্যটা ছোট কিছু নয়।' লক্ষ্যটা বড় কিছু হলে কত বড় হতে পারে! বলা মুশকিল। তবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য এবারে গ্রুপ পর্ব পাড়ি দেওয়াটাই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ নেওয়ার জন্যই দলকে প্রস্তুত করছেন কোচ অ্যাঞ্জি। তবে অস্ট্রেলিয়ানরা এবার দলের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করতে পারে না। যে গ্রুপে স্পেন ও নেদারল্যান্ডের মতো দল আছে, সেখানে সত্যিই আশা করার কিছু নেই। অস্ট্রেলিয়ানরা মেনেই নিয়েছে, ব্রাজিল বিশ্বকাপ তাদের 'গোল্ডেন জেনারেশনে'র জন্য বিদায় মঞ্চই হতে যাচ্ছে।
এক নজরে অস্ট্রেলিয়া
ডাক নাম : সকারু
কোচ : অ্যাঞ্জি পস্তেকগলু
অধিনায়ক : মিল জেদিনাক
ফিফা র্যাঙ্কিং : ৫৯
প্রধান তারকা : টিম কাহিল, মিল জেদিনাক ও লুক উইশায়ার
ফরমেশন : ৪-৪-২
গ্রুপ বি : অস্ট্রেলিয়া, স্পেন, নেদারল্যান্ড ও চিলি
ম্যাচ ডে : ১৩ জুন (চিলি), ১৮ জুন (নেদারল্যান্ড), ২৩ জুন (স্পেন)