অবশেষে জল্পনা-কল্পনার অবসান হয়েছে। মুশফিকুর রহিমদের হেড কোচ হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন শ্রীলঙ্কার সাবেক ক্রিকেটার চন্ডিকা হাতুরাসিংহে। গতকাল বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আনুষ্ঠানিকভাবে হেড কোচ হিসেবে হাতুরাসিংহের নাম ঘোষণা করেছেন। তার মেয়াদ ১ জুলাই ২০১৪ থেকে ৩১ মে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। এই প্রথম কোনো টেস্ট দলের হেড কোচ হলেন হাতুরাসিংহে। এর আগে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ এবং ২০১১ বিশ্বকাপের কানাডা ক্রিকেট দলের কোচিং উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। কাল তার ট্রেনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে আরেক শ্রীলঙ্কান মাহিরু ভিলাভারায়নকে। চুক্তি করার জন্য ১০ জুন ঢাকায় আসবেন হাতুরাসিংহে। ভিলাভারায়ন আসবেন ৫ জুন। জাতীয় দলের ক্যাম্প শুরু হবে ২৪ মে। ক্যাম্প পরিচালনা করবেন স্থানীয় কোচ।
২৮ এপ্রিল হঠাৎ করেই মুশফিকুর রহিমদের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেন জার্গেনসেন। তার সরে দাঁড়ানোর থেকেই গত দুই সপ্তাহ ধরে নামটি ভেসে বেড়াচ্ছিল ক্রিকেট পাড়ায়। শ্রীলঙ্কার পক্ষে ২৬টি টেস্ট ও ৩৫টি ওয়ানডে খেলা হাতুরাসিংহে এতদিন সহকারী কোচ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার শক্তিশালী প্রাদেশিক দল নিউ সাউথ ওয়েলসের। কাল সেখান থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। তার পদত্যাগের বিষয়টি সিডনির নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। হাতুরাসিংহে পদত্যাগ করার পরও উচ্ছ্বসিত নিউ সাউথ ওয়েলসের সিইও অ্যান্ড্রু জোনস, 'চন্ডিকার মানের একজন কোচ হারিয়ে আমরা দুঃখিত। তবে এটাও ঠিক, এটা তার জন্য অনেক বড় একটা সুযোগ। তার দক্ষতা, যোগ্যতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এটা তার জন্য অনেক বড় একটি স্বীকৃতি। নিউ সাউথ ওয়েলস ও সিডনি থান্ডারের হয়ে অসাধারণ কাজ করেছেন তিনি।' ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে হাতুরাসিংহে নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দেন। পদত্যাগ করার আগে তিনি সিডনি থান্ডারের কোচ ছিলেন। তার কোচিংয়েই ২০০৮ সালের পর নিউ সাউথ ওয়েলস আবারও শেফিল্ড শিল্ডে চ্যাম্পিয়ন হয়। এছাড়া রাইওবি কাপের ফাইনালে উঠলেও হেরে যায় কুইন্সল্যান্ডের কাছে। হাতুরাসিংহের নিয়োগ প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি বলেন, 'আমরা এমন একজন কোচই খুঁজছিলাম। হাতুরাসিংহের কাছে আমাদের চাওয়া ক্রিকেটের গ্রাফটা যাতে উপরের দিকে উঠে। সামনেই বিশ্বকাপ। সেখানকার কন্ডিশন সম্পর্কে তার স্পষ্ট ধারণা রয়েছে। যেটা দলের কাজে লাগবে বলে মনে করি।' শ্রীলঙ্কার সাবেক অধিনায়ক কুমার সাঙ্গাকারাও তার সামর্থ্য নিয়ে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন, 'টেকনিক্যাল বিচারে হাতুরাসিংহে বিদেশি কোচের চেয়ে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই। আমি তার সঙ্গে কাজ করে দেখেছি, বিদেশিরা যে ধারায় কোচিং করেন, সেটাই অনুসরণ করেন হাতুরাসিংহে।'
২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর হাতুরাসিংহেই প্রথম শ্রীলঙ্কান হিসেবে টাইগারদের হেড কোচ হলেন। এর আগে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি কোচ ছিলেন ক্রিকেটারদের। ভারতের মহিন্দার অমরনাথ ছিলেন ১৯৯৪ সালে। পাকিস্তান থেকে প্রথম আসেন মোহাম্মদ ফারুক আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে। মুদাসসর নজরও আশির দশকের শেষ দিকে কোচিং করান ক্রিকেটারদের। তবে টেস্ট দলের কোচ ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক ফাস্ট বোলার মহসিন কামাল। তার সহযোগী ছিলেন আলী জিয়া। জাতীয় দলের পক্ষে মেয়াদ শেষ করেছেন মাত্র দুজন। ডেভ হোয়াটমোর, ২০০৩-২০০৭ সাল। আরেকজন জেমি সিডন্স, ২০০৭-২০১১ সাল। এছাড়া অন্য কোচরা মেয়াদ শেষ করার আগেই চাকরি ছেড়ে দেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপের পর গত তিন বছরে চারজন কোচ পেলেন মুশফিকরা। সিডন্সের বিদায়ের পর সাড়ে চার মাস দায়িত্বে ছিলেন রিচার্ড পাইবাস। ছয় মাস ছিলেন স্টুয়ার্ট ল। জার্গেনসেন ছিলেন ১১ মাস।
জার্গেনসেনের বিদায়ের পর বিসিবি সভাপতি পাঁচ সদস্যের একটি কোচ সন্ধান কমিটি গঠন করে দেন। তারা বিশ্বের বিভিন্ন কোচের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। অস্ট্রেলিয়ার মাইকেল বেভান, ইংল্যান্ডে অ্যালান বুচার, শ্রীলঙ্কার রুমেশ কালুভিথারানা উল্লেখযোগ্য। এদের মধ্যে থেকেই দুই বছরের বাছাই করা হয় হাতুরাসিংকে। এই লঙ্কানের প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ১৫ জুন থেকে শুরু হওয়া তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।