হকি ফেডারেশন কবে যে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল একজন হকি খেলোয়াড় হিসেবে আমিও মনে করতে পারছি না। তবে ১৯৯৭ সালের পর ফেডারেশন কোনো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের আয়োজন করেনি তা আমি নিশ্চিত। অথচ একটু চেষ্টা করলে প্রতিবছরই আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করা যায়। মান উন্নয়ন ও জনপ্রিয়তার কথা চিন্তা করে হকিতে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট করাটা জরুরি ছিল। যাক ফেডারেশনের নিজস্ব না হলেও অনেকদিন পর ঢাকায় আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট হয়ে গেল। ১৫ মার্চ থেকে মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ১৭তম এশিয়ান গেমসের বাছাই পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু টুর্নামেন্টে দর্শক ছিল না বললেই চলে। আসলে হবেই বা কীভাবে? একই সময় বাংলাদেশে চলছিল টি-২০ বিশ্বকাপের আসর। ক্রিকেটে এত বড় আয়োজন ফেলে দর্শকরা হকি মাঠে আসবে না এটাই স্বাভাবিক। অনেকে বলেন, এক্ষেত্রে ফেডারেশনের কিছুই করার ছিল না। কারণ এই শিডিউলতো তৈরি করে দিয়েছে এশিয়ান হকি ফেডারেশন।
যাক যা চলে গেছে তা নিয়ে অযথা কথা উঠিয়ে লাভ নেই। খুশি লাগছে বাংলাদেশ এশিয়ান গেমসে খেলার সুযোগ পেয়েছে। কেউ কেউ হয়তো বলতে পারেন আট দলের লড়াইয়ে ৬টি দলই গেমসে খেলার সুযোগ পেয়েছে। এখানে খুশি হওয়ার কি আছে। আসলে অন্যরা যাই বলুক না কেন বাংলাদেশ যে চ্যাম্পিয়ন হয়ে এশিয়ান গেমসের টিকিট পেয়েছে তাতে আমি খেলোয়াড়দের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাই। বিষয়টিকে এখন আমরা স্বাভাবিক ঘটনা বলেই ধরে নিচ্ছি। কিন্তু নিজ মাঠে ফাইনালে যদি ছেলেরা ওমানের কাছে হেরে যেত তখনতো সমালোচনার ঝড় উঠত। এশিয়ান গেমসে পদক যে আসবে না তা আমি অনেকটা নিশ্চিত। তারপরও যতটুকু ভালো করা যায় সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। সেপ্টেম্বরে এশিয়ান গেমস সেক্ষেত্রে হাতে সময়ও নেই। এটা ঠিক যে, বাংলাদেশের হকি কখনো বিশ্বমানের ছিল না। কিন্তু আমরা যখন খেলতাম তখন হকির জনপ্রিয়তা ছিল তুঙ্গে। সাদেক ভাই, প্রতাপ দা, ইব্রাহিম সাবের, সাবি্বর ইউসুফ পরবর্তীতে আমি, তিসা, কাঞ্চন, নাসির, রামা লুসাই, ড্যানিয়েল, জুম্মন লুসাইরা তারকার খ্যাতি পেয়ে ছিলাম। বিশেষ করে সাদেক ভাইয়েরা ছিলেন আমাদের আদর্শ। হকিতে এখন তারকা খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছে না। তারপরও বেশ ক'জনার খেলা চোখে পড়ার মতো। সত্যি বলতে কি, হকিতে আগের তো সেই প্রাণ চাঞ্চল্য নেই। এখন নয়, গত কয়েক বছর ধরে হকিতে দ্বন্দ্বটা অতিমাত্রা বেড়ে গেছে। যার জন্য হকির চাকাকে সেভাবে সচল রাখা যাচ্ছে না। হকিতে দ্বন্দ্ব নতুন নয়, কিন্তু কখনো কোনো দল লিগ বয়কট করেনি। এবারই দেখা গেল বর্তমান নির্বাচিত কমিটির বিরোধিতা করে মোহামেডানের মতো ঐতিহ্যবাহী দল ছাড়াও মেরিনার্স, ওয়ারী ও বাংলাদেশ স্পোর্টিং প্রিমিয়ার লিগে অংশ নেয়নি। প্রথম বিভাগেও ভিক্টোরিয়া ও উত্তরা ক্লাব মাঠে নামবে না। জানি না বিরোধিতার সঙ্গে লিগ বর্জনের কি সম্পর্ক। যারা আন্দোলনে ছিলেন আছেন তারাও নিশ্চয় হকির মঙ্গল চান। তাহলে এভাবে লিগ বর্জনের মানে কি থাকতে পারে? আর হকি ফেডারেশন এবার যে লিগ আয়োজন করেছিল তাতে নিজেরাই তৃপ্ত কিনা সেই প্রশ্নটা রাখছি। আসলে আমরা যত কথাই বলি না কেন মোহামেডান কিংবা আবাহনী ছাড়া ফুটবল, ক্রিকেট ও হকির মতো বড় খেলা চলে না। আমি শুধু খেলোয়াড়ই ছিলাম না জাতীয় দলের অধিনায়কও ছিলাম। সে কারণে হকির সংকটাপন্ন অবস্থা দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছি না। হকি ফেডারেশনের সভাপতি কিছুদিন আগেও বলেছেন, তিনি সবাইকে নিয়ে হকির চাকা সচল রাখতে চান। শুধু তাই নয়, শুনেছি যে চার দল প্রিমিয়ার লিগে খেলেনি তাদের বিরুদ্ধে যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়। তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পরামর্শও দিয়েছেন। ফেডারেশনে মুরব্বী যারা আছেন তাদেরও একমত। আসলেও শাস্তি কখনো সমাধানের পথ দেখাতে পারে না। বরং পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলতে পারে। ফেডারেশন যদি নমনীয় হয়ে থাকে তাহলে চার ক্লাবেরও সাড়া দেওয়া উচিত।
- মেজর (অব.) শাহাবুদ্দিন চাকলাদার
সাবেক অধিনায়ক, বাংলাদেশ হকি দল